আরামবাগ শহর-সহ মহকুমার ক্লাবগুলির তহবিল তৈরির ক্ষেত্রে দুর্গাপুজোই ভরসা ছিল এতদিন। পুজোকে কেন্দ্র করে চাঁদা সংগ্রহ বা পৃষ্ঠপোষকতার এমনই রমরমা ছিল যে পুজোর বাজেট সামাল দেওয়ার পরেও উদ্বৃৃত্ত তহবিল থেকে বছরভর বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ থেকে বিভিন্ন উৎসবের খরচ চলত। গত দু’বছর ধরে সাধারণ চাঁদার পাশপাশি রাস্তায় গাড়ি আটকে কিছু চাঁদা সংগ্রহ হলেও মূল পৃষ্ঠপোষকেরা উধাও। আর এ সবেরই প্রভাব পড়েছে পুজোয়। এক সময়ের আরামবাগ শহর এবং মহকুমার ক্লাবভিত্তিক জমকালো পুজোগুলির অধিকাংশই এখন জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে। দুঃস্থ হয়ে পড়েছে ক্লাবগুলিও।
শহর এবং মহকুমা জুড়ে আরামবাগে প্রায় ৮০টি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা ছিল বেশিরভাগ পুজোর মূল পৃষ্ঠপোষক। সারদা কাণ্ডের জেরে ওই সব অর্থ লগ্নি সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ। ফলে বাজেটে ঘাটতি বহু পুজো কমিটির। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের চাপে রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা আদায়েও ভাটা। গুটিকয়েক ছাড়া অধিকাংশ ক্লাব কর্মকর্তাদের দাপটও উধাও। সব মিলিয়ে পুজো কমিটিগুলি দিশাহারা। গত পাঁচ-ছ বছর ধরে আরামবাগ শহর ও মহকুমার দুর্গাপুজোগুলির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত ওই সব বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার মধ্যে। আর এই লড়াইকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি ক্লাব গড়ে তুলে পুজো করার নজিরও আছে আরামবাগ, গোঘাট, পুড়শুড়া ও খানাকুলে।
মহালয়ার আগে থেকেই শহর জুড়ে বসে যেত বড়বড় ক্লাবগুলির তোরণ। যেখানে জ্বলজ্বল করত বিভিন্ন বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বিজ্ঞাপন। তাদের ব্যানার-ফেস্টুনে সেজে উঠত বিভিন্ন মণ্ডপ। দুঃস্থদের বস্ত্র দান কিংবা নরনারায়ণ সেবার ধুম পড়ে যেত প্রায় সর্বত্র। এখন বহু পুজো কমিটিতেই সে সব ইতিহাস। মণ্ডপসজ্জা, আলোর রোশনাই, জলসা সবেতেই বাজেট কাটছাঁট করতে হয়েছে পুজো কমিটিগুলিকে।
আরামবাগ শহরেই মোট ২৬টি ক্লাব দুর্গাপুজো করে। মহকুমা জুড়ে প্রায় দেড়শো ক্লাব পুজোর জন্য অনুমতি নেয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তা বাদে অনুমতি ছাড়া আরও অন্তত শ’খানেক ক্লাব পুজোর আয়োজন করে। শহরের বড় ক্লাবগুলির মধ্যে যারা নজরকাড়া পুজো উপহার দিত বছর দুই আগে পর্যন্ত, সেই বয়েজ স্কুল সংলগ্ন মানিক সঙ্ঘের পুজো কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ ঘোষ বললেন, “বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুজোর আড়ম্বরে ঘাটতি হয়েছে এটা ঠিক। বছর দুই আগে পর্যন্ত আমাদের পুজো বাজেট ছিল যেখানে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ছিল, গত বছর ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করতেই হিমসিম অবস্থা। পুজো নিয়ে নিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন সদস্যরা।”
একই রকম অবস্থা পৌর সবজি বাজার সংলগ্ন লিঙ্ক রোডের গায়ে রামকৃষ্ণ ক্লাবের পুজোর। ক্লাবের এক কর্মকর্তা শ্রীকান্ত দাস জানালেন, অতীতের ৩ লক্ষ টাকার বাজেট কমে দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ টাকায়। একই হাল বসন্তপুর মোড়ের অমরসঙ্গী ক্লাব, বেনেপুকুরের মহারুদ্র ক্লাব, ব্লক পাড়ার বিজয় সঙ্ঘ, তিরোল রোডের ঐকতান ক্লাব, লেকপাড়ার ন্যাশনাল ক্লাব, আরামবাগ থানা সংলগ্ন আমরা সবাই ক্লাবের।
তবে এরই মধ্যে ব্যতিক্রম তালারপাড় মিলন সঙ্ঘ। এ বার তাদের বাজেট প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। আস্ত সিন্ধু সভ্যতা তুলে আনা হচ্ছে মণ্ডপে।
কোথা থেকে সংস্থান হচ্ছে টাকার?
প্রশ্নের উত্তরে পুজো কমিটির সম্পাদক প্রভাত মণ্ডল বলেন, “অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি না থাকলেও যে ভাল ভাবে পুজোর আয়োজন করা যায় সেটাই আমরা প্রমাণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের কাছে পুজোর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আবেদন করে সাফল্য পেয়েছি। গত দু’বছর আমাদের পুজো শহরে প্রথম হওয়ায় এ বার হ্যাটট্রিকের জন্য এলাকার মানুষও এগিয়ে এসেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy