বর্তমানে এই ভাড়া বাড়িতেই চলে অফিস। ছবি: সুব্রত জানা।
টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু আমতা-২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের (বিএলএলআরও) ভবন নির্মাণের কাজ এখনও অথৈ জলে। জেলা প্রশাসনের একাংশ এ জন্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছে। নতুন ভবন তৈরি না হওয়ায় ব্লক অফিস থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে, বেতাইয়ে একটি ভাড়াবাড়ির অপরিসর জায়গাতেই চলছে বিএললএলআরও অফিস। সমস্যায় পড়ছেন কর্মী এবং সাধারণ মানুষ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের গোড়ার দিকে হাওড়ার আমতা-১, আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুর ব্লকে বিএলএলআরও দফতরের নিজস্ব ভবন তৈরির পরিকল্পনা করে জেলা প্রশাসন। সেই অনুযায়ী ওই বছরের মার্চে টাকা বরাদ্দ করা হয়। আমতা-২ ব্লক পায় ৫৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকায় ইতিমধ্যেই অন্য দু’টি ব্লকে ওই ভবন তৈরি হয়ে গেলেও আমতা-২ ব্লকে নির্মাণকাজই শুরু হয়নি। অথচ, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি এবং ব্লক প্রশাসনের যৌথ ভাবে কাজটি করার কথা ছিল। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে গোলমাল হয়। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসন ওই কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। পরে সেই কাজই হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টকে (এইচআইটি) দিয়ে করানোর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেই কাজে এইচআইটি হাত দেয়নি।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, সেই সময়ে পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েক জন সদস্যের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। শেষে তা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়। থানা-পুলিশও হয়। গোলমালের জন্যই যে কাজটি শুরু করা যায়নি তা মেনে নিয়েছেন আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের অরবিন্দ হাজরা। কিন্তু তার পিছনে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা তিনি মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “গণ্ডগোল করেছিল ঠিকাদাররা। এর সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়।
হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অংশুমান অধিকারী বলেন, “কাজটি এখন বন্ধ রয়েছে। তবে তা দ্রুত শুরুর চেষ্টা চলছে। এইচআইটি-র কাজটি করার কথা।” কিন্তু এইচআইটি-র দাবি, তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক পর্যায়ের কথা হয়েছে। এখনও কোনও লিখিত নির্দেশ আসেনি। ফলে, তারা কাজটি হাতেও নেয়নি। অরবিন্দবাবু বলেন, “আমরা বিএলএলআরও-কে বলেছি, কোন সংস্থা কাজ করবে এবং কবে থেকে করবে, তা লিখিত ভাবে জানানোর জন্য।” বিএলএলআরও হারাধন মণ্ডল বলেন, “সে-কথা জানানোর দায়িত্ব আমার নয়। যা জানানোর জেলা প্রশাসনের কর্তারাই জানাবেন।”
এ দিকে নিজস্ব ভবন তৈরির টাকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও নির্মাণকাজ না হওয়ায় এখনও মাসিক প্রায় ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে অন্য বাড়িতে দফতরের কাজ চালাতে হচ্ছে ব্লক ভূমি দফতরের কর্মীদের। এতে টাকার অপচয় হচ্ছে বলেই মনে করছেন তাঁদের অনেকে। বিভিন্ন সরকারি কাজ করার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছেন ব্লকের কর্তারা। বিডিও ইন্দ্রকুমার নস্কর বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনা, নিজ ভূমি-নিজ গৃহ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রায়ই বৈঠক করতে হয়। সে সব ক্ষেত্রে সমস্যা হয় বইকী। এ ছাড়া, অন্যান্য প্রশাসনিক কাজেও ব্যাঘাত ঘটে।” একই কথা জানান হারাধনবাবুও।
সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তির অন্ত থাকে না। কোনও তথ্য জানতে বা কাগজপত্র পেতে কখনও ব্লক অফিস, কখনও বেতাইয়ে ভূমি দফতরের অফিসে ছুটতে হয় তাঁদের। সেই সব ভুক্তভোগীদের মধ্যেই এক জন ঝামটিয়ার উত্তম মান্না। তিনি বলেন, “যে ভাবে এখন ভূমি দফতরের কাজ চলছে তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy