মিল কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি ঘিরে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
দু’মাস বন্ধ থাকার পরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে জট কেটেছিল দিন সাতেক আগে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজের পরে মঙ্গলবারই পুরোদমে উত্পাদন চালু হওয়ার কথা ছিল ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া চটকলে। কিন্তু কাজ করা নিয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে না পেরে হাত গুটিয়ে বসে রইলেন শ্রমিকেরা। ফলে, এ দিন উত্পাদন বন্ধ রইল। ফের জটিলতা তৈরি হল ওই চটকলে।
প্রশাসন ও চটকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালের শিফটে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে ঢুকে দেখেন, এক নম্বর ঘরে ‘স্পিনিং’ বিভাগে প্রতি মেশিনে এক জনকে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে। ওই বিভাগে চারশো শ্রমিক কাজ করেন। বিজ্ঞপ্তি দেখে শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের দাবি, আগে মেশিনপ্রতি একাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। এর পরই কাজ বন্ধ করে সকলে বাইরে বেরিয়ে যান। শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, এ ভাবে তাঁদের ছাঁটাইয়ের চক্রান্ত করছেন মালিকপক্ষ। অশান্তির ভয়ে চটকল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। দ্বিতীয় শিফটের গেট খোলা থাকলেও শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি।
কর্তৃপক্ষের দাবি, শ্রমিকদের আশঙ্কা অমূলক। তবে, কাজের সুবিধার্থে কিছু শ্রমিককে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে সরাতে চান তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের জন্যই চটকলে অশান্তি বাড়ছে। সিইও রাজেন্দ্রকুমার সিংহ বলেন, ‘‘ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কাজের সুবিধার্থে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে শ্রমিকদের সরানো যাবে। শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের উচিত ছিল, এ ব্যাপারে শ্রমিকদের বোঝানো। তাঁরা হয়তো তা করতে পারেননি। এখানে কারও কাজ খোওয়ানোর আশঙ্কা নেই।”
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছে আইএনটিটিইউসি। ওই সংগঠনের জেলা সভাপতি বিদ্যুত্ রাউত বলেন, “বৈঠকের সিদ্ধান্ত যে আমরা শ্রমিকদের বোঝাতে পারিনি, তা ঠিকই। বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” তবে, অন্য দু’টি শ্রমিক সংগঠন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ মানেনি। ওই চটকলের আইএনটিইউসি-র কার্যকরী সভাপতি কমলাকান্ত বলেন, “ওখানে সিটুর শ্রমিকেরাই এ দিন কাজ বন্ধ করেন। শ্রমিক ঐক্যের স্বার্থে তাই বাকিরা কাজে যোগ দেননি। আমরা শ্রমিকদের বোঝাতে পারিনি, এটা ঠিক নয়।” জেলা সিটু নেতা সুনীল সরকারের অভিযোগ, “কর্তৃপক্ষই সমস্যা সৃষ্টি করে শ্রমিকদের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন।” কোণঠাসা হয়েই শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন বলে তাঁর দাবি।
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গত ৮ নভেম্বর থেকে চটকলের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় ওই দিন চটকলের ম্যানেজারদের আবাসনে ভাঙচুর এবং প্রোডাকশন ম্যানেজারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে কিছু শ্রমিকের বিরুদ্ধে। পরের দিন থেকে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে চটকল বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। প্রায় চার হাজার শ্রমিক সমস্যায় পড়েন। শেষ পর্যন্ত গত ৩০ ডিসেম্বর ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সমস্যা মেটে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামিকাল, বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের আগাম ২০০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়, ১০ মাসে ২০০ টাকা করে শ্রমিকদের বেতন থেকে ওই টাকা কেটে নেওয়া হবে।
কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হল বলে মনে করছেন অনেকে। কারখানার ‘স্পিনিং’ বিভাগের শ্রমিক বরুণ শর্মা বলেন, ‘‘চটকল ভালই চলছিল। মালিকপক্ষের খামখেয়ালিপনায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ক্ষমতার বাইরে বেশি করে কাজ করতে বাধ্য করানো হচ্ছে। ওঁরা যা খুশি সিদ্ধান্ত কায়েম করবেন, আমরা তা মেনে নেব না।’’ একই ক্ষোভ মিলের আর এক শ্রমিক শিবু রাওয়েরও। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ মেশিন মিলের বাইরে বের করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আর শ্রমিক কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’
চন্দননগরের উপ-শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত অবশ্য জানিয়েছেন, অশান্তি এড়িয়ে চটকলে উত্পাদন চালুর জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy