Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সালকিয়া উড়ালপুল

অনিশ্চয়তা রেখেই শুরু পুনর্বাসন প্রকল্প

উড়ালপুলের কাজ কবে শুরু হবে বা আদৌ হবে কি না, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কেউ। অথচ বেশ ঘটা করে সালকিয়া উড়ালপুলের জন্য অধিকৃত জমির বাসিন্দা ও দোকানদারদের পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল শনিবার। উদ্বোধন করলেন খোদ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি যেমন তাঁর বক্তৃতায় উড়ালপুলের কাজ শুরুর কোনও প্রসঙ্গই আনেননি, তেমনই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য নেতা-মন্ত্রীদেরও এ নিয়ে কিছুই বলতে শোনা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২৮
Share: Save:

উড়ালপুলের কাজ কবে শুরু হবে বা আদৌ হবে কি না, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি কেউ। অথচ বেশ ঘটা করে সালকিয়া উড়ালপুলের জন্য অধিকৃত জমির বাসিন্দা ও দোকানদারদের পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল শনিবার। উদ্বোধন করলেন খোদ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি যেমন তাঁর বক্তৃতায় উড়ালপুলের কাজ শুরুর কোনও প্রসঙ্গই আনেননি, তেমনই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য নেতা-মন্ত্রীদেরও এ নিয়ে কিছুই বলতে শোনা যায়নি।

এলাকার যানজট সমস্যা মেটাতে ১৯৯০ সালে সালকিয়া উড়ালপুল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিলেন তত্‌কালীন সিপিএম সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তী। কিন্তু পুর্নবাসন সমস্যার জেরে আটকে যায় প্রকল্পটি। প্রায় দু’দশক আটকে থাকার পরে উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষের উদ্যোগে ওই উড়ালপুলের জন্য পুনর্বাসন সমস্যা নিয়ে জট কেটে যায়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ জন্য ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে ঘোষণাও করা হয়। যদিও শুধুমাত্র পুর্নবাসন প্রকল্পের জন্য মেলে মাত্র চার কোটি টাকা। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বাসিন্দা ও দোকানদারদের পুনর্বাসন দিতে হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা বা এইচআইটি-র উদ্যোগে সালকিয়া হিন্দু স্কুলের পাশে যে ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছিল, তার চাবি দেওয়ার জন্যই শনিবার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ দিন এ রকমই ১০টি ফ্ল্যাটের চাবি বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেন পুরমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জেলা থেকে নির্বাচিত রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মেয়র রথীন চক্রবর্তী-সহ উত্তর হাওড়ার বিধায়ক অশোক ঘোষ, এইচআইটি-র চেয়ারম্যান শীতল সর্দার প্রমুখ।

এ দিনের অনুষ্ঠানে পুরমন্ত্রীর উদ্বোধনী বক্তৃতার বেশির ভাগই ছিল তৃণমূলের সাফল্য নিয়ে। টানা ১৩ মিনিটে এক বারও উড়ালপুলের কাজ কবে শুরু হবে বা এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকা কবে মিলবে, সে বিষয়ে কিছুই বলেননি তিনি। তেমনই উল্লেখ করেননি উড়ালপুলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। তবে তিনি বলেন, “হাওড়ার মানুষকে সমস্ত পরিষেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এই কারণে এ দিনের এই পুনর্বাসন প্রকল্প ও নির্মিত বাড়ি হস্তান্তরের যে শুভ সূচনা হল, তাতে এলাকার আরও উন্নতি হবে।”

শুধু পুরমন্ত্রী নন, অন্য মন্ত্রী বা মেয়রের মুখেও মূল প্রকল্প উড়ালপুল নির্মাণ নিয়ে বক্তব্য রাখতে শোনা যায়নি। আর এই ঘটনাই জেলা তৃণমূলের অন্দরে অন্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, সালকিয়ায় উড়ালপুল আর আদৌ তৈরি করা উচিত কি না, তা নিয়ে দলের মধ্যে বিভাজন ছিল আগেই। এলাকার বিধায়ক অশোকবাবুর ধ্যান-জ্ঞান সালকিয়া উড়ালপুল হলেও দলের অন্য অংশ চাইছিল না উড়ালপুলের আর প্রয়োজন রয়েছে। ওই পক্ষের বক্তব্য, জিটি রোড একমুখী করে দেওয়ায় সালকিয়া চৌরাস্তায় বর্তমানে আর যানজট হয় না। তাই এত খরচ করে উড়ালপুল করার আর বাস্তবতা নেই। এর পরিবর্তে রাস্তা চওড়া করা হোক, যানবাহনের গতি বাড়বে।

খোদ মেয়র ও তাঁর কয়েক জন মেয়র পারিষদও মনে করছেন না এই উড়ালপুলটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই দাবি নিয়ে মেয়রের নেতৃত্বে পুরসভার একটি দল পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদের এই মতামতও জানিয়ে এসেছিলেন। উড়ালপুল নিয়ে যে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন, সে কথাও অস্বীকার করেননি মেয়র। তিনি বলেন, “সালকিয়ায় আর উড়ালপুলের প্রয়োজনী রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এখন আর যানজট হয় না। রাস্তা চওড়া করলেই মনে হয় সমস্যা মিটে যাবে। সে কথাই পুরমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।”

মেয়রের কাছ থেকে এই মতামত শোনার পরেই পুরমন্ত্রী-সহ অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীরা এ দিনের অনুষ্ঠানে সালকিয়া উড়ালপুল তৈরির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে পুর্নবাসন প্রকল্পের মধ্যেই আবদ্ধ ছিলেন কি না সেটাই এখন দলে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রাস্তা চওড়া করতে গেলেও পুনর্বাসন প্রকল্পের যে প্রয়োজন আছে, তা মানছেন সকলেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE