নাটমন্দিরের পাশে সেই মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।
জনশ্রুতি, শ্রীচৈতন্য একবার এই গ্রামে এসে একটি শ্যাওড়া গাছের তলায় বিশ্রাম করেছিলেন। তার পরেই গ্রামের নাম হয়ে যায় আঁটি শ্যাওড়া। তারও প্রায় ২০০ বছর পরে ম্যালেরিয়া-কলেরার প্রকোপে যখন গ্রাম উজাড় হয়ে যায়, নদিয়ার উলা থেকে রঘুনন্দন মিত্র মুস্তাফি নামে এক ধনী এসে অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্যে দিয়ে গ্রামের ‘শ্রী’ ফিরিয়ে আনেন। গ্রামের নাম পাল্টে রাখেন শ্রীপুর। তিনি বলাগড়ের এই গ্রামে জমিদারি বিস্তার করেন এবং দোচালা কাঠের মণ্ডপ-সহ মন্দির গড়ে তোলেন। ১৭০৭ সালে ওই মণ্ডপে শুরু হয় পুজো।
ইতিহাস গবেষকদের অনেকের মতে, হুগলিতে কেবল মাত্র জাঙ্গিপাড়ার আঁটপুরে ও বলাগড়ের শ্রীপুরে এই দোচালা শৈলীর মণ্ডপ আছে। দু’দিকে ঢালযুক্ত টিনের চাল দেওয়া কাঠের মন্দিরটির নির্মাণ শৈলী কার্যত বিরল। আগে খড়ের চাল ছিল। এখন মন্দিরের প্রাচীন সৌন্দর্য কিছুটা বদলালেও তার ঐতিহ্যবাহী নকশা করা কাঠের দেওয়াল আজও একই রকম রয়ে গিয়েছে। মণ্ডপের দেওয়ালটি তখনকার বর্মা (এখন মায়ানমার) থেকে আনা সেগুন ও দেশি কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি। মনে করা হয়, এই মন্দির নির্মাণ ও কাঠের কাজের জন্য বর্মা থেকে শিল্পী আনা হয়েছিল।
ওই বংশের বর্তমান সদস্য তাপস মিত্র মুস্তাফি বলেন, “ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্যে দিয়ে আরাধনা শুরু হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী— এই তিন দিন ছাগ বলি হয়। সঙ্গে চলে হোম। সপ্তমীর দিন জ্বলা হোমের আগুন নবমীর দিন বাড়ির কর্তা কল্লোল মিত্র মুস্তাফির হাতে নেভানো হয়। তিনি সাতটি রুপোর মুদ্রা দিয়ে সঙ্কল্প করেন।”
৩১৬ বছরের পুরনো এই পুজোর প্রথা অনুযায়ী, সপ্তমী-অষ্টমীতে দেড় হাজার ও নবমীতে ২৮টি বেলপাতা দিয়ে হোম হয়। নবমীর দিন ‘ঠান্ডি’ বলে পুজোর এক অনুষ্ঠানও হয়। তারপর ঢাকের আওয়াজে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয় মিত্র মুস্তাফিদের পুজো সম্পন্ন হল। ওই বাড়ির গঙ্গার ঘাটেই প্রতিমা বিসর্জন হয়।
স্থানীয় ইতিহাস গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জমিদার রঘুনন্দন অসাম্প্রদায়িক ও সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন। একই সঙ্গে শৈব, শাক্ত, তন্ত্র এবং বৈষ্ণব সাধনা করেছেন। ইসলামি রীতিকেও মান্যতা দিয়েছেন। তার প্রমাণ মেলে দুর্গাদালানের পাশে কৃষ্ণ-রাধার মন্দিরে। যেখানে আজানের রীতির মতো বিগ্রহকে পশ্চিম দিকে মুখ করে আরাধনা করা হয়।” এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই পুজো মহা সমারোহে হয়ে চলেছে
নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy