Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Nalpur Train Derailment

ডাউন থেকে মাঝের লাইন হয়ে আবার ডাউনে! গতি কম থাকায় অল্পের জন্য রক্ষা শালিমার এক্সপ্রেসের

সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ শালিমারে ঢোকার আগে নলপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যাত্রিবাহী ডাউন সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। দু’টি কামরা এবং একটি পার্সেল ভ্যান লাইনচ্যুত হয়।

নলপুরের কাছে সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার জেরে রেললাইনের লোহার ক্লিপ খুলে গিয়েছে।

নলপুরের কাছে সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার জেরে রেললাইনের লোহার ক্লিপ খুলে গিয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৯
Share: Save:

ডাউন লাইন দিয়েই আসছিল ট্রেনটি। আচমকা মাঝের লাইনে সরে যায় ইঞ্জিন। তার পর সেখান থেকে আবার তা চলে আসে ডাউন লাইনে। কী ভাবে তা সম্ভব হল, তা নিয়ে এখনও ধন্দে রেল আধিকারিকেরা। শনিবার ভোরে শালিমারে ঢোকার আগে সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত করবে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। এখনও লাইনের উপর থেকে ট্রেনের বেলাইন কামরাগুলি সরানো যায়নি। হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেন পরিষেবাও যে কারণে ব্যাহত হয়েছে। সকাল থেকে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব লাইনের যাত্রীরা।

সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ শালিমারে ঢোকার আগে নলপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যাত্রিবাহী ট্রেনটি। দু’টি কামরা এবং একটি পার্সেল ভ্যান লাইনচ্যুত হয়। যদিও যাত্রীরা সকলেই সুরক্ষিত। কারও বড় কোনও আঘাত লাগেনি বলে জানিয়েছেন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ১০টি বাস এবং একটি লোকাল ট্রেনের বন্দোবস্তও করে রেল।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এজিএম সৌমিত্র মজুমদার জানিয়েছেন, যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই রেলের অগ্রাধিকার। তার পর লাইনচ্যুত কামরাগুলি সরিয়ে লাইন মেরামতির কাজ হবে। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। রেল সূত্রে খবর, ডাউন লাইন দিয়ে শালিমারের দিকে আসছিল ট্রেনটি। আচমকা তার শুরুর দিকের কামরাগুলি মাঝের লাইনে চলে আসে। পরে আবার তা ডাউন লাইনে চলে যায়। এর ফলে ট্রেনের ভিতরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। ডাউন লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেঁকে গিয়েছে লাইনের একাংশ। যে লোহার ক্লিপ দিয়ে লাইন সংযুক্ত রাখা হয়, তা-ও চারদিকে ছিটকে পড়েছে। লাইনের সিমেন্টের ঢালাই স্লিপারও ভেঙে পড়েছে।

রেল সূত্রে খবর, নলপুরের কাছে ট্রেনটির গতি ছিল তুলনামূলক কম। দ্রুত গতিতে ছুটে আসার সময়ে এই ঘটনা ঘটলে তার অভিঘাত আরও তীব্র হতে পারত। ধীর গতির কারণেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হবে। ট্রেনটির চালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

দুর্ঘটনার জেরে সকাল থেকে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ডাউন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লোকাল ট্রেন সঠিক সময়ে চলছে না। সকাল থেকে দীর্ঘ ক্ষণ কোনও ট্রেনই ছিল না, দাবি যাত্রীদের। ফলে স্টেশনে স্টেশনে নিত্যযাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেদিনীপুর স্টেশনে যাত্রীদের টিকিটের টাকাও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল বা তার সময় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর রেল সূত্রে।

দুর্ঘটনার জেরে বাতিল করা হয়েছে দিঘা থেকে হাওড়া এবং হাওড়া থেকে দিঘাগামী ট্রেন। এ ছাড়া, হাওড়া কিংবা শালিমার স্টেশনে আসার অনেক ট্রেনের গতিপথ সংক্ষিপ্ত হয়েছে। হাতিয়া থেকে হাওড়া, পুরী থেকে শালিমার, সম্বলপুর থেকে শালিমার, চেন্নাই থেকে শালিমার, আদ্রা থেকে হাওড়া, পুরুলিয়া থেকে হাওড়া, ভুবনেশ্বর থেকে হাওড়া আসার ট্রেনের গতিপথ সংক্ষিপ্ত হয়েছে। ঘুরপথে চলবে মুম্বই-শালিমার, মুম্বই-হাওড়া এক্সপ্রেস।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার একে মিশ্র জানিয়েছেন, রেলের সিনিয়র আধিকারিকদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এই ঘটনায় কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে কমিটি। আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে দিকেও নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE