চড়ুইভাতি চলছে গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রে। ছবি: সুব্রত জানা
বড়দিনের হাত ধরে পুরোদমে শুরু হয়ে গেল চড়ুইভাতির মরসুম। করোনা-পর্বে পরে এ বার দুই জেলারই পিকনিক স্পটগুলিতে শব্দ-দৈত্য কী চেহারা নেবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ স্পটেই ডিজে-র কানফাটানো আওয়াজ না থাকায় স্বস্তি পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। অবশ্য পুলিশ প্রশাসনের কড়াকড়ি ছিল। সুফল মিলেছে হাতেনাতে।
রবিবার আরামবাগ মহকুমার তিনটি পিকনিক স্পটের একটিতেও ডিজে বাজেনি। তার মধ্যে চাঁদুর জঙ্গলে মদ্যপানেও কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। বাকি দু’টি, অর্থাৎ গোঘাটের গড়মান্দারণ এবং খানাকুলের রামমোহনের আমবাগানে ডিজে না দেখা গেলেও মদের বোতল বিক্ষিপ্ত ভাবে দেখা গিয়েছে।
এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “তিনটি পিকনিক স্পট-সহ মহকুমার বিভিন্ন জায়াগায় চড়ুইভাতি শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে। কোথাও ডিজে বাজেনি। সর্বত্র পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের টহলদারি ছিল।’’
বছরের বিশেষ দিনগুলিতে বা বিভিন্ন উৎসবে ডিজে-র দৌরাত্ম্যে জেরবার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এ নিয়ে হুগলিতে জোরদার নাগরিক আন্দোলন চলছে। পুলিশ-প্রশাসনও কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। তবে, তাতে যে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গিয়েছে এমন নয়। গতবারও বড়দিনে বিক্ষিপ্ত ভাবে ডিজে বেজেছিল। গড়মান্দারণ এবং রামমোহনের আমবাগানে ডিজে নিয়ে পিকনিকে আসা দলকে ঢুকতে দেওয়া না হলেও চাঁদুর জঙ্গলে ৬টি ডিজে ঢুকেছিল বলে বন দফতরের অভিযোগ ছিল। পরে তা বন্ধ করা হয়। এ বার অবশ্য তেমন ঝক্কি পোহাতে হয়নি।
পরিবেশ বাঁচাতে চাঁদুর জঙ্গলে চড়ুইভাতি নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেয় বন দফতর। ‘অপারেশন প্রচেষ্টা’ নাম দিয়ে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছিল পিকনিকের দলের জন্য। বন দফতরের চাঁদুর রেঞ্জ অফিসার আসরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘চড়ুইভাতির ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি আরও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। পশুপাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিজে বা তারস্বরে মাইক বাজানো যাবে না। থালা-গ্লাস ইত্যাদি কোনও প্লাস্টিকের সরঞ্জাম আনা যাবে না। নিজেদের বর্জ্য ব্যাগ এনে তুলে নিয়ে যেতে হবে। মদ্যপানও নিষিদ্ধ।”
পোলবা-দাদপুর ব্লকের মহানাদের চন্দ্রদিঘি পার্কেও ডিজের দাপট ছিল না। দিঘির পাশেই থাকেন পল্টন হেমব্রম। তাঁর কখায়, ‘‘গত বছরেও এই দিন পিকনিক দলের ডিজের তাণ্ডবে আমাদের টেকা দায় হয়েছিল। এ বার কড়া পুলিশি নিরাপত্তা থাকার ডিজে বাজেনি। ছোট বক্স বাজলেও তা অসহনীয় ছিল না। এ ভাবেই যদি উৎসব ডিজেমুক্ত হয়, তা হলে খুব ভাল হবে।’’
ব্যান্ডেল চার্চ লাগোয়া গঙ্গাপাড়ে বনভোজন চলে। এখানেও ডিজে বক্সের উৎপাত ছিল না। মোবাইলে গান বাজিয়ে আনন্দ করেন মানুষ। বিভিন্ন বিনোদন পার্কেও ছিল একই ছবি।
তবে, এ দিন সন্ধ্যায় চন্দননগরে পরিবেশ মেলার সামনের রাস্তা দিয়েই একটি ম্যাটাডরে তারস্বরে গান বাজাতে বাজাতে একদল লোককে যেতে দেখা গিয়েছে। হুগলি জেলার বাজি ও ডিজেবিরোধী মঞ্চের তরফে ওই ডিজের দৌরাত্ম্য নিয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটে অভিযোগ জানানো হয়।
গড়চুমুক, গাদিয়াড়া, কালসাপা, মহিষরেখা, নাউপালা-সহ গ্রামীণ হাওড়ার পিকনিক স্পটগুলিতেও ডিজে বাজেনি। পুলিশ ডিজে নিয়ে ঢুকতে দেয়নি। প্রতিটি পিকনিক স্পটে এ জন্য পুলিশ বুথ ছিল। সেখান থেকে মাইকে নিষেধাজ্ঞা প্রচার করা হয়।
প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্র খুলেছে কয়েকদিন আগে। তবে এখানকার চিড়িয়াখানা এখনও খোলা হয়নি। তাতে এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন পর্যটকেরা। হুগলি নদী এবং দামোদর নদে নৌকাবিহারও করতে দেয়নি পুলিশ। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পিকনিক স্পটগুলিতে ডিজে বন্ধ করা হবে। তাই এ দিন সকাল থেকেই চলছিল নজরদারি।’’
ডিজে বন্ধ থাকায় খুশি পিকনিক করতে আসা মানুষজন। কালসাপা সেচবাংলোয় পিকনিকে আসা মাধুরী দে নামে এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বন্ধুরা মিলে পিকনিক করতে এসে বেশ মজা পাচ্ছি। ডিজের আওয়াজ নেই। তাই নিজেদের মধ্যে আড্ডা, গল্প করে দিনটা কাটালাম। ডিজে বাজলে হয়তো এটা সম্ভব হত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy