Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্য পরিষেবায় অসন্তোষ

সোমবার রূপনারায়ণ নদের জল চরম বিপদসীমার নীচে নেমেছে। খানাকুল ১ ব্লকের পোল গ্রামের হাটতলায় এক হাতুড়ে চিকিৎসকের চেম্বারে ভিড় উপচে পড়তে দেখা গেল।

স্বাস্থ্য শিবির খানাকুলের ভীমতলায়।

স্বাস্থ্য শিবির খানাকুলের ভীমতলায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২৭
Share
Save

ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তাতে মলম দিতে খানাকুলের দুর্গতদের জন্য ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি নিয়েছে প্রশাসন। যাতে তাঁরা বাড়িতে বসেই ত্রাণ পান। কিন্তু এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও গ্রামবাসীদের অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। কারণ, প্লাবনের জল নামা শুরু হতেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, পেট খারাপের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। শিশু থেকে প্রবীণ— আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সিরাই।

সোমবার রূপনারায়ণ নদের জল চরম বিপদসীমার নীচে নেমেছে। খানাকুল ১ ব্লকের পোল গ্রামের হাটতলায় এক হাতুড়ে চিকিৎসকের চেম্বারে ভিড় উপচে পড়তে দেখা গেল। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছেড়ে এখানে আনা নিয়ে প্রশ্নে পোল ১ পঞ্চায়েতের মনোবেড়ে গ্রাম থেকে জ্বর-সর্দিতে অসুস্থ বালিকা নিয়ে আসা ঝর্ণা মালিক বলেন, “বাধ্য হয়েই। আশাকর্মীরা এখনও গ্রামে আসেননি। কাছের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তালা মারা। এলাকায় কোনও স্বাস্থ্য শিবিরও হয়নি।” একই রকম খেদ আর এক রোগিণী, পোল গ্রামের পারুল খাঁ’র।

পোল ১ পঞ্চায়েতের প্লাবিত ১৫টি বুথের মানুষই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিলিপাড়ার অরূপ কুন্ডুর খেদ, “সরকারি ত্রাণ না পেলেও চালিয়ে নেওয়া যায়। বন্যার কথা ভেবে প্রতিটি পরিবার সপ্তাহ খানেকের মতো চাল, ডাল, মুড়ি বা চিঁড়ে নিজেদের সংগ্রহে রাখে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবাটা জরুরি। স্বাস্থ্য শিবির তো দূর, আশাকর্মীরাও আসেননি।” একই অভিযোগ খানাকুল ১ ব্লকের অরুন্ডা, তাঁতিশাল, খানাকুল ২ ব্লকের মাড়োখানা, ধান্যগোড়ি ইত্যাদি পঞ্চায়েত এলাকাতেওশোনা গেল।

ওই গ্রামে যেতে আরামবাগ থেকে বন্দরের রাস্তার কয়েদতলা মোড় থেকে শাখা রাস্তায় ঢোকা মাত্র দুর্গন্ধ নাকে এল। সদ্য জমি জেগে ওঠা দু’দিকের মাঠ থেকে পচা ধান গাছ, আবর্জনা, মরা সাপ ও মরা মাছ দেখা গেল। মাঠময় বকের ঝাঁক মাছ ধরে খাচ্ছে। গ্রামগুলিতে একই দুর্গন্ধ। ‘‘কোথাও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়নি, দেখছেন না!’’— বললেন গ্রামের এক প্রবীণ।

পোল গ্রামের তিলিপাড়াতেই পঞ্চায়েত কার্যালয়। পঞ্চায়েত চত্বরেই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির একতলা জলে ডুবে গিয়েছিল। জল অনেকটাই নেমেছে। প্রচুর ওআরএস এবং ন্যাপকিন ভিজে নষ্ট হয়েছে। সেখানে কোনও রোগীর দেখা নেই। কেন্দ্রের কমিউনিটি হেলথ অফিসার চন্দনা পাকিরা বলেন, “আশাকর্মীদের অধিকাংশের গ্রাম এখনও জলে ডোবা। পরিষেবা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয়নৌকাও নেই।”

খানাকুল ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুশান্তকুমার মজুমদার জানান, জমা জলের জন্য পোল ১ পঞ্চায়েত এলাকায় পৌঁছনো যায়নি। আজ, মঙ্গলবার সেখানে স্বাস্থ্য শিবির হবে। এই ব্লকে এ দিন পর্যন্ত ২৫টি স্বাস্থ্য শিবির হয়েছে। এছাড়া ৫১টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরিষবা চলছে।

খানাকুল ২ ব্লকের বহু পঞ্চায়েত এলাকা এ দিনও জলমগ্ন ছিল। ফলে, এখানকার ২৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও একই অবস্থা। এ দিন পর্যন্ত মোট ১০টি স্বাস্থ্য শিবির হয়েছে বলে জানান ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রক্তিম চট্টোপাধ্যায়। দুপুরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃগাঙ্কমৌলি কর ডুবে থাকা মুস্তাফাপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান।

পাশের জেলা হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের দশটি পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ এলাকা থেকেই জল নেমেছে। কিছু নিচু এলাকায় এখনও ত্রাণ শিবির চালানো হচ্ছে। আমতা ২ ব্লকেও সামগ্রিক ভাবে জল কমছে। তবে, ন’টির মধ্যে চারটি পঞ্চায়েতে এখথনও জল জমে আছে। ওই চার পঞ্চায়েতে ২২টি ত্রাণ শিবিরে প্রায় ২০০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও যাঁরা বাড়িতে জলবন্দি হয়ে আছেন, তাঁদের কাছেও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।

জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি বলেন, ‘‘কত বাড়ি নষ্ট হয়েছে, তার হিসাব চলছে। দামোদরে বাঁধের কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, সেচ দফতর খতিয়ে দেখছে। যে সব রাস্তা জেগে উঠেছে তা মেরামত শুরু হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Medical Negligence medical service Health centers Khanakul

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}