(বাঁ দিকে) পূর্ণিমা মেটে। (ডান দিকে) প্রদীপ মেটে। —নিজস্ব চিত্র।
কাটারির কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন। দু’হাতের চারটে আঙুল বাদ গিয়েছে। মুখের উপরের পাটির সবক’টি দাঁত হারিয়েছেন। কিন্তু পূর্ণিমা মেটেকে তার চেয়েও বেশি পীড়া দিয়েছিল আক্রমণকারী স্বয়ং তাঁর স্বামী! সন্দেহের বশে এবং তাঁকে চাকরি করতে দেবেন না বলে দু’বছর আগে পূর্ণিমাকে ক্ষতবিক্ষত করেছিলেন স্বামী। সেই আঘাতে খানিক মলম লাগল আসামি স্বামীর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণায়। শনিবার হুগলির চুঁচুড়া আদালত প্রদীপ মেটেকে সাজা দেওয়ার পর চোখ ফেটে জল এল পূর্ণিমার।
আদালত সূত্রে খবর, হুগলির পোলবা থানার সুগন্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা পূর্ণিনা। সুগন্ধা এলাকাতেই একটি বি ফার্মা কলেজের হস্টেলে ওয়ার্ডেনের কাজ করেন তিনি। ২০২২ সালের ৩ জুন বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান স্বামী প্রদীপ। কামদেবপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে কাটারি দিয়ে স্ত্রীকে কোপাতে শুরু করেন তিনি। পূর্ণিমা দু’হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। স্বামীর কাটারির কোপে দুই হাতের চারটে আঙুল কেটে মাটিতে পড়ে যায়। কাটারির কোপ লাগে মুখেও। উপরের পাটির সব ক’টি দাঁত পড়ে যায় পূর্ণিমার। আঘাত পান ঘাড়েও। ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আবার কাজে ফিরেছেন পূর্ণিমা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো মিলিয়ে গিয়েছে প্রায়। কিন্তু মনের ক্ষত পূরণ হয়নি। শনিবার চুঁচুড়া আদালত স্বামীকে যাবজ্জীবন সাজা দিতে পূর্ণিমা বললেন, ‘‘সাজা ঘোষণায় কিছুটা হলেও শান্তি পেলাম।’’
পূর্ণিমা যে স্বাধীন ভাবে উপার্জন করছেন, কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন, সেটা তাঁর স্বামীর পছন্দ ছিল না। অভিযোগ, স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন প্রদীপ। সেই সন্দেহের বশেই স্ত্রীকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। পূর্ণিমার মা পারুল পাল বলেন, ‘‘পুরুষদের কাজই হয়তো সন্দেহ করা! মেয়ে বাইরে কাজে যায়, সেটা জামাইয়ের পছন্দ ছিল না। বাড়িতে অশান্তি করত। অনেক বার আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। মেয়েটাকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল। কোনও ভাবে বেঁচেছে ও। একমাত্র মেয়েকে এখন একাই বড় করছে।’’
পূর্ণিমার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে চুঁচুড়া হাসপাতালে মৃতুকালীন জবানবন্দিও নিয়ে রেখেছিল পুলিশ। পারুলের কথায়, ‘‘সাতাশ দিন যমে-মানুষে টানাটানির পর মেয়ে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছে।’’ অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় তাঁরা খুশি বলে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মামলায় সরকারি আইনজীবী শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্ত প্রদীপ মেটের বিরুদ্ধে তদন্তকারী অফিসার সুবীর গোস্বামী ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর চার্জশিট জমা দেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩০৭, ৩২৬ ধারায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। মোট ১৫ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ হয়। বশুক্রবারই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন চুঁচুড়া জেলা আদালতের তৃতীয় দায়রা বিচারক অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। শনিবার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে সাজা শোনান। দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy