Advertisement
E-Paper

বাজির ‘ক্লাস্টার’ এখনও হল না, ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা

দু’বছর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বাজি বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বাজির ‘ক্লাস্টার’ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪২
Share
Save

পাথরপ্রতিমায় বাজি বিস্ফোরণে আট জনের প্রাণ গিয়েছে। তেমন ঘটনায় গত দু’বছরে এ রাজ্যে প্রাণহানি হয়েছে কম-বেশি আরও ২৮। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো রাজ্যে বাজির একটিও ‘ক্লাস্টার’ (বসতি নেই এমন জায়গায় বাজিশিল্পকে এক ছাদের তলায় আনার বন্দোবস্ত) হয়নি। এমনকি, রাজ্যে কত ‘বেআইনি’ বাজি কারখানা রয়েছে, সে তথ্যও জানা যায়নি বলে ক্ষোভ পরিবেশকর্মীদের।

তথ্যের অধিকার আইনে হুগলির তারকেশ্বরের শুভ্রকান্তি সামন্ত নামে এক পরিবেশকর্মীর প্রশ্নে সম্প্রতি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, গত তিন বছরে তাদের তরফে বাজির ‘ক্লাস্টার’-এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ওই সময়ের মধ্যে কত বেআইনি বাজি কারখানা চিহ্নিত হয়েছে, এমন তথ্য তাদের কাছে নেই। ওই সময়ের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় শুধু ছ’টি বাজি উৎপাদন ইউনিট চালানোর অনুমতি তারা দিয়েছে।

দু’বছর আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বাজি বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বাজির ‘ক্লাস্টার’ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। এত দিনেও ‘ক্লাস্টার’ কোথাও হল না কেন? রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের বক্তব্য, ‘‘জমি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। সে সব মিটেছে। ক্লাস্টার তৈরি হবে।’’ তবে রাজ্যে কত বৈধ বাজি কারখানা রয়েছে, সে তথ্য মন্ত্রীর কাছেও মেলেনি।

পরিবেশকর্মীদের একাংশের দাবি, ‘ক্লাস্টার’ হলে লোকালয় থেকে দূরে বাজি তৈরি ও মজুত হবে। ‘নিরি’ (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট) নির্ধারিত রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে সেখানে। তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম, দূষণও কমবে। নজরদারিরও সুবিধা থাকবে। সর্বক্ষণ দমকল থাকায় দুর্ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বেআইনি বাজি উৎপাদনে রাশ টানা সহজ হবে। কিন্তু কোথায় সে উদ্যোগ?

‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সদস্য তথা হুগলি জেলা সম্পাদক সন্দীপ বসুর কথায়, ‘‘বাজির ক্লাস্টার এবং গুদাম তৈরি না হলে বিস্ফোরণ এবং ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি আটকানো কঠিন। শুধু চম্পাহাটিতে ক্লাস্টারের কাজ এগোচ্ছে।’’ পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, বাজি ‘হোয়াইট ক্যাটিগরি’র (নিরি’র অনুমোদিত রাসায়নিক ব্যবহার করলে ঝুঁকিহীন)। ফলে, অনুমতির প্রয়োজন নেই। তা হলে মহেশতলার ছ’টি ইউনিটের অনুমতি তারা দিল কিসের প্রেক্ষিতে?’’ পর্ষদের সভাপতি কল্যাণ রুদ্রের বক্তব্য, বর্তমানে বাজিশিল্প ‘হোয়াইট ক্যাটিগরি’র। মহেশতলার ছ’টি ইউনিটের অনুমতি তার আগের। বাজি তৈরিতে বর্তমানে পর্ষদের ভূমিকা নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প দফতর।

তথ্যের অধিকার আইনে শুভ্রকান্তির প্রশ্নে রাজ্য পুলিশের দাবি, বাজির ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রত্যেক জেলায় সচেতনতা কর্মসূচি হয়েছে। বেআইনি বাজি উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান, ‘নাকা চেকিং’ হয়েছে। নিষিদ্ধ বাজি ব্যবহারের অভিযোগে ২০২৪ সালে রাজ্যে ৩১০টি মামলা হয়েছে। যদিও ‘বাজি ও ডিজে বক্স বিরোধী মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক গৌতম সরকারের প্রশ্ন, শুধু ‘সবুজ’ বাজি পোড়ানো যাবে এবং তার দিনক্ষণ সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করে দিলেও বছরভর বিপুল পরিমাণের বাজি উৎপাদনের প্রয়োজন কোথায়!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Environmentalist Green Crackers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}