অকুস্থল: ফ্ল্যাটের দরজায় রয়েছে দুই ভাইয়ের নাম। সোমবার, হাওড়ার কৈপুকুর এলাকায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
হাওড়ার ফোরশোর রোডে গঙ্গাতীর লাগোয়া এক বিলাসবহুল আবাসনে দেড় কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিল শৈলেশ পাণ্ডের পরিবার। তা সত্ত্বেও শিবপুরের কৈপুকুরের কাছে ঘন জনবসতিপূর্ণ অপ্রকাশ মুখার্জি লেনের ওই চারতলার ফ্ল্যাট ছাড়েনি তারা। রবিবার রাতে সেই বন্ধ ফ্ল্যাট থেকেই পাঁচ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা উদ্ধারে রহস্য ঘনিয়েছে। পুলিশ জেনেছে, ওই ফ্ল্যাটের একটি গ্যারাজে গত কয়েক বছর ধরে রাখা ছিল ডব্লিউ বি ১২সি ৭৭৫১ নম্বরের সেই গাড়িটি, যেখান থেকে শনিবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মেলে। কয়েক মাস আগেই গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হয় ফোরশোর রোডের গ্যারাজে। তবে কি অপ্রকাশ মুখার্জি লেনের ফ্ল্যাট ও গ্যারাজটি রাখা ছিল বেআইনি টাকা রাখার নিরাপদ জায়গা হিসাবে?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রবিবার রাতে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা তল্লাশি করতে এসে দেখেন, ফাঁকা ফ্ল্যাটের দরজার লক খোলা! কারণ, লকের নব ঘোরাতেই দরজা খুলে গিয়েছিল। এই বিষয়টি তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। এ বছরের অষ্টমীর সন্ধ্যায় অপ্রকাশ মুখার্জি লেনে ওই ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা দেখেছিলেন, গ্যারাজে রাখা গাড়ি থেকে দু’টি বড় ব্রিফকেস হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ফ্ল্যাটে ঢোকেন শৈলেশ পাণ্ডের মা ও ছোট ভাই। কিছু ক্ষণ পরে ফের তাঁরা একই ভাবে বেরিয়েও গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তবে কি শৈলেশের মা-ভাই অষ্টমীতে বিপুল পরিমাণ টাকা রেখে চলে যাওয়ারসময়ে ফ্ল্যাটের সদর দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিলেন? না কি, পুলিশ আসার আগে অন্য কেউ চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢুকে টাকা সরানোর চেষ্টা করেছিলেন?
কে এই শৈলেশ? কৈপুকুরের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে চারতলা আবাসনের উপরের তলার একটি ফ্ল্যাটে সপরিবার আসেন শৈলেশ। শিবপুরের ৩৫ নম্বর অপ্রকাশ মুখার্জি লেনের ওই ফ্ল্যাটে মা ও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, শৈলেশ বড় ছেলে। তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বলেই জানেন তাঁরা। আদতে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দা শৈলেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব একটা মিশতেন না বলেই জানা গিয়েছে। অধিকাংশ সময়েই কাজের সূত্রে বাইরে থাকতেন।
শৈলেশদের তিন ভাইয়ের মধ্যে নিত্যদিন পারিবারিক অশান্তি লেগে থাকত বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। অশান্তির জেরে মেজো ভাই অরবিন্দ পাণ্ডে ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। একটানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত কৈপুকুরের ওই ফ্ল্যাটে শৈলেশ ও তাঁর পরিবার ছিল। এর পরে ফ্ল্যাট ছেড়ে তাঁর পরিবার অন্যত্র চলে যায়। তবে ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যে শৈলেশ আসতেন। কোভিডের সময় থেকে যাতায়াত একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে ছিল ফ্ল্যাটটি। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ফ্ল্যাটের দরজার তালা খোলা হয়েছিল এ বছর দুর্গাপুজোর অষ্টমীতেই।
ওই ফ্ল্যাটের উল্টো দিকে থাকেন কেয়া গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘শৈলেশকে খুব বেশি দেখা যেত না। মাঝেমধ্যে যাতায়াত করতেন। ওই ফ্ল্যাটে শৈলেশের মায়ের দেখাশোনা করতেন তাঁর ভাই রোহিত। তাঁরা কী করেন বা তাঁদের কাছে যে এত টাকা রয়েছে, এ সব কোনও দিন বুঝতে পারিনি।’’ তাই ঘিঞ্জি এলাকার বহুতলের চারতলায় বিপুল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিস্মিত পাড়া।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ওই রাতে কয়েকশো এলাকাবাসী বহুতলের সামনে জড়ো হয়ে প্রশ্ন তোলেন, এত অবৈধ টাকা ফ্ল্যাটে এনে রাখা হচ্ছে, পুলিশ কেন আগে জানল না? তাঁদের আরও প্রশ্ন, এত টাকা পুলিশ কেন ব্যাঙ্কের লোককে ডাকিয়ে গোনেনি? কেনই বা টাকা গোনার মেশিন আনা হল না? বাসিন্দাদের দাবি ছিল, কত টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা প্রকাশ্যে জানাতে হবে পুলিশকে। ইডি-র মতো গোটা ঘটনার ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। পরিস্থিতি সামলাতে শিবপুর থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সকালেও সেখানে বাহিনী মোতায়েন ছিল।
শৈলেশ-কাণ্ডে ওঠা একাধিক প্রশ্নের উত্তর পেতে আপাতত লক্ষ্য সেই ব্যবসায়ীই। তদন্তকারীদেরমতে, শৈলেশকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাঁদের হেফাজতে নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy