Advertisement
E-Paper

আকাশের নীচে দিন পনেরোর প্রস্তুতি, পাশ করল পোড়া বস্তির মেয়ে

সে দিনের বিধ্বংসী আগুন নেভাতে যায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। বস্তির ঘর ছাড়িয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আশপাশের বড় বড় গাছেও। সে দিন অনেক চেষ্টা করেও নন্দিনী বাঁচাতে পারেনি খাতা-বই।

বাবাকে মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখাচ্ছে নন্দিনী যাদব। বৃহস্পতিবার।

বাবাকে মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখাচ্ছে নন্দিনী যাদব। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ০৮:০৭
Share
Save

মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক দেড় মাস আগে আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছিল সব পাঠ্যবই ও খাতা। হাওড়া ইছাপুরের ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের মাঝেরপাড়া বস্তির আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নন্দিনী যাদবের পরীক্ষায় বসাটাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে দিন পনেরো পড়ে পরীক্ষায় বসে নন্দিনী। পাশও করেছে সে। তবে ফলাফল দেখে নিজে সন্তুষ্ট নয় কিশোরী। এত বাধার পরেও মেয়ে যে পাশ করেছে, এতেই খুশি তার বাবা।

মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে বৃহস্পতিবার বস্তিতে গিয়ে দেখা গেল, আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য টিনের ঘর করে দেওয়া হয়েছে। তারই ১২ নম্বর ঘরে বাবা, মা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকে নন্দিনী। তপ্ত দুপুরে পোড়ার বস্তির টিনের ঘরে পৌঁছতেই মার্কশিট বার করে কিশোরী বলে, ‘‘সি-গ্রেড হয়েছে। নম্বর ভাল হয়নি।’’ পাশেই ছিলেন হাওড়া হাসপাতালের সাফাইকর্মী নন্দিনীর বাবা শম্ভু যাদব। তিনি বললেন, ‘‘মেয়ে পাশ করেছে, এটাই বড় কথা। ১৯ ডিসেম্বর আগুন লাগার পর থেকে খোলা আকাশের নীচে রাস্তায় ছিলাম আমরা। শীতের মধ্যে তখন খাব কী, কী ভাবে থাকব, তা-ই জানি না তো পড়াশোনা!’’

সে দিনের বিধ্বংসী আগুন নেভাতে যায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। বস্তির ঘর ছাড়িয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আশপাশের বড় বড় গাছেও। সে দিন অনেক চেষ্টা করেও নন্দিনী বাঁচাতে পারেনি খাতা-বই। আগুন নেভানোর পরে সেখানে দেখা গিয়েছিল, ছাই সরিয়ে কিছু খুঁজে চলেছে কিশোরী। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে সন্দিগ্ধ ছিল বছর সতেরোর সেই মেয়ে। নন্দিনীর স্কুল ব্যাঁটরা পাবলিক লাইব্রেরি শিক্ষা নিকেতন গার্লস হাইস্কুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শম্ভুর মন্তব্য, ‘‘স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের বলেছিলাম, পোড়া ঘরের অনিশ্চিত জীবন থেকে মেয়ে যাতে বেরোতে পারে, সেই ভাবে ওকে তৈরি করুন। ফলাফল বড় কথা নয়।’’

এ দিন বাবাকে খাবার বেড়ে দেওয়ার ফাঁকে সে জানায়, মা দুর্গা পরিচারিকার কাজে গিয়েছেন। আগামী বছর ভাইয়েরও মাধ্যমিক দেওয়ার কথা। নন্দিনী জানায়, এক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির থেকে পরীক্ষার কিছু দিন আগে নতুন বই-খাতা পায় সে। ওই ক’দিনই কিছুটা চোখ বুলিয়ে পরীক্ষায় বসে কিশোরী। তার কথায়, ‘‘তবে আমার স্কুলের শিক্ষকেরা আলাদা করে পড়িয়েছেন। স্কুলের পরেও তাঁরা আমাকে সময় দিয়েছেন।’’

অন্য দিকে, হাওড়ারই আর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিশাখা দাসের বাড়ির লোক মেয়ের ফলাফলের খোঁজ নেননি। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষের ১৫ দিনের মাথায় দুর্ঘটনা ঘটে বিশাখার। লিলুয়ার বিরাডিঙির ভাড়ার ঘরে স্টোভে রান্না হচ্ছিল। বাইরে গিয়েছিলেন বিশাখার মা। স্টোভের পাশেই বই পড়ছিল বিশাখা। স্টোভ ফেটে আগুন ধরে ঘরে। সম্পূর্ণ ঝলসে যায় কিশোরী। হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ দিন লিলুয়ার ওই ভাড়ার ঘরে গেলে বাড়িওয়ালা জানান, দাদা এবং মায়ের সঙ্গে ভাড়া থাকত বিশাখা। মেয়ের মৃত্যুর পরে ওই ঘর ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, মেদিনীপুরে স্বামীর কাছেই ছেলেকে নিয়ে ফিরে গিয়েছেন বিশাখার মা। স্কুলে খোঁজ করে জানা গেল, সেখানেও বিশাখার রেজাল্ট নিতে যাননি কেউ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Madhyamik Exam 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}