Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Theater

জীবিকার সন্ধানে রঙ্গমঞ্চ থেকে আনাজ বিক্রেতা

কামারপুকুরে যাত্রা শিল্প শতাব্দী প্রাচীন। অতীতে খান ৫০-এর বেশি অপেরা থাকলেও বর্তমানে টিকেছে ১৯টি।

ডাকবাংলো আনাজ বাজারে দুই শিল্পী।

ডাকবাংলো আনাজ বাজারে দুই শিল্পী। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী
গোঘাট শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২১ ০৬:৫২
Share: Save:

আনাজ যত না বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি যাত্রা পালার সংলাপ বলার অনুরোধ আসছে। কখনও ফরমায়েস অনুযায়ী ‘অহল্যার ঘুম ভাঙছে’ যাত্রাপালার সংলাপ বলছেন, কখনও ‘মাইনে করা মা’ কিংবা ‘সাত আনার সিঁদুর’ পালার সংলাপ। করোনাকালে একজোট হয়ে এভাবেই গোঘাটের কামারপুকুরে সব্জি ব্যবসা করে জীবনযুদ্ধ চালানোর চেষ্টা করছেন দুই যাত্রা শিল্পী।

একজন জগদ্ধাত্রী অপেরার নায়ক, গায়ক এবং যাত্রা পরিচালক বছর আটত্রিশের সুমন কুমার। অন্যজন শিল্পীতীর্থ অপেরার পরিচালক এবং পার্শ্ব চরিত্র অভিনেতা বছর বাহান্নর সঞ্জীব চৌধুরী। সুমন বলেন, “জমানো টাকা সব শেষ। লজ্জা কাটিয়ে দিনমজুরি করার কথা ভাবছিলাম। সঞ্জীবদা বললেন, অভ্যাস না থাকলে দিনমজুরি করা মুশকিল। তার চেয়ে কাঁচা আনাজ নিয়ে বাজারে বসা যেতে পারে। দিন আষ্টেক হল বসেছি। বিক্রিবাটা করে গড়ে প্রতিদিন লাভ থাকছে দেড়শো থেকে দু’শো টাকা। দু’জনের নুন-তেল-বাজারটা তাতেই হচ্ছে।”

অন্য শিল্পী প্রৌঢ় সঞ্জীব জানালেন, “গত বছর মার্চ মাসে লকডাউন থেকে যাত্রা পালার সব বায়না বাতিল হয়। মাঝে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দিন ৪০ যাত্রা পালা হলেও ফের করোনা বিধিনিষেধ লাগু হয়ে আমরা বিপদে পড়েছি। আনাজ ব্যবসা করে পেট চালানোর চেষ্টা করছি।”

সুমনকুমারের আদি বাড়ি বর্ধমানের মোহনপুর গ্রামে। সঞ্জীববাবুও একই জেলার পাষন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। কামারপুকুরে যাত্রা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁরা কামারপুকুরেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সঞ্জীব আছেন ৩০ বছর। সুমন ১৮ বছর। তাঁরা জানান, এই ব্যবসায় অভ্যাস না থাকায় আমরা নিজেরাই খদ্দের ডাকছি। যাঁরা চিনতে পারছেন, তাঁরা অনেকেই আমাদের কিছু বিখ্যাত সংলাপ শোনার আবদার করছেন। সে সব করে লোক জমলেও কেনাকাটা তেমন হচ্ছে না।”

কামারপুকুরে যাত্রা শিল্প শতাব্দী প্রাচীন। অতীতে খান ৫০-এর বেশি অপেরা থাকলেও বর্তমানে টিকেছে ১৯টি। দল পিছু বিভিন্ন বয়সের ২০ থেকে ২৫ জন কলাকুশলী। করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর মার্চ থেকে কোনও বায়না নেই। গণেশ অপেরার মালিক এবং নায়ক সব্যসাচী মৌলিক বলেন, “মাঝে এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা বিধিনিষেধ না থাকায় দলগুলোর গড়ে ৩৫-৪২টা পালা হয়েছে। তারপর ফের সেই আগের অবস্থা। অভিনেত্রীরা কয়েকজন লোকের বাড়িতে রান্নার বা পরিচারিকার কাজ করতেও বাধ্য হচ্ছেন।”

যাত্রা শিল্পীরা জানিয়েছেন চৈত্র, বৈশাখ, ও জ্যৈষ্ঠ এই তিন মাসেই যাত্রাপালার মূল সময়। এই তিন মাসের উপর ভরসা করেই রুটি-রুজি। করোনার জেরে সব বায়না বাতিল হয়েছে। ওই তিন মাসে বিভিন্ন পুজো পার্বণে গড়ে প্রায় ৮০টা পালা হয়ে যায় সব দলের। কামারপুকুরের প্রাচীন গ্রামীণ এই যাত্রা শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি কোনও উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ শিল্পীদের।

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Vendors Theater
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy