নিমদিঘিতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বাস ধরার জন্য ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
ফিরে এল এক বছর আগের ছবিটাই।
লোকাল ট্রেন বন্ধ হতেই বাদুড়ঝোলা ভিড় বাড়ল দুই জেলার বিভিন্ন রুটের বাসে। বিশেষ করে যে সব রুট কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করেছে। কারণ, অফিস বন্ধ হয়নি। দিনমজুরি বা ছোটখাটো কাজ করে যাঁরা সংসার চালান, বৃহস্পতিবার তাঁদেরও বেরোতে হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্য বৃহস্পতিবার থেকে লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তকে নিত্যযাত্রীদের একাংশ যেমন স্বাগত জানিয়েছেন, তেমনই উল্টো মতও রয়েছে। নিত্যযাত্রীদের সেই অংশ মনে করছেন, ট্রেনের ভিড় বাসে চলে আসায় করোনার সুরক্ষা-বিধি লঙ্ঘিত হবেই। এ ভাবে সংক্রমণে লাগাম পরানো যাবে না। দুর্ভোগও বাড়বে।
রাজ্যে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কিছুদিন ধরেই অবশ্য লোকাল ট্রেন কম চলছিল। বৃহস্পতিবার থেকে শুধু রেলকর্মীদের জন্য ট্রেন বরাদ্দ হয়েছে। এ দিন সেই ট্রেনে উঠেই গন্তব্যে পাড়ি দিতে দেখা গিয়েছে অনেককে। যাঁরা ট্রেন বন্ধের খবর না-জেনে স্টেশনে হাজির হয়েছিলেন, তাঁদের ফিরে যেতে হয়েছে। বিকল্প উপায়ে কর্মস্থলে পৌঁছনোর জন্য এ দিন থেকে পরিকল্পনা করা শুরু করেছেন কেউ কেউ।
পূর্ব রেলের হাওড়া-আরামবাগ শাখায় দৈনিক গড়ে ১০ হাজারের উপরে যাত্রী হয়। ট্রেন বন্ধ থাকায় এ দিন আরামবাগ থেকে কলকাতাগামী বাসগুলিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল। নিত্যযাত্রীদের সংগঠন ‘আরামবাগ রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্যতম কর্তা রূপক মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোভিড পরিস্থিতিতে এটা মেনে নিতেই হচ্ছে। পুরো লকডাউন ঘোষণা করার চেয়ে এটাই ভাল। ব্যবসার সময় কমে যাওয়ায় দৈনন্দিন মালপত্র আনার চাহিদাও থাকবে না। তবে, রেল বন্ধের জন্য বাসে ভিড় হবে। সেটাও প্রশাসন নজর রাখুক।” হুগলি দূরপাল্লা (ইন্টার রিজিয়ন) বাস-মালিক সংগঠনের সম্পাদক গৌতম ধোলে বলেন, “আমাদের রুটগুলি স্টেশন সংলগ্ন। যে সব যাত্রীরা স্টেশনে
এসে ট্রেন ধরতেন, তাঁরা যাতায়াত বন্ধ করেছেন। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের বাসগুলো কলকাতা পর্যন্ত চালানোর আবেদন করেছি প্রশাসনের কাছে।”
ট্রেন বন্ধ হওয়ায় এ দিন কাজেই বেরোতে পারেননি বৈদ্যবাটীর দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন ট্রেনে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছিলাম। ট্রেন বন্ধের কথা অফিসে জানিয়েছি। সোমবার না-গেলে কাজটা চলে যাবে। তাই গত বছরের মতো বিকল্প ব্যবস্থা করে কাজে যোগ দিতে হবে। যাতায়াতের খরচ ও সময় অনেক বেশি লাগবে।’’
বৈদ্যবাটীরই বাসিন্দা, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চার কর্মী এ দিন স্টেশন থেকে ফিরে যান। তাঁরা জানান, অফিস কর্তৃপক্ষ যাতায়াতের জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
অহল্যাবাই রোড দিয়ে হাওড়া ও কলকাতামুখী দূরপাল্লা বাসেও এ দিন ভিড় ছিল। তারকেশ্বর বাস স্ট্যান্ডেও তিলধারণের জায়গা ছিল না। শেওড়াফুলির এক বাসিন্দা নিউটাউনে কাজে যান। তিনি বলেন, ‘‘ভিড় থাকায় একটি বাস ছাড়তে হয়েছে। লোকাল ট্রেন একেবারে বন্ধ করে দেওয়াটা ভুল হল। ট্রেনে ভিড় হচ্ছিল। বাসেও তো ভিড় হচ্ছে।’’
ভিড়ের চোটে বাসে উঠতে না-পেরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের অনেক নিত্যযাত্রীই এ দিন অফিস যেতে পারেননি। ফুলচাষিদেরও বাসে করেই ফুল নিয়ে কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতে অফিসযাত্রীদের অনেকেই ‘চার্টার্ড’ বাস ‘বুক’ করতে শুরু করেছেন।
‘হাওড়া-খড়্গপুর প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষে অজয় দলুই বলেন, ‘‘আচমকা ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় অফিসযাত্রীরা বেশ সমস্যায় পড়লেন। অফিসযাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।’’
বাসে উঠেও হাওড়ার অনেক ফুলচাষি সময়মতো ফুল বাজারে পৌঁছাতে পারেননি বলেও জানান। এখন মল্লিকঘাট ফুলের বাজার বসছে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাসে করে গিয়ে তাঁরা যখন বাজারে পৌঁছন, তখন তা বন্ধ হয়ে যায়। ‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘ট্রেন বন্ধ। ফুল বাজার বসার সময় পরিবর্তন করা হোক। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত বাজার বসলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের উপকার হয়।’’ এই দাবিতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ই-মেল করে স্মারকলিপি দিয়েছেন বলেও নারায়ণবাবু জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy