— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অভিযোগ একাধিক। তার মধ্যে যেমন রয়েছে মিড-ডে মিলের নামে টাকা নয়ছয়, তেমনই আছে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে বহু অনিয়ম। এমনই সমস্ত অভিযোগ ঘিরে গোলমাল বেধেছে শিক্ষিকাদের সঙ্গে টিচার-ইন-চার্জের। যার ফলে, প্রতি দিনের এই গোলমালে কার্যত লাটে উঠেছে পঠনপাঠন। অভিভাবকদের অভিযোগ, এক-আধ দিন নয়, এই পরিস্থিতি চলছে প্রায় দু’বছর ধরে! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে রাজনীতির কেন্দ্র।
ঘটনাস্থল হাওড়ার জগাছা থানার জিআইপি কলোনির কাছে সাতাশি হাইস্কুল। শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, মিড-ডে মিলের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয় হচ্ছে। এক ক্রেট ডিম (৩০টি) গুলে খিচুড়ি খাওয়ানো হচ্ছে পড়ুয়াদের। অথচ, সাড়ে তিনশো জন পড়ুয়ার জায়গায় খাবার মিলছে অর্ধেক জনের।
জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জগাছার এই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলটিতে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাতশো। শিক্ষক আছেন ১৬ জন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিল পায় প্রায় শ’তিনেক পড়ুয়া। ওই স্কুলের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মলয়কুমার ঘোষ বলেন, ‘‘এই স্কুলে আমি পড়েছি, আমার ছেলে পড়েছে। বর্তমানে মেয়ে পড়ছে। অথচ, স্কুলটা এখন রাজনীতি করার জায়গা হয়ে উঠেছে। মুদিখানা থেকে খাদ্যসামগ্রী আনার জন্য ভ্যান ভাড়া হচ্ছে ৭৫ হাজার টাকা! কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এ সব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় নিত্য দিন তাঁদের সঙ্গে অশান্তি হচ্ছে টিচার-ইন-চার্জের।’’
একই অভিযোগ করেছেন আর এক অভিভাবক মোনালিসা পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এ বার ওই স্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে। টিচার-ইন-চার্জের কাজকর্ম নিয়ে অন্য শিক্ষিকারা প্রতিবাদ করায় রোজ গোলমাল লেগে আছে। পড়াশোনা প্রায় হয় না বললেই চলে।’’
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলে লেখাপড়ার মতো সুস্থ পরিবেশ নেই। নামেই ব্ল্যাকবোর্ড আছে। কিন্তু তাতে লেখা যায় না। পড়ানোর সময়ে মেলে না চক, ডাস্টারও। অথচ অন্য দিকে, মিড-ডে মিলের লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয় হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, যে কোনও দিন স্কুলটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
স্কুলের সহ-শিক্ষিকা মৌসুমী বেরা বলেন, ‘‘মিড-ডে মিল পড়ুয়ারা খেতে পায় না। ১০ মিনিটের মধ্যে খাবার শেষ হয়ে যায়। আলাদা খাবার ঘর না থাকায় পড়ুয়াদের খেতে হয় সাইকেলে বসে অথবা স্কুলের মাঠে বসে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, টিচার-ইন-চার্জের নির্দেশে গত বছরও ভর্তির জন্য ২৪০ টাকার জায়গায় ৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার জন্য জোর করে নেওয়া হয়েছে এক হাজার টাকা। শেষমেশ অন্য শিক্ষকেরা এ নিয়ে সরব হওয়ায় সব বন্ধ হয়।
শিক্ষকেরা অভিযোগে আরও জানাচ্ছেন, স্কুল পরিচালনার জন্য টিচার-ইন-চার্জ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বা স্টাফ কাউন্সিল, কিছুই তৈরি করেননি। সব সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে স্কুলের ১২ জন শিক্ষক মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, হাওড়ার মহকুমাশাসক, স্কুল পরিদর্শক— সকলকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিচার-ইন-চার্জ অন্তরা রায় দাস। তিনি বলেন, ‘‘কিছু শিক্ষক দুর্নীতিতে জড়িত। তাঁরা সেই দুর্নীতি থেকে রেহাই পেতে এ সব মিথ্যা অভিযোগ আনছেন। সকলের বিরুদ্ধেই তদন্ত হচ্ছে। এ সব নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’
স্কুলের সামগ্রিক দুরবস্থা সম্পর্কে অবহিত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘ওই স্কুলের সমস্যা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা, পরিচালন কমিটির সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে একটি শুনানি হয়েছে। তবে পরীক্ষার মরসুমে এখনই সরকারি নির্দেশনামা বেরোচ্ছে না। সব পরীক্ষা মিটে গেলে সরকারি নির্দেশনামা বেরোবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy