নাকাল: বাস না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা। চুঁচুড়ায়। ছবি: তাপস ঘোষ
চিত্র ১: অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে সোমবার দুপুরে চুঁচুড়া বাস স্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সপ্তগ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী বসু। দীর্ঘক্ষণ বাসের দেখা না পেয়ে বললেন, ‘‘খেলতে গিয়ে পাঁচ বছরের মেয়ের গলায় গুলি আটকে গিয়েছিল। বাস না মেলায় মেয়েকে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে আনতে কালঘাম ছুটেছিল সকালে। ফেরার সময়েও সেই একই অবস্থা। বাসের দেখা নেই। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে।’’
চিত্র ২: বেলায় চুঁচুড়া আদালতে এসেছিলেন পোলবার গোটুর বাসিন্দা মিতা চট্ট্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষার পরে পাশের যাত্রীকে বললেন, ‘‘বাড়ি ফিরব কী করে বুঝতে পারছি না। গাড়ি ভাড়া করে যেতে অনেক টাকা লাগবে।’’
চিত্র ৩: অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চুঁচুড়া হাসপাতালে এসেছিলেন ধনেখালির সপোলা টুডু। বাস না-পেয়ে বলেন, ‘‘বাস তো চোখেই পড়ছে না। এখন কী হবে?’’
বাস না-থাকায় পথে বেরিয়ে সোমবার ভোগান্তিতে পড়েন বহু যাত্রী। জেলার চারটি মহকুমার বহু রুটেই বাসের দেখা কার্যত মেলেনি। প্রায় সব বাসেরই ঠিকানা ছিল পুরশুড়া। এ দিন যেখানে সভা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাসমালিক সংগঠন সূত্রে খবর, তৃণমূলের সভায় যাওয়ার জন্য চার মহকুমার প্রায় সমস্ত রুটের বাসই ভাড়া করে নিয়েছিলেন শাসক দলের কর্মীরা। সাধারণ যাত্রী এবং জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষকে অনেক বেশি পয়সা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করতে হয়েছে।
জেলার বাসমালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, আরামবাগ-বর্ধমান রুটে ২৫টি বাস রোজ চললেও এ দিন যাত্রী পরিষেবার জন্য ছিল মাত্র দু’টি। আরামবাগ-তারকেশ্বর রুটে চলেছে মাত্র পাঁচটি বাস। মুখ্যমন্ত্রীর সভার কারণে, আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ‘নো-এন্ট্রি’ বোর্ড ঝোলায় পুলিশ। তার জেরে অন্য জেলার দূরপাল্লার গাড়িও তেমন দেখা যায়নি আরামবাগে। আরামবাগ মহকুমা কার্যত অঘোষিত বন্ধের চেহারা নিয়েছিল। অনেক সরকারি কর্মী নিজেদের মোটরবাইক নিয়ে অথবা গাড়ি ভাড়া নিয়ে অফিসে এসেছিলেন। প্রশাসনের দাবি, সরকারি কার্যালয়গুলিতে হাজিরা ছিল স্বাভাবিক।
হুগলি ছাড়াও হাওড়া, বর্ধমান এবং পূর্ব-মেদিনীপুর থেকে বাস ভাড়া করে পুরশুড়া এসেছিলেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর থেকে বহু বেসরকারি রুটের বাস তুলে নেওয়া হয় বলে খবর। ফলে ওই এলাকার বহু যাত্রীও বিপাকে পড়েন।
বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিক বলেন, ‘‘লকডাউনে পরিবহণ ব্যবসায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে তেলের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পরিবহণ শিল্প ধ্বংস হতে বসেছে। সেই কারণে, আয় বাড়াতে এখন বাস ভাড়ায় দিতেই মালিকদের আগ্রহ বেশি। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাস প্রতি গড়ে ৫,০০০ হাজার টাকা ভাড়া পেয়েছেন মালিকরা।’’
পান্ডুয়া-কালনা, চুঁচুড়া-মেমারি, পান্ডুয়া-নবদ্বীপের মতো অনেক রুট থেকে এ দিন বাস তুলে নেওয়া হয়। পান্ডুয়ার দেপাড়ার বাসিন্দা জীতেন বাউলদাস বলেন, ‘‘অটো ভাড়া করতে হয়েছে অনেক বেশি টাকা দিয়ে। কী করব, উপায় ছিল না।’’ চুঁচুড়া-মেমারি বাস ইউনিয়নের সম্পাদক অনুদ্যুতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডিজেলের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে রুটে বাস চালিয়ে টাকা আসে না। তাই বাস ভাড়ায় দিয়েছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy