ফাইল চিত্র।
‘দুয়ারে সরকার’-এর মেয়াদ বেড়েছে চার দিন। কিন্তু হাওড়ায় শিবিরের সংখ্যা কমছে। জেলায় প্রায় কোনও ব্লকেই সব পঞ্চায়েতে আর ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হচ্ছে না।
কেন?
ওই শিবির চলার কথা ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সোমবার রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, এই কর্মসূচি চলবে আরও চার দিন। সেইমতো গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দফায় শুরু হয়েছে কর্মসূচি। চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। সরকারের এই নয়া ঘোষণায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার একাধিক ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের প্রশ্ন, খরচ সামলাবে কে?
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ব্লকে বাছাই করা পঞ্চায়েতেই শুধুমাত্র ‘দুয়ারে সরকারের’ মূল শিবির করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি পঞ্চায়েতে পয়লা নভেম্বর থেকে চলে আসা অতিরিক্ত শিবিরের মাধ্যমেই কর্মসূচি চালানো হবে। অনেক ব্লকে আবার মূল শিবির হচ্ছেই না। বাছাই করা গ্রামগুলিতে ভ্রাম্যমাণ শিবিরের মাধ্যমে আবেদনপত্র বিলি করা হচ্ছে। সেগুলি জমা দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের অতিরিক্ত শিবিরে।
খরচ সামাল দিতেই এই পন্থা?
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে সঠিক ভাবেই অতিরিক্ত চার দিন ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি হচ্ছে। এই অতিরিক্ত চার দিনের কর্মসূচি হচ্ছে মূলত সবাই যাতে পরিষেবার আওতায় আসেন, সে দিকে লক্ষ্য রেখে। তাই রীতিমতো সমীক্ষার ভিত্তিতেই মূলত যে সব এলাকার মানুষের মধ্যে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি লক্ষ্য করা গিয়েছে, তাঁদের জন্যই অতিরিক্ত চার দিন ‘দুয়ারে সরকার’ হচ্ছে। এর সঙ্গে শিবিরের সংখ্যা কম হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ একই সঙ্গে ওই কর্তার দাবি, ‘‘দুয়ারে সরকার কর্মসূচির জন্য রাজ্য সরকার খরচের টাকা দেয়।’’
জেলা প্রশাসন এই দাবি করলেও ব্লক প্রশাসনগুলির মধ্যে ত্রাহি রব উঠেছে। একাধিক ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ওই টাকা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। খরচের ধাক্কা সামলাতেই জেলায় বেশিরভাগ ব্লকে কার্যত নমো নমো করে এই কর্মসূচি হচ্ছে। তাঁরা জানান, বর্তমানে ব্লকগুলির হাতে কোনও টাকা নেই। একটা সময়ে ব্লক প্রশাসনের হাতে মিড-ডে মিলের টাকা দেওয়া হত। ব্লকগুলি সেই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে কিছু সুদ পেত। সুদের টাকায় কিছু কিছু কাজ ব্লকগুলি করতে পারত। এখন মিড-ডে মিলের টাকা সরাসরি স্কুলের অ্যাকাউন্টে যায়। ফলে, সুদ বাবদ টাকা রোজগারের সুযোগ ব্লকগুলির নেই। এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজ— এই সব খাতেও টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্র। সেই সব খাতের টাকাও উপভোক্তাদের হাতে যাওয়ার আগে ব্লক প্রশাসনের হাতে কিছুদিন পড়ে থাকত। তা থেকেও সুদ মিলত। সেই সব টাকা বন্ধ হওয়ার ফলেও ব্লকগুলির ভাঁড়ার শূন্য বললেই চলে। এই অবস্থায় আরও চার দিন অতিরিক্ত ‘দুয়ারে সরকার’ চালানোর সিদ্ধান্তকে ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’ বলে মনে করছেন বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।
একটি ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূল শিবির করার টাকা নেই। তাই সংক্ষেপে কাজ সারতে হচ্ছে।’’
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে কিছুটা আর্থিক দায় পালন করতে হয় পঞ্চায়েতগুলিকেও। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলিরও আর্থিক হাল শোচনীয় হয়ে পড়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। শুধু তা-ই নয়, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স চালু হওয়ার ফলেও পঞ্চায়েতের আয় কমে গিয়েছে। এইসব কারণে পঞ্চায়েতগুলির একটা বড় অংশও বাড়তি চার দিনের ওই কর্মসূচি পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন। পঞ্চায়েতগুলিকে কার্যত ধরে বেঁধে এই কর্মসূচি পালন করাতে হচ্ছে বলে একাধিক বিডিও জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy