মৃতের নাম কৃষ্ণ পাড়ুই। ফাইল ছবি।
হাওড়ার বাঁকড়ার মিশ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ পাড়ুইকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনই করা হয়েছিল। যদিও পুলিশ প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিল, ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। শেষমেশ ঘটনার ১৫ দিন পরে কৃষ্ণের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে এক তরুণী-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, ত্রিকোণ প্রেমের জেরে কৃষ্ণকে খুন করে দেহটি রেললাইনের ধারে ফেলে পালিয়েছিল অভিযুক্তেরা। প্রমাণ লোপাটের জন্য ভেঙে দেওয়া হয়েছিল তাঁর মোবাইল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সেই ফোনের সূত্র ধরে এগোনোর চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করাও শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি রাত ১২টা নাগাদ বাঁকড়ার জোড়া মন্দিরতলায় হাওড়া-আমতা শাখার রেললাইন থেকে উদ্ধার হয়েছিল কৃষ্ণের রক্তাক্ত দেহ। প্রথম থেকেই তাঁর পরিজনদের অভিযোগ ছিল, ওই যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে তাঁর বন্ধুরা। অভিযোগে তাঁরা আরও জানিয়েছিলেন, স্থানীয় বাঁকড়া ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তাঁদের সঙ্গে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছিল পুলিশ।
কৃষ্ণের বাবা কার্তিক পাড়ুইয়ের অভিযোগ, প্রথম থেকেই ঘটনাটিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে চালানোর চেষ্টা করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের পারলৌকিক কাজের দিনেও আমাকে চার ঘণ্টা বাঁকড়া ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু খুনের এফআইআর নেওয়া হয়নি। শেষমেশ জেলাশাসক, নগরপাল এবং ডিসি (দক্ষিণ) উদ্যোগী হওয়ায় ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ নেওয়া হয়।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি ছিল কৃষ্ণের জন্মদিন। সে দিন রাত ন’টা নাগাদ তাঁর মোবাইলে এক বন্ধুর ফোন আসে। এর পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কৃষ্ণ। জানিয়েছিলেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু সেই রাতে ১১টা ১৪-র পরে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। কৃষ্ণের বাবা বলেন, ‘‘রাত সওয়া ১২টা নাগাদ দু’টি ছেলে এসে জানায়, রেললাইনে পড়ে আছে কৃষ্ণের দেহ। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখি, দেহটি শোয়ানো আছে রেললাইনের ধারে।’’
মৃত যুবকের পরিবারের প্রশ্ন, ট্রেন দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে শরীরেতার ছাপ থাকবেই। কিন্তু কৃষ্ণের শরীরে আঘাত বলতে ছিল মাথার পিছনে গভীর ক্ষত এবং পেটে গুলি করার মতো একটি ক্ষতচিহ্ন। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে পুলিশ ঘটনাটিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে চালানোর চেষ্টা করে? কৃষ্ণের পরিজনদের আরও দাবি, ওই রাতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে নয়াবাজ স্টেশনের এক রেলকর্মীও ছিলেন। যিনি কৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের হাতাহাতি হতে দেখেছিলেন। তাঁদের প্রশ্ন, ওই রেলকর্মীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করল না কেন?
কার্তিকের কথায়, ‘‘সাধারণত ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে পরের স্টেশনে সংশ্লিষ্ট ট্রেনের চালককে একটি মেমো দিতে হয়। কিন্তু আমরা জেনেছি, এ ক্ষেত্রে কোনও মেমো দেওয়া হয়নি। কারণ, ১৯ জানুয়ারি ওই সময়ে কোনও দুর্ঘটনাই ঘটেনি। তা হলে পুলিশ এত দিনেও কেন খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করল না?’’
গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে তদন্তের কাজ চলায় প্রথমে অভিযোগ নেওয়া হয়নি। আর ট্রেন দুর্ঘটনার পরে চালক কেন পরের স্টেশনে মেমো দেননি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এ-ও জানা গিয়েছে, চালক মেমো দেবেন কি না, সেটা সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর উপরে নির্ভর করে। প্রয়োজন মনে করলে তিনি মেমো না-ও দিতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy