Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Launch

মেরামতি হয় না দীর্ঘদিন, পুরনো লঞ্চে দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়েই যাত্রা

গত পাঁচ-সাত বছর লঞ্চগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি বলে সমিতি সূত্রে জানা যাচ্ছে। সমিতি সূত্রের খবর, কাঠের লঞ্চের ভাড়া বকেয়া পড়ে আছে ১৮ লক্ষ টাকা। তেলের দাম বকেয়া২৫-২৭ লক্ষ টাকা।

A Photograph of launch

অর্থাভাব এতটাই প্রকট যে দিনের পর দিন লঞ্চগুলি মেরামত করা হচ্ছে না। ফাইল ছবি।

দেবাশিস দাশ
হাওড়া শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪০
Share: Save:

করোনা অতিমারির সময়ে দীর্ঘদিন লঞ্চ না চলায় অর্থাভাবে ধুঁকছিল ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি’। বর্তমানে সেই অর্থাভাব এতটাই প্রকট যে দিনের পর দিন লঞ্চগুলি মেরামত করা হচ্ছে না। সেই অবস্থাতেই যাত্রী পারাপার চলছে। বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। অভিযোগ, লঞ্চকর্মীদের বেতন হয়নি তিন মাস ধরে। বিভিন্ন খাতে সমবায় সমিতির দেনা দেড় কোটি টাকারও বেশি। কর্মীদের অভিযোগ, দেনার দায়ে হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি ডুবতে বসলেও রাজ্য সরকার কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

ওই সমবায় সমিতির বড়, ছোট ও কাঠের লঞ্চ গঙ্গায় চলে মোট ৩২টি। হাওড়ায় ১৪টি, রামকৃষ্ণপুর ঘাটে দু’টি, বাগবাজার ঘাটে সাতটি, নাজ়িরগঞ্জ ঘাটে চারটি, বাউড়িয়া ঘাটে তিনটি এবংগাদিয়াড়ায় চলে দু’টি। এগুলির মধ্যে ১৪টি কাঠের লঞ্চ চলে ভাড়ায়। ওই সমবায় সমিতি সূত্রের খবর, বর্তমানে তাদের মোট স্থায়ী কর্মী ১৬৯ জন, দৈনিক মজুরির কর্মী ১০৮ জন এবং অবসরপ্রাপ্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মী রয়েছেন ২২ জন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ২৯৯ জন কর্মীর পরিবার চলে এই সমবায় সমিতির আয় থেকে।

২০১৫ সালের পর থেকে এই সমবায় সমিতিতে একাধিক দুর্নীতি ধরা পড়ায় এর নির্বাচিত কর্মসমিতি ভেঙে দেয় রাজ্য সরকার। ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই ব্যবস্থা এখ‌নও চলছে। কিন্তু তার পরেও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি বলেই দাবি। সূত্রের খবর, এর আগে তবুও সপ্তাহে তিন দিন প্রশাসকেরা হাওড়ার জেটিঘাটে সমিতির অফিসে এসে বসতেন। অভিযোগ, এখন সেই ব্যবস্থাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কর্মীদের বক্তব্য, অর্থাভাব দূর না হলেও মাঝেমধ্যে সমবায় দফতরের দেওয়া টাকায় কর্মীদের বেতন হয়েছে। পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়লেও গত পাঁচ-ছ’বছরে লঞ্চ পারানির (টিকিটের) মূল্য ৬ টাকা থেকে আর বাড়ানো হয়নি। কোভিডের কারণে ২০২০-’২২ সাল থেকে সমিতির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড প্রায় ভেঙে গিয়েছে। তখন থেকেই আর্থিক অবস্থা ক্রমাগত নিম্নমুখী বলে দাবি কর্মীদের।

যার ফলে ­গত পাঁচ-সাত বছর লঞ্চগুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি বলে সমিতি সূত্রে জানা যাচ্ছে। সমিতি সূত্রের খবর, কাঠের লঞ্চের ভাড়া বকেয়া পড়ে আছে ১৮ লক্ষ টাকা। তেলের দাম বকেয়া২৫-২৭ লক্ষ টাকা। কর্মীদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি বাবদ বকেয়া রয়েছে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি। ‘ক্রেডিট কোঅপারেটিভ’-এ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। দীর্ঘদিন সমিতিতে কোনও অডিট হয়নি বলেও অভিযোগ।

ওই সমবায়ের কর্মীদের একটি অংশের অভিযোগ, এরই মধ্যে বর্তমান প্রশাসক, অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটির স্পেশ্যাল অফিসার অসিত বিশ্বাস কিছু নির্বাচিত কর্মীদের নিয়ে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছেন। যে কমিটির উপরে হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যের উন্নতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের প্রশ্ন, যেখানে সমিতির প্রায় দেড় কোটি টাকা দেনা, সেখানে রাজ্য সরকারের থেকে আর্থিক সাহায্য না চেয়ে এই কমিটি তৈরি করে লাভ কী? এ বিষয়ে জানতে প্রশাসককে ফোন করা হলে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি।

রাজ্যের সমবায় দফতরের মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায় বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলব। কী করা যায়, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy