শিমলা, কুলু, মানালি বেড়াতে যাবেন। কী ভাবে বেড়াবেন? প্রশ্ন শুনে অনেকেই বলবেন, ওই তো দু’দিন শিমলা, দিন তিন-চারেক মানালি আর শিমলা থেকে মানালি যাওয়ার পথে কুলু হয়ে যাওয়া।
হিমাচল প্রদেশের শিমলা, কুলু, মানালি সাধারণত এ ভাবেই ঘুরতে অভ্যস্ত অনেকে। মানালি গিয়ে বেশির ভাগ পর্যটকই ঘোরার জন্য বেছে নেন জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলি। মানালির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে খরস্রোতা বিপাশা। এই নদী মানালিতে বিয়াস নামেই পরিচিত। হিড়িম্বা টেম্পল, ক্লাব হাউস, সোলাং ভ্যালি, রোটাং পাসই সাধারণত ঘুরে আসেন পর্যটকেরা। এ ভাবে ঘোরা মানে মানালিকে ছুঁয়ে আসা। মানালি মানে কিন্তু শুধুই চেনা ছকে বেড়ানো, শাল কেনা, বরফে হুটোপাটি খাওয়া নয়। বরং চাইলে পাহাড়ি এই জনপদকে উপভোগ করা যায় আরও নানা ভাবে। ঝটিতি সফর নয়, এই শহর, শহরবাসী, হিমাচলের সংস্কৃতিকে জানতে হলে পরিকল্পনা করা যায় অন্য ভাবেও।

ট্রেক করে যাওয়া যায় মালানা গ্রামে। ছবি: সংগৃহীত।
মানালিকে কেন্দ্র করে কী ভাবে ভ্রমণের পরিকল্পনা সাজাতে পারেন?
মালানা: অগুনতি হোটেল, বড় ব়ড় শপিং মলের দৌলতে অনেক বেশি শহুরে হয়ে উঠেছে মানালি। তবে মূল শহর থেকে মাত্র ৮৪.১ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই পৌঁছনো যায় মালানা গ্রামে। সেখানে নিখাদ প্রকৃতি ভ্রমণ পিপাসুদের অপেক্ষায়। মালানা নদী, পাইনের ঘন জঙ্গল, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝোরা— হিমালয়ের সৌন্দর্যের ডালি উপুড় করে রেখেছে এই গ্রাম। শান্ত, নির্জন এই স্থান থেকে হিমালয়কে অনেক নিবিড় ভাবে উপভোগ করা যায়।
হিমাচলের মালানার বিশেষত্ব হচ্ছে, নিজেদের নিয়মকানুনে গ্রাম চলে। গ্রামের কাউকে ছোঁয়া যায় না। গ্রামবাসীদের অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হয়। গ্রামের কোনও মন্দিরে বাইরের লোক ঢুকতে পারে না। এমনকি জমলু মন্দিরেও নয়। বাইরে থেকে মন্দিরের কারুকাজ দেখা যায়। পর্যটকরা সাধারণত দিনে দিনে জারি থেকে মালানা ঘুরে আসে। আর ট্রেকাররা টেন্ট খাটিয়ে নিজেদের ব্যবস্থায় রাত কাটায়।
রাসল পাস, ম্যাজিক ভ্যালি সাধারণত কাসোল থেকে ট্রেক করতে হয়। মালানা থেকে নানা জায়গায় ট্রেক করে যাওয়া যায়। তবে সেই ট্রেকিং ট্রেকারদের জন্য, পর্যটকদের জন্য নয়।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে যাবেন?
গাড়ি করে মানালি থেকে জারি যেতে হবে। জারি গিয়ে সেখান থেকে লোকাল ট্যাক্সি নিতে হয়। ১৬-১৭ কিলোমিটার। গাড়ি মালানা গ্রামের বাইরে রেখে হেঁটে যেতে হয়।
সিসু জলপ্রপাত:
অটল টানেল থেকে সিসু গ্রামে পর্যটক যাতায়াত বেড়েছে গত কয়েক বছরে। মার্চ-এপ্রিলের শুরুতে বরফ মেলে এই জায়গায়। বরফ গললে সিসুর সৌন্দর্য সুইৎজ়ারল্যান্ডের সমতুল্য। অনেকেই এমন তুলনা টানেন। হিমাচলের লাহুলে অবস্থিত সিসু গ্রামটি ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সুন্দর। হাইকিং বা ট্রেকিংয়ে আপত্তি না থাকলে সিসু থেকে পাহাড়ি পথে ট্রেক করে চলুন সিসু জলপ্রপাত দেখতে। হিমবাহ গলে তার সৃষ্টি। সিসু গ্রামের পাশ দিয়ে যে নদী বয়ে গিয়েছে, তার নাম চন্দ্র নদী। এই নদী সিসু থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে তান্ডিতে কেলং থেকে আসা ভাগা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে চন্দ্রভাগা নাম নিয়ে বয়ে গিয়েছে কাশ্মীরের দিকে। সিসুর অন্যতম দ্রষ্টব্য চন্দ্র আর ভাগার সংগম।
নাগ্গর: কুলু জেলার খুব পুরনো একটি জনপদ নাগ্গর। এখানেই রয়েছে প্রাচীন নাগ্গর দুর্গ। ১৪০০ বছর আগে এই স্থান ছিল কুলুর রাজাদের রাজধানী। পরবর্তীতে সেই রাজধানী কুলুতে স্থানান্তিরত করেছিলেন রাজা জগৎ সিংহ। পাহাড়ের কোলে তাঁবু খাটিয়ে দিনযাপনের অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চাইলে যেতে হবে রামসু বা জানা নামের কোনও গ্রামে। পাহাড়ি গ্রামে ভ্রমণের পাশাপাশি সিড্ডুর (বিশেষ খাবার) সঙ্গে চুমুক দিতে পারেন চায়ে। এখান থেকে পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারেন স্থানীয় গ্রামে, যেতে পারেন হাইকিংয়ে।

কুলুতে প্যারাগ্লাইডিং করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।
প্যারাগ্লাইডিং: আর যদি পাখির মতো আকাশে উড়ে পাহাড়, উপত্যতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তা হলে বরং ভ্রমণের তালিকায় জুড়ে নেন প্যারাগ্লাইডিংয়ের রোমাঞ্চও। কুলু, সোলাং বিভিন্ন জায়গা থেকে প্যারাগ্লাইডিংয়ের সুযোগ মেলে।
সাইকেল চালিয়ে হাম্পতা ভ্যালি: সাইকেল চালাতে ভালবাসেন? পাহাড়ি এলাকায় লম্বা সাইকেল যাত্রার ধকল নেওয়ার শারীরিক ক্ষমতা এবং মনোবল থাকলে যেতে পারেন হাম্পতা নামের পার্বত্য উপত্যকায়। এই পথে প্রিনি থেকে সেথানের সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেবে। কোথাও পাইন, দেবদারু, আপেল বাগান দেখতে পাবেন পথে। হাম্পতা পাস অনেকেই ট্রেক করেন। তবে সাইকেলের পথ আলাদা। উপত্যকার কিছু অংশে সাইকেল চালিয়ে ঘোরা যায়।