Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Student

Girl: প্যাডেলে পা পৌঁছয় না, অসুস্থ বাবাকে ভ্যানে শুইয়ে সাহায্য চাইছে ১১ বছরের ঝিলিক

রোজ সকালে বাবাকে ভ্যানে শুইয়ে তা চালিয়ে উলুবেড়িয়া শহরে চলে আসে ঝিলিক। মনে আশা, কেউ যদি তার পাশে দাঁড়ায়। যদি কেউ বাড়ায় হাত।

উলুবেড়িয়ায় বাবাকে নিয়ে ঝিলিক মণ্ডল।

উলুবেড়িয়ায় বাবাকে নিয়ে ঝিলিক মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:২১
Share: Save:

বাবা অসুস্থ। বেশ কিছু দিন ধরে একেবারেই শয্যাশায়ী। অথচ তিনিই ছিলেন সংসারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর অসুস্থতা প্রায় জলে ফেলে দিয়েছে স্ত্রী-কন্যাকে। আর সে কারণেই অসুস্থ বাবাকে ভ্যানরিকশায় চাপিয়ে সাহায্যে চাইছে ১১ বছরের ঝিলিক মণ্ডল। ভাল করে পা না-পাওয়া অবস্থায় নিজেই চাপ দিচ্ছে ওই ভ্যানরিকশার প্যাডেলে। জীবনে জমাট বাঁধা অন্ধকারে কিছুটা আলোর ‘ঝিলিক’ আনতে চায় ছোট্ট মেয়েটি।
উলুবেড়িয়ায় রোজ দেখা মেলে ঝিলিকের। ভ্যানরিকশায় বাবাকে চাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা শহর। একটু সাহায্যের আশায়। হাওড়ার উলুবেড়িয়া থানার হীরাপুর দক্ষিণ রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা ঝিলিক। স্থানীয় বাঁইখালি হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে সে। বাবা সুশান্ত মণ্ডল একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। এত দিন চলছিল সে ভাবেই। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি সে ভাবে আর কিছুই করতে পারেন না। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক মতো কাজ করে না। হাঁটাচলা তো দূরঅস্ত, ক্রমে পরিস্থিতি এমন হয় যে, একেবারেই শয্যাশায়ী। এক সময় তিনিই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর অসুস্থতায় অনটন দেখা দেয় সংসারে। সেই পরিস্থিতিতে সংসারের হাল ধরে ঝিলিক। যে বয়সে ছোটদের পড়াশোনা এবং খেলাধুলোয় ব্যস্ত থাকার কথা, সেই বয়সে ভ্যানরিকশায় বাবাকে চাপিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।

রোজ সকালে বাবাকে ভ্যানরিকশায় শুইয়ে উলুবেড়িয়া শহরে চলে আসে ঝিলিক। নিজেই চালায় ওই ভ্যানরিকশা। সাহায্য চায় মানুষের কাছে। যদি কেউ বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত! এখন এটাই দিনলিপি ঝিলিকের। কচি হাতে সাইকেল ভ্যানের হাতল শক্ত করে ধরে সে বলে, ‘‘আমার দাদা, ভাই, দিদি কেউ নেই। বাড়িতে মা, বাবা আর আমি। বাবা তো কিছু করতে পারে না। সকলের সাহায্যেই চলে আমাদের।’’ জীবন-যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে ঝিলিক বলে, ‘‘সারা দিন ভ্যান চালিয়ে সন্ধেয় বাড়ি ফিরে হাত-পায়ে খুব যন্ত্রণা করে। বই নিয়েও বসি। মা ডাকলে শুয়ে থাকা বাবার সেবা করি। বাবা তো কিছুই করতে পারে না। সব কিছু করে দিতে হয়।’’

ঝিলিকের পরিবারের কথা শুনে হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘ওই পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। প্রশাসন সবটা জানে। বিশেষ ভাতা হিসাবে মাসে ওঁদের তিন জনকে ২৪০ টাকা করে দেওয়া হয়। মাসে যাতে ওঁরা ২০ কেজি করে চাল পান, প্রশাসন সেই ব্যবস্থাও করেছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও আছে ওঁদের। শুধু লক্ষ্মীর ভান্ডার হয়নি। স্থানীয় বিডিও-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত যাতে ওই পরিবারকে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় আনা হয়।’’ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যে কোনও হাসপাতালে সুশান্তের চিকিৎসা করা যাবে বলেও জানিয়েছেন সৌমেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিলিকদের এক প্রতিবেশী বলছেন, ‘‘মাসে ৭২০ টাকায় কী হয় একটা পরিবারে! রেশন বিনাপয়সায় মিললেও জীবনের জন্য তো কিছু কাঁচা টাকারও প্রয়োজন। ঝিলিক সে ভাবেই ব্যবস্থা করছে। ছোট্ট মেয়েটিকে ও ভাবে বাবাকে নিয়ে বেরোতে দেখলে খারাপই লাগে!’’

ঝিলিক যদিও সরকারি সাহায্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করছে না। সে বলছে, ‘‘ভ্যান চালাতে খুবই কষ্ট হয়।’’ তবু এই ‘আকালেও স্বপ্ন’ দেখে সে।তার আশা, ‘‘বাবাকে সুস্থ করে তুলব। আমিও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Student Helpless Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy