অন্য রবিবারগুলো এই কারখানার গেটে দাঁড়ালেই শোনা যায় ঘড়ঘড় শব্দ। কিন্তু বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের এই রবিবারটা একেবারেই অন্য রকম। বন্ধ কারখানার সব কল-কব্জা। কোনও শ্রমিকই কাজে যোগ দেননি।
কেন? শ্রমিকেরা জানিয়ে দিলেন, আজ ‘প্রস্তুতি’র দিন। কীসের প্রস্তুতি? সংস্থা গোটানোর কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে রেল মন্ত্রক। মন্ত্রকের সেই সিদ্ধান্ত জানার পরেই এলাকার শ্রমিক নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের ভবিষ্যৎ ঠিক হবে আজ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের (এনসিএলটি) শুনানিতে। সেই শুনানিতে তাঁদের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতৃত্ব কী কী যুক্তি সাজাবেন, তা নিয়েই চলল প্রস্তুতি।
শ্রমিক সংগঠনগুলি জানায়, ওই শুনানিতে এনসিএলটি-র নিযুক্ত রিজলিউশন প্রফেশনাল (আরপি) সংস্থা গোটানো হবে কী কী যুক্তিতে, তার সপক্ষে যুক্তি দেবে। তারই পাল্টা হিসেবে কী কী যুক্তি খাড়া করা যায়, তা নিয়ে এ দিন শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন নেতৃত্ব।
এ দিন সকালে কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, শ্রমিক-কর্মীদের জটলা। ‘সেভ কমিটি’র নেতৃত্বদের ঘিরে বারবার তাঁরা জানতে চাইছেন, ‘এনসিএলটি-র যুক্তি খণ্ডন করার মতো যথেষ্ট কাগজপত্র রয়েছে তো?’ তবে এ দিন স্বাভাবিক ভাবেই অন্য দিনের তুলনায় থমথমে পরিবেশ ছিল কারখানায়। কারও মুখেই অন্য কারখানা বাঁচানো ছাড়া অন্য কোনও কথা প্রায় শোনাই যাচ্ছিল না। এমনকী অন্য রবিবার সংস্থার বার্নপুর কারখানায় কাজ হলেও এ দিন প্রায় কোনও শ্রমিক-কর্মীই কাজে যোগ দেননি। তাঁরা জানান, শনিবারই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আজ কাজ করবেন না। কারণ, রবিবারটা বৈঠক করে সোমবারের প্রস্তুতি নেওয়ার দিন। গত সাত দিন ধরেই সেভ কমিটির নেতৃত্বে কারখানার গেটে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। সমস্ত রকম রাজনৈতিক দলাদলি ভুলে তাঁরা এক ছাতার তলায় কারখানা বাঁচানোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতা অভিজিৎ ঘটক, সিটু নেতা তথা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, কংগ্রেস নেতা হরজিৎ সিংহরা।
কারখানা লাগোয়া শ্রমিক কর্মী-আবাসন থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে দেখা গেল, একটি বড় গাছের তলায় জনা কয়েক কিশোরের জটলা। সকলেই স্কুল পড়ুয়া। তাদেরই এক জন প্রতীক শর্মা বলে, ‘‘কালকের পরে কী হবে জানি না। হয়তো আবাসনটাই ছেড়ে দিতে হবে।’’ আশঙ্কায় রয়েছেন শ্রমিকদের স্ত্রীরাও। প্রতিমা দত্ত নামে এক জন বলেন, ‘‘অদৃষ্টে কী আছে জানি না।’’
তবে তর্ক-বিতর্ক বা আলোচনা, যাইই হোক না কেন, সংস্থা বাঁচাতে যে তাঁরা জঙ্গি আন্দোলনের পথেও হাঁটতে পারেন, এ দিন সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সেভ কমিটির আহ্বায়ক অনিল সিংহ। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বৈঠকে কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পাকা হলে সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’ তা হয়তো যাওয়া হবে। কিন্তু মামলা চলাকালীন বেতন মিলবে কি, পাওনাগণ্ডার টাকা কবে মিলবে, এ সব প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে বার্নপুরের এই কারখানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy