ভাঙচুর চলছে সভা-ঘরে। বসিরহাটে। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির কেন্দ্রীয় পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রবিবার প্রকাশ্যে এসে পড়ল দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব। যা গড়াল ভাঙচুর, মারপিট, এমনকি, হাসপাতাল পর্যন্ত। দ্বন্দ্বের মূলে— বিজেপিরই একাংশের অভিযোগ— দলে ‘পুরনো’ ও ‘কাজের মানুষেরা’ গুরুত্ব এবং কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। তৃণমূল-সহ অন্য দল থেকে আসা ব্যক্তিরা ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠে পদ পেয়ে যাচ্ছেন। কোথাও কোথাও পদ বিক্রিও হচ্ছে। সর্বোপরি, সারদার মতো কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো নেতারা পদ পেয়ে যাওয়ায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের লড়াইয়ের আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় পদাধিকারীর তালিকা থেকে বাদ পড়ে শনিবার দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বলেছিলেন, ‘‘৪০ বছর বিজেপির সেবা করার পরে তৃণমূল থেকে নেতা আসছেন বলে আমাকে সরতে হল!’’ রাজ্য সভাপতি পদের মেয়াদ ফুরনোর পর বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক ছিলেন রাহুলবাবু। তাঁকে সরিয়ে সেখানে আনা হয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরাকে। আর বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হয়েছেন মুকুল রায়, যাঁর নাম সারদা এবং নারদ-কাণ্ডে জড়িয়ে আছে। মুকুলবাবু এ দিন পুরুলিয়ায় জানিয়েছেন, নতুন দায়িত্ব তাঁর কাছে এখনও স্পষ্ট হয়নি। তবে একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই রাজ্যের মানুষের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে।’’ মুকুলবাবু এই কথায় বিধানসভা ভোটে নিজের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
বসিরহাট, বারুইপুর এবং বাঁকুড়ায় এ দিন দলের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বসিরহাটে জেলার বৈঠক চলাকালীন হঠাৎ ঢুকে জেলা সভাপতি তারক ঘোষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দু’পক্ষে ধস্তাধস্তি, চেয়ার ভাঙচুর হয়। তারকবাবু বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে ঘটনার কথা জানিয়েছি।’’ জেলার প্রাক্তন সভাপতি গণেশ ঘোষ বলেন, ‘‘অজানা কারণে তারকবাবু আমাদের নিয়ে দল করতে চান না। কোনও বৈঠকে আমাদের ডাকা হয় না। কর্মীরা তাই ক্ষোভ জানিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: সংক্রমণ-সুস্থতায় জোড়া স্বস্তি রাজ্যের, ফের দুশ্চিন্তা বাড়াল মৃ্ত্যু
বারুইপুরে এ দিন বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব জেলার বৈঠকে ছিলেন দলের নতুন কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেনন এবং অনুপম। সেখানেও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব গড়ায় মারধর এবং ভাঙচুরে। পুরনো কর্মীদের মর্যাদার দাবিতে অনুপমের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান দলের একাংশ। অনুপম চলে যাওয়ার পরে দুই শিবিরে মারপিটও হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আহতদের গড়িয়ার বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলা সভাপতি হরিকৃষ্ণ দত্ত আঙুল তুলছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ দত্ত এবং মণ্ডল সভাপতি দেবোপম চট্টোপাধ্যায়ের দিকে। স্বরূপবাবুর পাল্টা দাবি, ৪৫ জন মণ্ডল সভাপতিকে ডাকা হয়নি বলেই বিক্ষোভ। বাঁকুড়ায় দু’জন মণ্ডল সভাপতি বদলের সিদ্ধান্তের িবরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয় জেলা সভাপতিকে অপসারণের দাবিতে। বাঁকুড়া জেলার সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রের কিন্তু দাবি, ‘‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
দলের একাংশের মত হল, বিভিন্ন জেলার বিক্ষোভকারীদের অনেকে রাহুলবাবুর অনুগামী। এ দিন রাহুলবাবু ফের বলেন, ১০-১২ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ স্পষ্ট করবেন। তবে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টায় মুকুলবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এক জনের ৩০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস একটা কথার উপরে বিচার করা ঠিক নয়। আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যা মেটানো সম্ভব।’’ অনুপমও বলেন, ‘‘রাহুলদার একটু মন খারাপ থাকতে পারে। সামনে কথা হলে বোঝা যাবে। কিছু বলার থাকলে নিশ্চয়ই উনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy