Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পুরভোটে আধাসেনা চেয়েছেন রাজ্যপাল, জানতই না নবান্ন

আসন্ন পুরভোটে আধাসেনা চেয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি লিখে বিতর্কে জড়ালেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। গত ১১ অগস্ট লেখা রাজ্যপালের ওই চিঠির জবাবে কেন্দ্রের চিঠি নবান্নে এসে পৌঁছয় বুধবার দুপুরে। তার আগে পর্যন্ত এই ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেনি রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের চিঠির কথা জানার পর নবান্ন শুধু যে ক্ষুব্ধ তা-ই নয়, সেই ক্ষোভের কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি অবশ্য চিঠিতেই রাজ্যপালের প্রস্তাব খারিজ করে রাজ্য পুলিশ দিয়েই ওই নির্বাচনগুলি করানোর কথা বলেছে।

দেবাশিস ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

আসন্ন পুরভোটে আধাসেনা চেয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চিঠি লিখে বিতর্কে জড়ালেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। গত ১১ অগস্ট লেখা রাজ্যপালের ওই চিঠির জবাবে কেন্দ্রের চিঠি নবান্নে এসে পৌঁছয় বুধবার দুপুরে। তার আগে পর্যন্ত এই ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানতে পারেনি রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের চিঠির কথা জানার পর নবান্ন শুধু যে ক্ষুব্ধ তা-ই নয়, সেই ক্ষোভের কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি অবশ্য চিঠিতেই রাজ্যপালের প্রস্তাব খারিজ করে রাজ্য পুলিশ দিয়েই ওই নির্বাচনগুলি করানোর কথা বলেছে।

নবান্ন মনে করছে, এ ভাবে চিঠি লিখে এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন রাজ্যপাল। সরকারের বক্তব্য, নীতিগত কোনও বিষয়ে রাজ্যপাল সরকারের মতামতের বাইরে গিয়ে কোনও অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন না। সরকারের মতই তাঁর মত। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার পুলিশ দিয়েই ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগেই। এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যপালের পছন্দ না হলে তিনি এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে পারেন বা রাজ্যকে তাঁর মনোভাব জানাতে পারেন। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই এ ভাবে দিল্লিতে চিঠি লিখতে পারেন না।’’ ওই কর্তা জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের এ নিয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি। ফলে তিনি কীসের ভিত্তিতে এই চিঠি লিখলেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না।

রাজ্যপালের চিঠির জবাব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য নিয়ম মেনেই দিয়েছে। সেখানে রাজ্যপালের পাশাপাশি চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্নেও। তাতে বলা হয়েছে, বিধাননগর ও আসানসোলের পুরভোট এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে আধাসেনা মোতায়েন করতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। কিন্তু সামনেই বিহারের ভোট। ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া যাবে না। রাজ্য সরকারই ব্যবস্থা করে নিতে পারবে।

পুরভোটে আধাসেনা চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনও। নবান্নে তারা চিঠি পাঠিয়েছিল অগস্টের শেষ দিকে। রাজ্য তাদের জানিয়ে দিয়েছিল, প্রয়োজনে কমিশনের চাহিদামতো পুলিশি ব্যবস্থা করা হবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই। জবাব পেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ফের সরকারকে বলেন, রাজ্য পর্যাপ্ত পুলিশ দেবে সেটা ভাল। তবু কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই আসানসোল ও বিধাননগরের পুরভোট করা জরুরি। উত্তরে রাজ্য বলে, বর্তমান আর্থিক অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

কমিশনের সঙ্গে নবান্নের এই চিঠি চলাচালি যখন চলছে, তারও অন্তত সপ্তাহ দুয়েক আগে দিল্লিতে চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিলেন কেশরীনাথ। সে কথা জেনে আরও বিস্মিত নবান্ন।

রাজ্যপালের এই পদক্ষেপের পিছনে রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছে শাসক দল। সরাসরি বিজেপির নাম না তুলেও তৃণমূলের অন্দরে অনেকের অভিমত, রাজ্যপাল হিসেবে কেশরীনাথ যা করলেন, তা এক অর্থে তৃণমূল-বিরোধীদেরই উৎসাহ জোগাবে। এটা রাজ্যপাল পদের সঙ্গে মানায় না। বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ যদিও বলেন, ‘‘কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উত্তরপ্রদেশের বিধানসভার অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি নিজে সংবিধান বিশেষজ্ঞ। এই রাজ্যের পরিস্থিতিও তাঁর অজানা নয়। এখানে কেমন ভোট হয়, সে খবর তাঁর আছে। তাই যা করেছেন, জেনে-বুঝেই করেছেন।’’

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন অবশ্য মনে করছেন, রাজ্যপালের এ ভাবে চিঠি লেখা ‘বাঞ্ছনীয় নয়’। নবান্নের সুরে তাঁরও মন্তব্য, ‘‘রাজ্যপালের কিছু বলার থাকলে তিনি তা রাজ্য সরকারকে বলবেন, এটাই রীতি। তা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে। রাজ্যকে এড়িয়ে সরাসরি দিল্লিতে চিঠি না লিখলেই রাজ্যপাল ভাল করতেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE