Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অপেক্ষা সার, শুরুই হল না আলু কেনা

রাজ্য সরকারের আশ্বাস ছিল। অপেক্ষায় ছিলেন চাষিরা। কিন্তু সোমবার দিনভর দেখা মিলল না সহায়ক মূল্যে আলু কেনার সরকারি কর্তাদের।রবিবার রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, গত বুধবারই বেশির ভাগ আলু উৎপাদক জেলার জেলাশাসকদের সহায়ক মূল্যে আলু কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন সপ্তাহেও সেই প্রক্রিয়া চালু হল না।

হিমঘরের সামনে উপচে পড়ছে আলু। বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে। ছবি: শুভ্র মিশ্র।

হিমঘরের সামনে উপচে পড়ছে আলু। বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে। ছবি: শুভ্র মিশ্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

রাজ্য সরকারের আশ্বাস ছিল। অপেক্ষায় ছিলেন চাষিরা। কিন্তু সোমবার দিনভর দেখা মিলল না সহায়ক মূল্যে আলু কেনার সরকারি কর্তাদের।

রবিবার রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, গত বুধবারই বেশির ভাগ আলু উৎপাদক জেলার জেলাশাসকদের সহায়ক মূল্যে আলু কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন সপ্তাহেও সেই প্রক্রিয়া চালু হল না। উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় আবার প্রশাসন আলুর কেনার প্রস্তুতি নিলেও চাষিদের কাছে খবর পৌঁছয়নি। তবে শ্রীলঙ্কা ছাড়াও পঞ্জাব এবং অন্ধ্রে প্রায় দু’লক্ষ মেট্রিক টন আলু পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে এ দিনই নবান্ন সূত্রে আবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেছিল গত ১১ মার্চ। এর পরে পাঁচ দিন গড়িয়ে গিয়েছে। সময় যত যাচ্ছে, আলুর দাম না পেয়ে চাষির আত্মহত্যার অভিযোগ উঠছে একের পর এক। প্রায় কোনও জেলাতেই চাষিরা এখনও জানেন না, তাঁদের ফলনের কত শতাংশ সরকার কিনবে? সকলে সহায়ক মূল্যে আলু বিক্রির সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। যে সহায়ক মূল্য ধার্য হয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। চাষিদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, আলুর উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি প্রায় ৭ টাকা। সরকার সেই দর দিলেও কিছুটা রক্ষা হত। কিন্তু সরকার দিচ্ছে মোটে সাড়ে ৫ টাকা।

এর পরেও অবশ্য সরকারি দরে দ্রুত আলু কেনা শুরু হলে চাষিদের বড় অংশই হাঁফ ছেড়ে বাঁচতেন। কেননা, খোলা বাজারে ওইটুকু দরও তাঁরা পাচ্ছেন না। কিন্তু সেই নড়াচড়া এখনও দেখা যাচ্ছে না। কোনও-কোনও জেলার কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু এলাকায় আলু কেনা শুরু হয়েছে। হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল যেমন বলেন, “কয়েকটি ব্লকে বিক্ষিপ্ত ভাবে আলু কেনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সার্বিক ভাবে ১৮টি ব্লকে আলু কেনা শুরু হবে।”

রবিবার থেকেই বাঁকুড়ার প্রতিটি হিমঘরের সামনে আলু কেনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। কিন্তু পরে প্রশাসন জানায়, বেশ কিছু হিমঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আলু মজুত করে রাখার জায়গাও কম। তাই আলু কেনা ক্রমশ পিছোচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে অবশ্য বিক্ষিপ্তভাবে আলু কেনা শুরু হয়েছে। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে শালবনি-সহ কয়েকটিতে এ দিন কেনা হয়। বর্ধমান জেলা প্রশাসনেরও দাবি, আলু কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।


প্রচার না হওয়ায় চাষিরা জানতেই পারেননি আলু কেনার কথা।
আলিপুরদুয়ার ১ ব্লক অফিস চত্বরে খালি পড়ে রইল দাড়িপাল্লা। ছবি: নারায়ণ দে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার আলুর রেকর্ড ফলন হয়েছে, প্রায় ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। অথচ ৭৫টি হিমঘরে আলু মজুত থাকতে পারে মাত্র ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। শালবনির চাষি সনাতন মাহাতোর কথায়, “প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। যা দাম পাচ্ছি, চাষের খরচ উঠবে না।”

আলু কেনা শুরু না হওয়ায় এ দিন কোচবিহারে দিনহাটার বলরামপুর রোডে একটি হিমঘরের অফিসে ভাঙচুর চালান চাষিরা। আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সকালে ফালাকাটা ব্লকে খাড়াকদম গ্রামে সমবায় সমিতির হিমঘরে চাষিরা আলু রাখতে গেলে কর্তৃপক্ষ বলেন, জায়গা নেই। ক্ষুব্ধ চাষিরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ফালাকাটা-বীরপাড়া ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে অবরোধ তোলে। পরে ওই হিমঘরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিনভর বিক্ষোভ দেখান চাষিরা।

ওই আলিপুরদুয়ারেই কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় ব্লক প্রশাসন আলু কেনার প্রস্তুতি নিলেও চাষিদের দেখা মেলেনি। আলিপুরদুয়ার ১-এর বিডিও অনিন্দিতা দে বলেন, “আলু কেনার বিষয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতে জানানো হয়েছে। প্রস্তুতিও সারা। তবে কৃষকরা আসেননি।” এক অবস্থা জেলার অন্য কিছু ব্লকেও। প্রশাসনের দাবি, উচ্চ মাধ্যমিক চলায় মাইকে প্রচার চালানো যায়নি। তাই চাষিরা খবর পাননি। কোচবিহারের জেলাসাশক পি উল্গানাথন জানান, কাল, বুধবার থেকে তাঁর জেলায় আলু কেনা শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

cold storage potato farmer potato subsidiary price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE