Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আউটডোরের লাইনে অপেক্ষা কমাতে প্রযুক্তি

প্রায় ৪০ মিনিট বা এক ঘণ্টা পরে যখন তিনি টিকিট করাতে পারলেন, তত ক্ষণে হয়তো দুপুর দু’টো বেজে গিয়েছে। যার জন্য লাইনে দাঁড়ানো সেই আউটডোরই বন্ধ হয়ে গিয়েছে!

 বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে এমন ভিড় কমাতেই এই উদ্যোগ। ফাইল চিত্র

বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে এমন ভিড় কমাতেই এই উদ্যোগ। ফাইল চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৫
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালের আউটডোর-টিকিট করানোর কাউন্টারের সামনে সাপের মতো একেবেঁকে যাওয়া দীর্ঘ লাইন রোজের চিত্র। শামুকের গতিতে লাইন এগোচ্ছে। লাইনে দাঁড়ানো অসুস্থ মানুষদের কেউ আর না পেরে মাটিতেই বসে পড়ছেন, কেউ টলছেন। কোলে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়ানো মায়ের পা-কোমর অবশ হয়ে যাচ্ছে।

প্রায় ৪০ মিনিট বা এক ঘণ্টা পরে যখন তিনি টিকিট করাতে পারলেন, তত ক্ষণে হয়তো দুপুর দু’টো বেজে গিয়েছে। যার জন্য লাইনে দাঁড়ানো সেই আউটডোরই বন্ধ হয়ে গিয়েছে! সরকারি হাসপাতালে আউটডোর টিকিট করানোর জন্য এই দেরি এবং তার জন্য মানুষের হেনস্তার সমাধানে এ বার ডিজিটাল রেশন কার্ড বা খাদ্যসাথী কার্ডকে হাতিয়ার করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। একই সঙ্গে আউট়ডোরে আসা রোগীদের মেডিক্যাল রেকর্ডের ডেটাবেস তৈরির প্রক্রিয়াও তারা শুরু করে দিচ্ছে। রাজ্য জুড়ে সমস্ত সরকারি হাসপাতালে তা করার পরিকল্পনা নিলেও পাইলট হিসেবে আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে কলকাতার এসএসকেএম ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তা শুরু হচ্ছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের খাদ্যসাথী স্কিম-এ ইতিমধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। সেখানে উপভোক্তার নাম, ঠিকানা, বয়স-সহ বিভিন্ন জরুরি তথ্য রয়েছে। সেই রেশন কার্ড নিয়ে আউটডোর টিকিটের কাউন্টারে দেখালে কার্ডের বার-কোড স্ক্যান করে রোগীর সাধারণ সব তথ্য জানা যাবে এবং সেই অনুযায়ী দ্রুত তার টিকিট তৈরি হয়ে যাবে। ওই ডিজিটাল রেশন কার্ডই হবে রোগীর ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী ব্যাখ্যা করেন, ‘‘লাইনে দাঁড়ানো রোগীর এক-এক জনের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে নাম-ঠিকানা-বয়স এবং কোন ওপিডিতে দেখাবেন, এই সব লিখতেই অনেক সময় চলে যায়। গ্রাম থেকে আসা রোগীদের অনেকেই অনেক সময়ে গুছিয়ে সব বলতেও পারেন না। বার কোড স্ক্যান করলে এই দেরিটা এক ধাক্কায় কমে যাবে। এখন সরকারি হাসপাতালে যে হারে ভিড় হচ্ছে, তাতে এই ব্যবস্থা খুব জরুরি ছিল।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা আরও জানান, দূরদূরান্ত থেকে উজিয়ে এসে রোগীদের অসুস্থ শরীরে এত ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাটাও অমানবিক। লাইনে দাঁড়ানোর সময়টা কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে অনেক দিন থেকেই চিন্তাভাবনা করছিল স্বাস্থ্য দফতর। যাঁদের ডিজিটাল রেশন কার্ড নেই, তাঁদের জন্য হাসপাতালে আলাদা আউটডোর টিকিটের লাইন থাকবে। সেই সব রোগীর মোবাইল নম্বরকে ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ হিসেবে ধরে নামধাম নথিভুক্ত করে নেওয়া হবে। ফলে পরের বার থেকে তাঁদের কাছেও আর ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হবে না। শুধু ফোন নম্বর জেনে নিলেই সেই রোগীর যাবতীয় তথ্য বেরিয়ে পড়বে। অজয়বাবু বলেন, ‘‘এই ভাবে সরকারি হাসপাতালের ওপিডিতে আসা প্রতি রোগীর একটি ডেটাবেস বা তথ্যব্যাঙ্কও তৈরি হয়ে যাবে। কারণ রোগীর ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’-এর সঙ্গে এই আউটডোরে তাঁর শারীরিক সমস্যা, ডাক্তারের নির্দেশ ও ওষুধ নথিভুক্ত হয়ে থাকবে। পরের বার যখন তিনি ওপিডিতে আসবেন, তখন ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ বললেই কম্পিউটরে তাঁর সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। রোগীকে আর আলাদা করে তা ব্যাখ্যা করতে হবে না। এতে রোগী দেখার ক্ষেত্রে গতি বাড়বে। কমবে ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষার প্রহর।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Digital Ration Card Outdoor patient Queue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE