সরকারি কর্মীদের কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভ সভা। বৃহস্পতিবার, খাদ্য ভবনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ঘটনাচক্রে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ যখন এল, সরকারি কর্মীরা বৃহস্পতিবার সেই সময় পালন করছেন দ্বিতীয় দফার কর্মবিরতি। এবং ওই কর্মসূচির আহ্বায়ক দুই যৌথ মঞ্চের দাবি, এ দিনের কর্মবিরতির প্রভাব ছিল নজরে পড়ার মতো। দাবি আদায়ে দিল্লি গিয়ে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন আন্দোলনকারী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব। তবে সরকারি সূত্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই কর্মসূচি তেমন দাগ কাটতে পারেনি।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পাশাপাশি রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটিও কর্মবিরতি কর্মসূচির সাফল্যের দাবি করেছে। যাবতীয় জরুরি পরিষেবা এই কর্মসূচির বাইরে ছিল। যে-সব স্কুলে প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন হচ্ছে, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্ম করেছেন যথারীতি।
জেলায় জেলায় কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে প্রধানত আদালতে। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের প্রায় কোনও আদালতেই কাজ হয়নি। জেলা প্রশাসনিক ভবনেও হাজিরা কম ছিল। পূর্ব বর্ধমানে জেলা স্কুলশিক্ষা ভবনের সামনে কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। কালো ব্যাজ করে জরুরি কাজে যোগ দেন কর্মীরা। জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “কোথাও কোনও অভিযোগ আসেনি। সব ঠিকঠাক ছিল।” উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে কাজ ব্যাহত হয়েছে। হুগলিতে স্বাভাবিক ছিল শিক্ষা কেন্দ্র, ব্লক, পঞ্চায়েত এবং অন্যান্য সরকারি দফতরও। আলিপুরদুয়ার আদালতে কোনও মামলার শুনানি হয়নি। উত্তর দিনাজপুরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ কালো ব্যাজ পরে কাজ করেছেন। কাজ বন্ধ ছিল দক্ষিণ দিনাজপুরে আদালতে। শিলিগুড়ির সরকারি অফিসগুলিতে কালো ব্যাজ পরে কাজ করেছেন অনেক কর্মী। কোচবিহার বা মালদহে তেমন প্রভাব পড়েনি কর্মবিরতি কর্মসূচির।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, “ডিএ-সমস্যা মেটাতে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারকে বৈঠকে বসার যে-নির্দেশ হাই কোর্টের বিচারপতি দিয়েছেন, তাকে স্বাগত। আমরা বহু বার সরকারকে আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে বলেছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।” আর রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্তচৌধুরীর দাবি, “সারা রাজ্যে কর্মবিরতি কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাব কর্মচারীরা দিয়েছেন। তাঁদের মেরুদণ্ড বিকিয়ে যায়নি।”
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মিত্র জানান, ১০ এবং ১১ এপ্রিল তাঁরা দিল্লিতে যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ-অবস্থান করবেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন। তাতে এক হাজার আন্দোলনকারীর যোগ দেওয়ার কথা। বিশ্বজিৎ বলেন, “রাজধানী এবং দুরন্ত এক্সপ্রেসে যাবেন আন্দোলনকারীরা। এক দল ৮ এপ্রিল ট্রেনে চাপবেন, অনেয দল রওনা হবেন ৯ এপ্রিল।” দিল্লির পাশাপাশি ১০ এবং ১১ এপ্রিল কলকাতাতেও শহিদ মিনার চত্বরে তাঁদের ধর্না যথারীতি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ডিএ নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘সরকার বকেয়া ডিএ দিয়ে দিলে আমরাও সরকারের প্রশংসা করব। তবে ডিএ আন্দোলন এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এক শতাংশ ডিএ কম দিলেও আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ডিএ তো চাইতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রীরও তো আরও দেওয়ার ইচ্ছা আছে। কিন্তু কেন্দ্র যে বিপুল টাকা বকেয়া রেখেছে, তা-ও তো মাথায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কুণালের অভিযোগ, ‘‘আন্দোলনের নামে সিপিএমের একাংশ মানুষের কাজ বন্ধ রেখে রাজনীতি করছেন। আদালতের কাছে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy