Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দূষণ দমনে ইথানল দেবে কলাগাছ

পাতা থেকে থোড় থেকে মোচা থেকে ফল— প্রায় সর্বাঙ্গ দিয়েই মানুষের প্রয়োজন মেটায় কলাগাছ। এ বার ইথানল তৈরির দরজা খুলে দিচ্ছে সেই কলাগাছের ছাল, যা ঘিরে থাকে থোড়কে। এই সূত্রেই ভারতে বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরির সম্ভাবনা আরও বাড়ছে।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

পাতা থেকে থোড় থেকে মোচা থেকে ফল— প্রায় সর্বাঙ্গ দিয়েই মানুষের প্রয়োজন মেটায় কলাগাছ। এ বার ইথানল তৈরির দরজা খুলে দিচ্ছে সেই কলাগাছের ছাল, যা ঘিরে থাকে থোড়কে। এই সূত্রেই ভারতে বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরির সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। আর এই সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি বিভাগ।

দূষণ-দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে ইথানল বড় অস্ত্র। পেট্রোল ও ডিজেলের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ ইথানল মেশালে ওই দু’ধরনের জ্বালানির দূষণ অনেকটা কমে। কিন্তু ভারতে এখন বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরির কোনও বড় প্রকল্প নেই। তাই বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। আইআইটি খড়্গপুরের কৃষিবিজ্ঞানী রিন্টু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, শুধু কলাগাছের ছাল নয়, তুলোগাছের ছাল এবং কাশগাছ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরি করা সম্ভব।

মার্কিন জার্নাল ‘এলসেভিয়ার’-এ সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ওই কৃষিবিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তাঁদের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে কলাগাছ ও তুলো গাছের ছাল এবং কাশগাছ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরি করা যেতে পারে। তাঁদের এই গবেষণা উল্লেখযোগ্য কেন, তা ব্যাখ্যা করে আইআইটি খড়্গপুরের ওই অধ্যাপিকা বলেন, ওই সব গাছ থেকে এত দিন ইথানল তৈরির পথে মূল বাধা ছিল লিগনিন নামে একটি রাসায়নিক। ওই রাসায়নিকটি ইথানল তৈরির বিক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছিল।

রিন্টুদেবীর দাবি, আইআইটি খড়্গপুরের গবেষণাগারে তাঁরা এমন একটি উৎসেচক তৈরি করেছেন, যা লিগনিনকে অন্য পদার্থে রূপান্তরিত করে তার ক্ষমতা খর্ব করে দিচ্ছে। ফলে কলাগাছ, তুলোগাছের ছাল ও কাশগাছ থেকে ইথানল তৈরিতে আর কোনও বাধা থাকছে না।

‘‘কলাগাছ বা তুলোর মতো গাছ থেকে ইথানল তৈরি হলে কারও কোনও বাধা থাকবে না। আমাদের রাজ্যে প্রচুর কলাগাছ পাওয়া যায়। তাই সহজেই ইথানল তৈরি করা যাবে,’’ বলছেন রিন্টুদেবী।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, এখন এ দেশে ইথানল তৈরি হয় শস্যদানা এবং আখগাছের অবশিষ্টাংশ থেকে। ভারতে এখন যে-বিপুল পরিমাণ ইথানলের প্রয়োজন, তা যদি আখগাছের অবশিষ্টাংশ বা শস্যদানা থেকে তৈরি করতে হয়, তা হলে খাবার মতো আখ আর পাওয়া যাবে না। চিনি তৈরির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেবে। তাই বিকল্প রাস্তার কথা ভাবা হচ্ছিল। দেশ জুড়ে গবেষণা চলছিল। আইআইটি খড়্গপুরের এই গবেষণায় সেই বিকল্প পথেরই সন্ধান মিলল।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজের প্রধান ত়ড়িৎ রায়চৌধুরীর মতে, বর্জ্য পদার্থ থেকে এ ধরনের গবেষণা অত্যন্ত উপযোগী। কারণ, এতে এক দিকে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনই উৎপাদিত ইথানল পেট্রোলে মিশিয়ে কমানো যাচ্ছে জ্বালানি দূষণও।

রিন্টুদেবী জানান, ভারতে এখনও বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরি করা যাচ্ছে না। বিদেশ থেকেই আমদানি করতে হচ্ছে। তবে দিল্লির কাছে বাণিজ্যিক ভাবে ইথানল তৈরির জন্য বড় একটি কেন্দ্র তৈরি করতে চাইছে ভারত সরকার। রিন্টুদেবীর দাবি, আইআইটি খড়্গপুর প্রথম উৎকৃষ্ট মানের পরিবেশ-বান্ধব ইথানল তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করল।

অন্য বিষয়গুলি:

Banana Tree Ethanol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE