বছরখানেক আগে নেওড়াভ্যালিতে আচমকাই দেখা দিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের ‘দক্ষিণরায়’। এ বার উত্তরবঙ্গের ওই জঙ্গলে ছাড়া হতে পারে দু’টি লাল প্যান্ডাকে! রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, দার্জিলিঙের পদ্মজা নায়ডু চিড়িয়াখানায় জন্মানো দু’টি প্যান্ডাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপালের সম্মতিও মিলেছে।
রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব বলেন, ‘‘সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক বা নেওড়াভ্যালি জাতীয় পার্কে প্যান্ডা দু’টিকে ছাড়া হবে। ঠিক কোন জঙ্গলে ছাড়া হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত পর্বের সমীক্ষা চলছে।’’ রাজ্যে এখন শুধু সিঙ্গালিলা আর নেওড়াভ্যালিতেই লাল প্যান্ডার দেখা মেলে।
বন দফতরের খবর, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’ (আইইউসিএন)-এর তালিকায় লাল প্যান্ডা অত্যন্ত বিপন্ন গোত্রের প্রাণী। গোটা পৃথিবীতেই তার সংখ্যা হুহু করে কমছে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৯০ সালে ‘গ্লোবাল রেড প্যান্ডা কনজারভেশন’ প্রকল্পে দার্জিলিঙের চিড়িয়াখানায় লাল প্যান্ডা প্রজননের ব্যবস্থা হয়। ১৯৯৪ সালে দার্জিলিঙের কৃত্রিম আবাসে প্রথম প্যান্ডা শাবক জন্মায়। ‘‘সেই থেকে প্যান্ডার প্রজনন ভাল ভাবেই চলেছে। দার্জিলিঙে এখন ২০টি প্যান্ডা রয়েছে,’’ বললেন বিনোদ। তিনি জানান, প্যান্ডা ছাড়াও কয়েকটি কালিজ ফেজান্ট এবং বনমুরগিকে জঙ্গলে ছাড়া হবে।
প্যান্ডা-পঞ্জি
লাল প্যান্ডা (আইলুরুস ফুলগানস)
বাসস্থান: পূর্ব হিমালয় এবং চিন
খাদ্য: মূলত কচি বাঁশ, পাতা, ফুল
বিপদ: চোরাশিকার, জলবায়ু বদল
বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০০৩ সালে মিনি এবং সুইটি নামে দু’টি লাল প্যান্ডাকে সিঙ্গালিলায় ছাড়া হয়েছিল। মিনি অন্য প্রাণীর আক্রমণে মারা যায়। সুইটি স্থানীয় এক পুরুষ প্যান্ডাকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। তার সঙ্গে মিলনে গৈরিবাসের এক ওক গাছের কোটরে বাচ্চা হয় সুইটির। পরে আরও দু’টি প্যান্ডাকে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু নেওড়াভ্যালিতে এত দিন কোনও প্যান্ডা ছাড়া হয়নি। বনকর্তাদের একাংশ বলছেন, বাঘের দেখা পাওয়ার পরে নেওড়াভ্যালির গুরুত্ব বেড়েছে। তাই সেখানে লাল প্যান্ডা ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ল্যাব্রাডরকে টেক্কা দিয়ে সেরা নেড়ি
পশ্চিমবঙ্গের বনাঞ্চলে লাল প্যান্ডার হালহকিকত নিয়ে পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণপ্রেমীদের একাংশ খুব চিন্তিত। পরিবেশকর্মী অনিমেষ বসুর মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে এ রাজ্যের তরাই ও পার্বত্য এলাকার পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বনাঞ্চলও। ফলে ঠান্ডা এলাকার প্রাণী প্যান্ডারা স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চতর এলাকায় সরে যাচ্ছে। রাজ্যের এক অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ বনকর্তার কথায়, ‘‘এর আগেই সেঞ্চল থেকে সিঙ্গালিলার দিকে প্যান্ডারা সরে যেতে শুরু করেছিল। সেটাই ছিল ইঙ্গিত।’’ প্রাণী বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গে চোরাশিকারের উপদ্রব ঠেকাতে আরও সক্রিয় উদ্যোগ চান বন্যপ্রাণপ্রেমীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy