ভিড়ে ঠাসা সকালের বাজার। বহরমপুরের নতুনবাজারে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
করোনা-আবহে খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের বিশেষ ব্যবস্থা হলেও বাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র রেশন নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) আসরে নামানো হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। অন্তত ৪৫ লক্ষ আবেদনকারী এখনও কার্ড পাননি। তাঁদের জন্যই ‘ফুড কুপন’ তৈরি হয়েছে। বাড়ি-বাড়ি সেই খাদ্য কুপন পৌঁছে দিতে যাবেন বিএলও-রা।
১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পরিবার ও বিশেষ পরিবার, রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১ এবং বিশেষ জনজাতি— এই চারটি বিভাগের উপভোক্তারা বিনামূল্যে রেশনে চাল, গম ও আটা পাবেন। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২ রেশন কার্ড থাকলে ১৩ টাকা কেজি দরে চাল এবং ন’টাকা কেজি দরে গম মিলবে।
প্রথম দিনেই ২০% উপভোক্তা রেশন নিয়েছেন বলে খাদ্য দফতর সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার, দ্বিতীয় দিনেও রেশন দোকানে ভিড় জমে। সেই সঙ্গে বাড়ে গোলমাল।
বীরভূমের রামপুরহাটে সামগ্রী কম দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ হয় গোয়ালে গ্রামের রেশন দোকানে। পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর, মেমারি, রায়না-সহ কিছু এলাকায় একই অভিযোগে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা তা খোলার ব্যবস্থা করেন। নদিয়ায় নাকাশিপাড়ার চাঙ্গা গ্রামে গম দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কালীগঞ্জ ব্লকে ঘোড়াইক্ষেত্রে ঠিক সামগ্রী না-দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ হয়। একই অভিযোগ ওঠে বেথুয়াডহরিতে। ডিলার ভুল স্বীকার করে ঠিক সামগ্রী দিতে শুরু করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে হয়। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-২, শমসেরগঞ্জ ব্লকে এ দিনও সামগ্রী পাননি গ্রাহকেরা। বুধবার রাতে রেজিনগরে জামাল বিশ্বাস ও তোরাব আলি নামে দুই বাসিন্দার বাড়িতে হানা দিয়ে বেআইনি ভাবে মজুত রাখা ২২ বস্তা গম এবং ৩২ ব্যারেল কেরোসিন আটক করে পুলিশ। দু’জনেই পলাতক। কান্দির বিভিন্ন এলাকায় চাল-গম কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জলপাইগুড়িতে শামুকতলার মাঝেরডাবরি গ্রামে রেশনে চাল-গম কম দেওয়ার অভিযোগে এক ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বালুরঘাটে জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতরের সামনে চাল-গমের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। অভিযোগ, জেলা খাদ্য দফতর থেকে বলা হলেও কুপন দেওয়া হয়নি। ফলে বিনামূল্যে চাল-গম মিলছে না। আজ, শুক্রবার থেকে পুরনো রেশন কার্ডের গ্রাহকদের কুপন বিলির আশ্বাস দেওয়ার পরে বিক্ষোভ বন্ধ হয়।
গোলমালের প্রেক্ষিতে কী করণীয়, তা ঠিক করতে এ দিন দফায় জেলা ও রাজ্য স্তরে বৈঠক করেন খাদ্য দফতরের কর্তারা। জেলাশাসকদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। আবেদন করেও অনেকে এখনও রেশন কার্ড পাননি। তাঁদের জন্য ‘ফুড কুপন’-এর ব্যবস্থা করছে খাদ্য দফতর। খাদ্য দফতর সেই তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাচ্ছে। জেলা থেকে তা যাচ্ছে ব্লক স্তরে। সেখান থেকে কুপন বিলি হবে। কারা কুপন পাচ্ছেন, তার তালিকাও থাকবে রেশন দোকানের বাইরে। এক কর্তা বলেন, “সরকারি ছাপাখানা বন্ধ থাকায় নতুন কার্ড তৈরি করা যাচ্ছে না। তাই কুপন তৈরি করে খাদ্যশস্য বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। দু’-এক দিনের মধ্যে ফুড কুপন তৈরি হয়ে যাবে।” এর মাধ্যমে রেশন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে ১০ এপ্রিলের পরে।
অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানায়, চালকেরা লরি চালাতে চাইছেন না। যাঁরা লরিতে খাদ্যসামগ্রী তোলেন, সেই শ্রমিকেরা বাড়ি চলে গিয়েছেন। তাই সব রেশন দোকানে পুরোপুরি সামগ্রী পৌঁছচ্ছে না। তাতেই সমস্যা হচ্ছে। ধৈর্য ধরার জন্য আবেদন জানিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘ডিলারেরা যেমন যেমন সামগ্রী পাচ্ছেন, সে-ভাবেই দেওয়া হচ্ছে।’’ প্রশাসন জানাচ্ছে, গণবণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত যে-সব কর্মী বাড়ি গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। তাই গুদাম থেকে খাদ্যশস্য দ্রুত রেশন দোকানে পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন খাদ্য দফতরের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy