গোঘাটের আদ্যাপীঠের চাষের জমিতে পুড়ছে নাড়া। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
কে শোনে কার কথা!
ধান কাটার পরে খেতে ‘নাড়া’ (গাছের গোড়ার অংশ) পোড়ানো বন্ধ করতে কয়েক বছর ধরেই সরব পরিবেশপ্রেমীরা। ৪ নভেম্বর রাজ্যজুড়ে এ নিয়ে ‘সচেতনতা দিবস’ পালন করেছে কৃষি দফতর। চলছে প্রচারও। কিন্তু কিছুতেই কাজের কাজ হচ্ছে না।
আমন ধান কাটার মরসুম চলছে। আর উত্তর থেকে দক্ষিণ— রাজ্যের খেতের পর খেত থেকে উঠছে নাড়া পোড়ানোর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষ। করোনা পরিস্থিতিতে যা মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকেরা। শনিবার হুগলির পোলবা-দাদপুর ব্লকের চৌতারায় নাড়ার আগুন থেকে পুড়ে গিয়েছে প্রায় ৫০ বিঘা জমির ধান। কয়েক দিন আগে প্রায় এই ঘটনা ঘটেছে কলকাতাঘেঁষা আর এক জেলা হাওড়ার আমতা-২ ব্লকের দু’টি জায়গায়। তার পরেও নাড়ায় আগুন দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এই দুই জেলায় নাড়া পোড়ানোর জেরে কলকাতাতেও দূষণের মাত্রাবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যে ভাবে হাওড়া ও হুগলিতে নাড়া পোড়ানোর উপদ্রব বাড়ছে, তাতে বাতাসের মান প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে আগামী দিনে কলকাতার দূষণ দিল্লিকেও ছাপিয়ে যাবে।’’ একই মত কল্যাণী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদেরও।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও মানছেন, ‘‘সচেতনতা দিবস পালন করা হলেও এখনও অনেক জায়গাতেই নাড়া পোড়ানো হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। পাশাপাশি, কৃষিজমির উর্বরতা শক্তি কমছে। যা আগামী দিনে কৃষির ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে কৃষিবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।’’
কৃষি দফতর বারবার বলছে, নাড়া পোড়ানো হলে জমিতে থাকা উপকারী জীবাণু ও পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে যায়। শক্ত হয়ে জমি বন্ধ্যা হয়ে যাওযার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া, দূষণও হয় লাগামছাড়া। কারণ, বাতাসে প্রচুর ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশে। আর
এ বারের পরিস্থিতি আরও জটিল। কারণ, করোনা।
রায়গঞ্জের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শান্তনু দাস বলেন, ‘‘কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। জলীয় বাষ্পে ভর করে ধোঁয়া দীর্ঘক্ষণ বাতাসে ভেসে করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্ট তৈরি করতে পারে।’’ কোচবিহার থেকে রোগীদের নানা সমস্যার অভিযোগ উঠে এসেছে।
এত সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও কেন নাড়া পোড়ানো হয়?
চাষিদের একাংশের দাবি, বর্তমানে মজুরের অভাবে অনেক জায়গায় বীজ বোনা থেকে ধান কাটা, সবই হয় ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টর’ যন্ত্রের মাধ্যমে। কিন্তু যন্ত্রে ধান কাটার পরে অপেক্ষাকৃত বড় গোড়া পড়ে থাকে জমিতে। ধান ঝাড়ার পরে প্রচুর টুকরো খড়ও পড়ে থাকে। এ সব সাফ করার লোক মিলছে না। জমিতে আগুন দিলে সময় ও খরচ, দুই-ই বাঁচে।
কৃষি দফতরের দাবি, লাগাতার প্রচারে উত্তরবঙ্গের ইসলামপুর ও রায়গঞ্জের কোথাও কোথাও এ বার নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা কিছুটা কমেছে। মুর্শিদাবাদের উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডুও একই দাবি করেছেন। কিন্তু রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ হিসেবে পরিচিত বর্ধমান বা আর এক ধান উৎপাদক জেলা হুগলির ছবিটা প্রায় একই রকম। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাওয়ার সময়ে রোজই চোখে পড়ছে সিঙ্গুর, হরিপাল, চণ্ডীতলা, গুড়াপ বা ধনেখালির বিভিন্ন খেতের নাড়ার আগুন।
তবে এর মধ্যেই নাড়া পোড়ানোর বিকল্পের খোঁজ পেয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। কৃষি মন্ত্রক সেই সহজ বিকল্পের প্রচারও শুরু করেছে। কী সেই বিকল্প?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy