Advertisement
E-Paper

কম খরচের দাওয়াই চাই, কবচ-ভাবনার উদ্ভাবকের মত

ট্রেনের সংঘর্ষ ঠেকাতে সক্ষম ‘কবচ’ প্রযুক্তি বসাতে প্রতি কিলোমিটারে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। এ ছাড়াও ট্রেনের লোকোমোটিভে প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসাতে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ।

দুর্ঘটনাস্থলে চলছে লাইন সারানোর কাজ। ছবি:বিনোদ দাস।

দুর্ঘটনাস্থলে চলছে লাইন সারানোর কাজ। ছবি:বিনোদ দাস।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৭:৪২
Share
Save

ইউরোপীয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থার তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ খরচে ‘কবচ’ তৈরি হয় এ দেশে। তবু রেলের আর্থিক সামর্থ্যের বিচারে এই খরচও নেহাত কম নয় বলে মনে করছে প্রাক্তন এবং বর্তমান রেল কর্তাদের একাংশ। বিপুল খরচই সারা দেশে ওই প্রযুক্তির দ্রুত রূপায়ণের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মানছেন ওই সুরক্ষা ব্যবস্থার মূল ভাবনার উদ্ভাবক, কলকাতার প্রযুক্তিবিদ ইন্দ্রনীল মজুমদার।

ট্রেনের সংঘর্ষ ঠেকাতে সক্ষম ওই প্রযুক্তি বসাতে প্রতি কিলোমিটারে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। এ ছাড়াও ট্রেনের লোকোমোটিভে প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসাতে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ।

জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ) এবং আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ডিভাইস) প্রযুক্তির যুগ্ম ব্যবহারে এই সুরক্ষা প্রযুক্তি কাজ করে। এর জন্য রেল লাইনে প্রায় দু’মিটার অন্তর আরএফআইডিরিফ্লেক্টর বসাতে হয়। তাতে প্রতি মুহূর্তে কোনও ট্র্যাকে ছুটে চলা ট্রেনের হদিস পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়াও অসংখ্য কন্ট্রোল রুম, টাওয়ার, বসানোরও প্রয়োজন পড়ে। বিপুল খরচের কারণেই দেশের ৬৭ হাজার কিলোমিটার রেলপথে ওই ব্যবস্থা বসানো ঘোর অনিশ্চিত।

ভারতে দুর্ঘটনা ঠেকাতে কম খরচের কার্যকর প্রযুক্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রনীল। ২০০১ সালে রেলওয়ে ‘কলিশন অ্যাভয়েডেন্স সিস্টেম’-এর নকশা তৈরি করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন তিনি। তাঁর প্রযুক্তিই পরে রেলে ব্যবহারের উদ্যোগ শুরু হয়। কবচ ওই প্রযুক্তিরই ফলিত রূপ। সেফটি ইন্টিগ্রিটি লেভেল ৪ মাত্রার সুরক্ষাযুক্ত ওই প্রযুক্তি প্রায় ১০০ শতাংশ নিরাপদ।

জিপিএস এবং আরএআইডি প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি ইন্দ্রনীলের কৃৎকৌশলের সঙ্গে বিমানবন্দরে উড়ানের ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করার প্রযুক্তির মিল রয়েছে। ওই ব্যবস্থায় ট্রেন তার চারপাশের লাইন এবং কাছের রেল স্টেশন তল্লাটের সম্পূর্ণ মানচিত্র জরিপ করে এবং সেই অনুযায়ী নিজের চলা নিয়ন্ত্রণ করে। ইন্দ্রনীল চান, তাঁর তৈরি প্রযুক্তির মৌলিক ভিত্তিগুলিকে ব্যবহার করেই ট্রেন দুর্ঘটনা ঠেকানোর সমাধান-সূত্র খোঁজা হোক। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা নির্মূল করতে স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবতেই পারি। কিন্তু আপাতত দুর্ঘটনাপ্রবণ অংশগুলি চিহ্নিত করে কম খরচের দাওয়াই জরুরি।’’

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে রেলে সংঘর্ষ এড়াতে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বসানোর কথা সাম্প্রতিক আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু, একাধিক সীমাবদ্ধতার কারণে ২০১২ সালে রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা মূল্যায়ন সংক্রান্ত কমিটি ওই প্রযুক্তি বাতিল করে। জিপিএস নির্ভর ওই প্রযুক্তিতে রেললাইনে ছুটছে এমন কোনও ট্রেনের তিন কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনও ট্রেন সামনে, পিছনে অথবা পাশে চলে আসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে লোকোমোটিভের মধ্যে থাকা স্বয়ংক্রিয় ব্রেকিং ইউনিট সক্রিয় হয়ে ট্রেনের গতি রুদ্ধ করে দেয়। কিন্তু ১০ মিটার পর্যন্ত দূরত্বে নির্ভুল অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জিপিএসের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রেলস্টেশনের মতো জায়গায় যেখানে খুব অল্প পরিসরে একাধিক লাইনে ট্রেন চলে সেখানে বিভিন্ন লাইনে থাকা ট্রেনকে পৃথক ভাবে চেনা মুশকিল। ফলে বার বার ট্রেন থেমে যাওয়ার বা গতি কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিত। ওই সমস্যা থেকেই প্রযুক্তিটি বাতিল করা হয়।

Kanchanjunga Express Accident Indian Railways Kavach System

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}