সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রাথমিক ভাবে মামলা দায়ের করলেন মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
লোকসভার এথিক্স কমিটির প্রস্তাব মেনে মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি যে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন, তা আগেই লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। বাস্তবেও তেমনই ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রাথমিক ভাবে মামলা দায়ের করলেন মহুয়া। শীঘ্রই ওই মামলা শুনানির জন্য শীর্ষ আদালতে তালিকাভুক্ত হতে পারে। মহুয়া বিতর্কে এই ঘটনাকে ‘নতুন মোড়’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
লোকসভায় মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন করা’র অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও বিবিধ অভিযোগ তোলেন। তার ভিত্তিতে বিষয়টির তদন্ত করে লোকসভার এথিক্স কমিটি। সেই তদন্তের রিপোর্ট শুক্রবার লোকসভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে পেশ করেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকর। কিন্তু অনেক আগেই এথিক্স কমিটির একাধিক সদস্য প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন, মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। তারই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে, কী ভাবে এথিক্স কমিটি এক সাংসদকে বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে? সেই এক্তিয়ার সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটি ছাড়া আর কোনও কমিটির নেই। দ্বিতীয়ত, তদন্ত রিপোর্ট গোপন থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা আগেই কী ভাবে সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেল?
সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ আবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত লিখেছেন মহুয়া। তাতে তিনি এথিক্স কমিটির রিপোর্ট এবং তাঁকে বহিষ্কারের প্রস্তাবকে ‘সত্যের বিকৃতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহুয়ার বিরুদ্ধে নগদের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত এবং আইনজীবী জয় দেহাদ্রাই। শেষোক্ত জন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব। সে কথা উল্লেখ করে আবেদনে বহিষ্কৃত সাংসদ লিখেছেন,‘জয়ের উদ্দেশ্য সহজেই অনুমেয়’। নিশিকান্ত ও জয়ের অভিযোগের বয়ান তুলে ধরে আবেদনে মহুয়া দেখাতে চেয়েছেন, তার মধ্যে কতটা ‘পরস্পর বিরোধিতা’ রয়েছে।
পাশাপাশিই, এথিক্স কমিটির তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া। কী ভাবে তাঁকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে শুনানিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে কথারও উল্লেখ রয়েছে মহুয়ার আবেদনে। তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনে এ-ও উল্লেখ করেছেন যে, কী ভাবে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির হলফনামা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে মহুয়ার তরফে। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার তথা দেশের শাসকদলের ধারাবাহিক সমালোচনা করার কারণেই তাঁকে ‘টার্গেট’ করে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার ঔদ্ধত্য’। যা যুক্তি, আইন, এক্তিয়ার সব কিছু লঙ্ঘন করেছে।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ব্যবসায়ী দর্শনের কাছ থেকে উপহার ও টাকা নিয়ে সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নে তিনি আদানির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। সাংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ডও দর্শনকে মহুয়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল নিশিকান্ত এবং জয়ের। মহুয়া অবশ্য ইতিমধ্যে একাধিক বার জানিয়েছেন, বন্ধু দর্শনকে তিনি আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন শুধুমাত্র তাঁর প্রশ্নগুলি ‘টাইপ’ করে দেওয়ার জন্য। কৃষ্ণনগরের বহিষ্কৃত সাংসদের এ-ও দাবি, ওই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা বিধি নেই।
তাঁকে বহিষ্কৃত করার দিন মহুয়াকে সংসদে বলতে দেওয়া হয়নি। ২০০৫ সালে লোকসভার ১০ জন সাংসদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট পেশ করে, তার ভিত্তিতে তাঁদের লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। তৎকালীন স্পিকার তথা অধুনাপ্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, অভিযুক্তদের বলতে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। শুক্রবার বিজেপির পক্ষে বলা হয়েছিল, অতীতে নেওয়া স্পিকারের নির্দেশই মেনে চলা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এথিক্স কমিটির ‘এক্তিয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেছিলেন, এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে যে ভাবে চলে এসেছে, তা কাম্য নয়। তা সংসদের রীতিনীতিরও পরিপন্থী। এথিক্স কমিটি তদন্ত করে কী পেয়েছে, তাদের রিপোর্টে কী রয়েছে বা মহুয়া দোষী হলে কী শাস্তির সুপারিশ তারা করছে, এ সবই গোপন থাকার কথা। কিন্তু মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ অভিযোগে এথিক্স কমিটির তদন্ত রিপোর্ট গোপন ছিল না। সেই সব বিষয়গুলি নিয়েই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মহুয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy