Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রী মমতার অনুরোধেও যাদবপুর থেকে ফিরলেন না রাজ্যপাল ধনখড়

মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাজ্যপাল যে ভাবে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, গোটা ঘটনায় নিজেকে ‘জড়িয়েছেন’ এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন— তাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না নবান্ন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —নিজস্ব চিত্র

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ভট্টাচার্য
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কার্যত সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হল।

মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাজ্যপাল যে ভাবে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, গোটা ঘটনায় নিজেকে ‘জড়িয়েছেন’ এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন— তাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না নবান্ন। রাজ্যপালের সাংবিধানিক মর্যাদা রক্ষা করে সরকার মুখে কিছু না বললেও তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় টুইট করে দলের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘রাজ্যপাল দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই যাদবপুরে গিয়েছেন এক জন বিজেপি নেতাকে ‘উদ্ধার’ করতে। তিনি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অনভিপ্রেত মন্তব্য করলেও সেখানে বিজেপি এবং এবিভিপির গুন্ডারা যা করেছে, সে সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি।’

রাজ্যপাল যে যাদবপুর যাচ্ছেন, সে কথা মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন ধনখড় রাজভবন থেকে রওনা দেওয়ার পরে। সূত্রের খবর, এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা কুড়ি মিনিটে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন। মমতা তখন একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় সেই ফোন ধরতে পারেননি। দশ মিনিট পরে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন রাজ্যপালকে। ধনখড় যাদবপুরে যাচ্ছেন জেনে মমতা তাঁকে বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ। রাজ্যপাল সেখানে গেলে তা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে আরও বলেন, বাবুল সুপ্রিয় কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে যাদবপুরে যাননি। গিয়েছেন একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। সেখানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাও রাজনৈতিক। এর মধ্যে রাজ্যপালের উপস্থিতি অভিপ্রেত নয় বলেই তিনি মনে করেন। রাজ্যপাল অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে জানিয়ে দেন, তিনি যাদবপুরে যাচ্ছেন।

রাজ্যপালের ফোন ছেড়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অন্য প্রশাসনিক পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর ৬টা ৩৮ মিনিটে ফের রাজ্যপালকে ফোন করেন তিনি। সূত্রের খবর, আরও এক বার রাজ্যপালকে যাদবপুরে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছুটা সময় চান মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি ধনখড়কে জানান যে, যাদবপুরের ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। সেখানকার ইউনিয়ন বামপন্থীরা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বাবুল সুপ্রিয়কে নিরাপদে বার করে আনার দায়িত্ব যে সরকারের, তা-ও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারেও মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উড়িয়ে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, তিনি যাদবপুরে প্রায় পৌঁছে গিয়েছেন।

সন্ধ্যা ৬টা ৪০-এ আবার রাজ্যপালকে ফোন করেন মমতা। তাঁকে জানান, পুলিশ বাবুল সুপ্রিয়কে বাইরে নিয়ে এলেও তিনি অন্য গেট দিয়ে ফের ক্যাম্পাসে ঢুকেছেন। এই ‘রাজনৈতিক’ টানাপড়েনের মধ্যে না জড়াতে রাজ্যপালকে অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, এই সময় ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, রাজ্যপাল হিসেবে তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তারা ক্যাম্পাসে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুক। মমতা তাঁকে বলেন, উপাচার্য নির্দেশ না দিলে পুলিশের পক্ষে ক্যাম্পাসে ঢোকা সম্ভব নয়। উপাচার্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে কোনও রকম বলপ্রয়োগ তিনি করবেন না।

রাজ্যপাল তখন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে তিনি উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, এ ভাবে কোনও উপাচার্যকে অপসারণ করা যায় না। সুরঞ্জন দাস অত্যন্ত নামী শিক্ষাবিদ। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। এই অবস্থায় রাজ্যপাল ফোন কেটে দেন বলে সূত্রের খবর এবং তার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আর কোনও কথা হয়নি। এ দিন রাজ্যপাল যাদবপুরে যাওয়ার আগেই রাজভবনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের ঘেরাও হওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল মুখ্যসচিব এবং উপাচার্যের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। উপাচার্যকে তিনি বলেছেন যে, এই ঘটনায় অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি ঠিক কাজ করেননি। রাজ্যপাল মনে করেন, এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে বেআইনি ভাবে আটকে রাখাটা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিফলন।’

ঘটনাচক্রে আজ দুপুরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যপালের কিছু কিছু কাজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর। জানা যায় শাহের কাছে মমতা অনুযোগ করেছেন, ধনখড়ের কাছে কোনও পক্ষ যে কোনও অভিযোগ নিয়ে গেলেই তিনি তা ঠিক বলে ধরে নিচ্ছেন এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে কৈফিয়ৎ চাইছেন, বিভিন্ন মন্তব্যও করছেন। এটা অনভিপ্রেত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, এ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন শাহ।

তার কয়েক ঘণ্টা পরেই যাদবপুরকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল-সরকার সম্পর্ক আরও ঘোরাল হয়েছে। রাজ্যপালের কড়া সমালোচনা করে পার্থবাবু বলেছেন, ‘বিজেপি-কে সাহায্য করতে রাজ্যপাল যাদবপুরে গিয়েছিলেন। আমরা তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র বিরোধিতা করি।’ এ দিনের ঘটনা লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির মিছিল থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তৃণমূল মহাসচিব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy