— প্রতীকী চিত্র।
বড়দিন এলেই কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লা ম-ম করে ভ্যানিলা বা স্ট্রবেরির গন্ধে। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন কৃষ্ণনগর-সহ নদিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে পৌষ-মাখানো বড়দিনে খ্রিস্টানপল্লি জুড়ে ভেসে বেড়াত নবান্নের সুঘ্রাণ। চাপড়া, তেহট্ট, মালিয়াপোতা, রানাঘাট মাতাল হয়ে যেত নলেনগুড়ের সুবাসে। জিশুর জন্মদিন চিঁড়ে, মুড়কির সঙ্গে গোকুলপিঠে, ভাজাপুলি বা পাটিসাপটা দিয়েই উদ্যাপন হত। নদিয়াতে খ্রিস্ট উৎসবে কেক এসেছে অনেক পরে।
সাম্প্রতিক কালে বড়দিন আর কেক যেন সমার্থক হয়েছে। তবে জিশুর সঙ্গে কেকের আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। যত দূর জানা যায়, প্রাচীন গ্রিসে প্রথম দুধ, মধু, ময়দা এবং শুকনো ফল দিয়ে তৈরি করা হয় ‘প্লাকাউস’ নামে কেক। এটি ছিল মঙ্গল বা শুভর প্রতীক। তাই নবজাতকের জন্মের পর কেক তৈরি হত। অনুমান, সেই থেকেই জন্মদিনে কেক কাটার প্রচলন পশ্চিমি দুনিয়ায়। জিশুর জন্মদিনে সেই প্রথার অনুসরণে কেকের আগমন। প্রবীণ দিলীপ গোমস্ বলেন, “বাংলার খ্রিস্টভক্তদের কেক খেতে শিখিয়েছে পর্তুগিজেরা। ব্রিটিশেরা নয়। তবে আগে কেবলমাত্র শহরের উচ্চবিত্তদের বাড়িতেই বড়দিনে কেক কাটার চল ছিল। আমাদের এ দিকে, শহর কী গ্রামে, বড়দিনে কেক তৈরি বা খাওয়ার কোনও রেওয়াজই ছিল না। নানারকম পিঠে-পুলি, মালপোয়া দিয়েই বড়দিনের উৎসবে অতিথি আপ্যায়ন করা হত। গ্রামের দিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ পিঠে-পুলির সঙ্গে নতুন ধানের চিঁড়ে এবং নলেনগুড়ের মুড়কি বানাতেন। তখন কোথায় কেক?”
কৃষ্ণনগর মঙ্গলাপুকুরের প্রবীণ বাসিন্দা সমীর স্টিফেন লাহিড়ীর কথায়, কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লায় বড়দিনে ঘরে ঘরে কেকের চল হয় আটের দশকের পরে। তবে তারও আগে মঙ্গলাপুকুরের এক বাসিন্দা ফিলিপ বৈদ্য তাঁর প্রতিবেশীদের চিনিয়ে ছিলেন কেকের স্বাদ। পাঁচের দশকে গ্রামোফোন কোম্পানির চাকুরে ফিলিপ বড়দিনে বাড়ি ফিরতেন ফিরপো, ফ্লুরিজের কেক নিয়ে। বড়দিনের সকালে তা তুলে দিতেন প্রতিবেশীদের হাতে। আর কৃষ্ণনগরে খ্রিস্টান বাড়িতে কেক তৈরির সূচনা করেন জন রোজারিও আটের দশকে। তিনি পাঁচতারা হোটেলের শেফ ছিলেন। সমীর বলেন, “কেক বিষয়টা আমাদের সংস্কৃতির জিনিস নয়। অনেক বিদেশি জিনিসের মতো একেও আমরা গ্রহণ করেছি মাত্র। কিন্তু আমন ধান ওঠার পর বাংলায় বড়দিনের উৎসব পায়েস, পিঠেপুলি ছাড়া অসম্পূর্ণ। বড়দিনে পিঠেপুলি বাধ্যতামূলক।” নারকেলের দুধ, নলেন গুড় আর চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা বড়দিনের বিশেষ পিঠে 'দোদল' অবশ্য এবারও হচ্ছে সমীর স্টিফেন লাহিড়ীর বাড়িতে।
খ্রিস্টান মহল্লার প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, গ্রামের দিকে মালপোয়ার নাম ‘পাকান।’ গ্রামে তখন ঘরে ঘরে দই পাতা হত। বড়দিনের সকালে দই-চিঁড়ে, মুড়কি দিয়ে ফলার খেতেই হত বড়দিনে। দুপুরে দেশি মুরগির ঝোল আর চালের রুটি। এখনও বহু গ্রামীণ খ্রিস্টান পরিবারে বড়দিনে এই মেনু বাধ্যতামূলক। সেদ্ধ পিঠে, চন্দ্রপুলি, ভাজা পিঠে, সরুচাকলি জিশু উৎসবে সে সবই মিলত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসবের প্রচলন কমে আসছে। পরিবর্তে বড়দিনের দিনপাঁচেক আগে থেকেই স্থানীয় বেকারিতে কেক তৈরির জন্য লম্বা লাইন পড়ে যায়।
২৪ তারিখ রাতে, গির্জায় বড়দিনের প্রার্থনা সেরে ফিরে কেক কাটা এবং গোশালার সামনে ঘরোয়া উদ্যাপনে মেতে ওঠেন খ্রিস্ট ভক্তরা। এখন কেক তৈরি হয় না, এমন খ্রিস্টান বাড়ি বিরল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy