Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Shyam Benegal

শুটিংয়ে শ্যাম বেনেগাল, স্মৃতি এখনও জীবন্ত

শ্যাম বেনেগালের প্রয়াণের পর সেই স্মৃতিমেদুরতায় বিভোর রামপুরহাটের বাসিন্দারা।

শ্যাম বেনেগাল।

শ্যাম বেনেগাল। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:২৬
Share: Save:

রামপুরহাটে এক দিনই তাঁকে দেখেছিলেন স্থানীয়রা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন এলাকার নাট্যকর্মী এবং সাংস্কৃতিক কর্মী। ২১ বছর আগে চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালকে সেই এক দিনের দেখা এবং কাজের জায়গায় তাঁর দক্ষতার স্মৃতি এখনও আঁকড়ে বসে আছেন ওই নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীরা। শ্যাম বেনেগালের প্রয়াণের পর সেই স্মৃতিমেদুরতায় বিভোর রামপুরহাটের ওই বাসিন্দারা।

সালটা ছিল ২০০৩। জায়গাটা রামপুরহাট ও নলহাটি রেল স্টেশনের তৎকালীন বর্ধমান সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে সাদীনপুর স্টেশন। বর্তমানের সাদীনপুর রেল স্টেশনের তখনও এতটা আধুনিকীকরণ হয়নি। সে জন্যই একটা ফাঁকা জনহীন প্রান্তের মধ্যে থাকা স্টেশনটিকে তাঁর বিখ্যাত সিনেমা ‘বোস দ্য ফরগটন হিরো’-র একটি ছোট অংশের শুটিংয়ের এর জন্য বেছে নিয়েছিলেন শ্যাম বেনেগাল। সেই দৃশ্যে রামপুরহাটের কয়েকজন নাট্যকর্মীকে সাদীনপুর স্টেশনে ভারতের তেরঙ্গা পতাকা হাতে ট্রেন আটকাতে হয়েছিল।

রামপুরহাট ‘নাইয়া’ নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক অমিতাভ হালদার জানালেন, বর্তমান ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত গোমো স্টেশনে ব্রিটিশরা আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের গ্রেফতার করে ট্রেনে করে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই সেনাদের মুক্ত করতে গ্রামবাসীরা রেললাইনের উপর দৌড়ে ট্রেনটিকে আটকে দখল করে নিয়েছিল। ততদিনে গোমো স্টেশনের অনেক উন্নতি হওয়ায় শুটিংয়ের জন্য সাদীনপুর স্টেশনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। অমিতাভ বলেন, ‘‘সাদীনপুর স্টেশনকে বেছে নেওয়ার কারণ ছিল তার গ্রামীণ চেহারা। শুটিংয়ের জন্য গ্রামের চাষির বেশে ধুতি পরে, মাথায় গামছা বেঁধে, কেউ লাঠি হাতে, কেউ আবার মাথালি মাথায় দিয়ে রেল লাইনের ট্রেন দখলের অভিনয় করেছিলেন।’’

সেই অভিনয়ের দলেই ছিলেন রামপুরহাটের আর এক নাট্যকর্মী তথা প্রাক্তন শিক্ষিকা বন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় গুহ। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি জানালেন, সাদীনপুর স্টেশনে একটা অংশের শুটিংয়ের জন্য শ্যাম বেনেগাল বার কয়েক শট নিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেন একই দৃশ্য বারবার করা হচ্ছে তাই নিয়েও প্রশ্ন জেগেছিল। দেখেছিলাম, রেল লাইনে যাঁরা ট্রেন দখলের অভিনয় করছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট হাতে নিয়েছিলেন। ক্যামেরায় সেই ছবি দেখতে পাওয়ার পরেই শ্যাম বেনেগালকে বলতে শুনেছিলাম, যে সময়ের ছবি শুটিং করা হচ্ছে সেই সময় তো প্লাস্টিকের প্যাকেটের প্রচলন ছিল না। সেই কারণে উনি ফের আর একবার নতুন করে শুটিং করেন।’’ বন্দনার কথায়, ‘‘তখনই বুঝেছিলাম কেন উনি এত বড় মাপের পরিচালক।’’

সেই স্মৃতি মনে রয়েছে আরও দুই নাট্যকর্মী অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় এবং অবোধ রামের। তাঁরা বললেন, ‘‘বিশেষ ট্রেনের কামরায় চাপিয়ে রামপুরহাট থেকে সাদীনপুর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। খালি পায়ে ধুতি পরে চাষির বেশে রেললাইনে পাথরের উপর দিয়ে দৌড়তে হয়েছিল।’’ তাঁরা জানান, সেই সময় এক বার বিশেষ ট্রেনটিতে লেখা ‘সত্যমেব জয়তে’ শ্যাম বেনেগালের নজরে পড়ে যায়। সেই লেখা কালি দিয়ে ঢেকে আবার শুটিং করতে হয়েছিল। তাঁদের কথায়, ‘‘নিজের চোখে এত সূক্ষ কাজের মাধ্যমেই শ্যাম বেনেগালের দক্ষতার পরিচয় পেয়েছিলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shyam Benegal memories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy