Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বিয়ে তো হল, বদলা নেবে না তো

মেলাল, পুলিশ মেলাল! বাড়ির রাঙা চোখ, জাতপাতের ধুয়ো ফুৎকারে উড়িয়ে মধুরেণ সমাপয়েৎ হল। চার হাত এক হয়ে গেল করিমপুরের যুগলের। সৌজন্যে, হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ।

শেষতক বিয়ে হল।—নিজস্ব চিত্র।

শেষতক বিয়ে হল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:৩৮
Share: Save:

মেলাল, পুলিশ মেলাল!

বাড়ির রাঙা চোখ, জাতপাতের ধুয়ো ফুৎকারে উড়িয়ে মধুরেণ সমাপয়েৎ হল। চার হাত এক হয়ে গেল করিমপুরের যুগলের। সৌজন্যে, হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে থানা থেকে মানিক দাস ও অনন্যা প্রামাণিককে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও পুরুত ডেকে শুভকাজ সুসম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকালে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ওই যুগলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ পাশে না দাঁড়ালে এই বিয়ে হত না। পুলিশের কাছে আমরা সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’’

নদিয়ার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নাবালিকা হলে পুলিশই তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিত। কিন্তু এক্ষেত্রে তো ওঁরা দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁরা বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে বাধা পেয়ে থানায় এসেছিলেন। পুলিশ তাঁদের সেই ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়েছে।’’

তবে এত কিছুর পরেও আতঙ্ক কাটছে না সদ্য বিবাহিত ওই দম্পতির। মানিক বলছেন, ‘‘দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমার পরিবারের কথা ভেবে। আমাদের লোকবল, অর্থবল কোনওটাই নেই। অনন্যার পরিবার থেকে নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয় হচ্ছে ওরা যদি অন্য কোনও ভাবে বদলা নেয়।’’

নদিয়া জেলা পুলিশ সুপারের আশ্বাস, ‘‘নবদম্পতি কিংবা ওই যুবক ও তাঁর পরিবারকে কোনওরকম হুমকি দেওয়া হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’

তবে অনন্যার এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘এ সব করে আর লাভ কী বলুন। যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। এখন তো ওরা স্বামী-স্ত্রী। তা ছাড়া পুলিশ যে ভাবে ওদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে কিছু করতে গেলেই হিতে বিপরীত হয়ে যেতে কতক্ষণ!’’ মানিকের আত্মীয়-স্বজনেরা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিয়েতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।

মানিক ছাত্র পড়ান। অনন্যা বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ফেসবুকের সৌজন্যে বছর খানেক আগে পরিচয় হয়েছিল দু’জনের। তারপর প্রেম থেকে পরিণয়। কিন্তু এই উত্তরণের ধাপগুলো তাঁদের কাছএ মোটেই মসৃণ ছিল না। সম্পর্কের কথা জানতে পেরে বেঁকে বসেন অনন্যার পরিবার। তাঁদের আপত্তির অন্যতম কারণ ছিল —জাতপাত। শেষ পর্যন্ত দু’জনেই ঠিক করে ফেলেন, বাড়ি থেকে পালাবেন। সেই মতো সাতসকালে মানিক ও অনন্যা চলে আসেন হোগলবেড়িয়া থানায়। পুলিশকে তাঁরা ঘটনার কথা বুঝিয়ে বলে সাহায্য চান। পুলিশ অবশ্য প্রথমে আতান্তরে পড়ে যায়। পরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘থানায় বসিয়ে রেখে তো আর নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। তাই ওদেরকে বুঝিয়ে বলা হয় কোথায় ওরা নিরাপদ থাকবে। তাঁদের কথা মতো পাঠিয়ে দেওয়া হয় মানিকের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই পুরোহিত ও রেজিস্ট্রার ডেকে তাঁরা বিয়ে করেছেন।’’ নবদম্পতির কথায়, ‘‘এ তো জরুরি তৎপরতায় বিয়ে হল। তাই সে ভাবে কিছুই আয়োজন করা যায়নি। তবুও যে বিয়ে হল সেটাই অনেক বড় কথা।’’

এ দিন মানিক-অনন্যার বিয়ে করতে চেয়ে থানায় যাওয়ার বিষয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কলেজ পড়ুয়া এক তরুণী জানিয়েছেন, ‘‘এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। বড়রা যদি এটা থেকে শিক্ষা নেয়! মেয়েটি তো বাড়িতে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিল। কিন্তু মেয়ের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে এ ভাবে আটকে রেখে কিছু হয় না কি! আমি মেয়েটির সাহস ও পদক্ষেপকে সমর্থন করছি।’’ অন্য দিকে এক অভিভাবক আবার উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘এমনটা হলে তো খুবই মুশকিল। নিজের মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে বাবা-মা কোনও কথা বললে মেয়ে থানায় চলে যাবে?’’

হোগলবেড়িয়া থানার এক পুলিশকর্মী অবশ্য হাসছেন, ‘‘ধন্যি ছেলে-মেয়ে বাবা। যাইহোক নিজেদের মনের মানুষকে পেয়ে ওরা খুশি। আমরাও খুশি সব ভালই ভালই মিটল বলে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE