উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান? রায়গঞ্জে জেলা কমিটির দফতরে গিয়ে বীরেশ্বর লাহিড়ীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন? নিমতৌড়ির জেলা দফতরে কানু সাহুর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
যাঁরা খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা হয়তো জানবেন রায়গঞ্জে গিয়ে বীরেশ্বরবাবু বা তমলুকে কানুবাবুর দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। বেশ কিছু দিন আগেই তাঁরা সিপিএমের জেলা কমিটি তো বটেই, ইহজগতেরও মায়া কাটিয়েছেন! তবু সিপিএম তাঁদের ধরে রেখেছে! দলের রাজ্য কমিটির ওয়েবসাইট এখনও জানাচ্ছে, বীরেশ্বর বা কানুবাবুরাই জেলা সম্পাদক। সাইটের ‘কনটাক্ট’ অংশে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের কথাই বলা হয়েছে।
একটু ভুল হল অবশ্য! আসলে বলা ‘হয়েছিল’। আনন্দবাজারের তরফে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতেই বুধবার রাতে দ্রুত ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে সেই পেজ! ভুল মেনে নিয়েই দ্রুত শুধরে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। বলা যেতে পারে, ওয়েবসাইটের বাঁধন থেকেও মুক্তি পেয়েছেন প্রয়াত বীরেশ্বরবাবুরা!
ভুল সংশোধনে দ্রুত তৎপরতা শুরু হলেও এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই। দলের রাজ্য সম্মেলন হয়ে গিয়েছে গত মার্চ মাসে। তারও আগে মিটে গিয়েছে জেলা সম্মেলন-পর্ব। সেই সম্মেলন-পর্বেই এক ঝাঁক জেলা সম্পাদক পদে মুখ পরিবর্তন করেছিল সিপিএম। অথচ এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ৮-৯ মাস পরেও কেন জেলা নেতৃত্বের তালিকা সিপিএমের রাজ্য কমিটি ‘আপডেট’ করেনি, ভেবে বিস্মিত দলেরই তরুণ অংশ! আধুনিক প্রজন্মের মানুষ এখন ই-মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়েব-চাহিদা সামলাতে রাজ্য সিপিএমের বিশেষ শাখাও আছে এখন। তার পরেও অতীত কেন জাঁকিয়ে বসে থাকল ই-মাধ্যমে, তার কোনও জাগতিক ব্যাখ্যা সত্যিই নেই!
রাতে তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আগে রাজ্য কমিটির ওয়েবসাইট জানাচ্ছিল, সিপিএমের বাঁকুডা জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। বর্ধমানের সম্পাদক অমল হালদার। বীরভূমে দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়, পশ্চিম মেদিনীপুরে দীপক সরকার, দক্ষিণ দিনাজপুরে মানবেশ চৌধুরী বা কলকাতায় রঘুনাথ কুশারীরাই এখনও দায়িত্বে! অথচ জেলা সম্পাদক হিসাবে এঁদের সকলেরই ইনিংস ফুরিয়ে গিয়েছে চলতি বছরের গোড়ায়। এখনও তাঁদের নাম যে দলের সাইটেই সম্পাদক হিসাবে থাকছে, জেনে তাঁরা লজ্জিতই হয়েছেন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয়বাবু যেমন বলছেন, ‘‘এ বাবা! তাই নাকি? এটা অবশ্যই ঠিক করে দেওয়া হবে!’’
ওই সাইটেই রাজ্য সম্পাদকের ডেস্ক নামে আলাদা বিভাগ আছে। সেখানে কিন্তু রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রই। বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের প্রয়াণ ও শেষযাত্রার সংবাদও গুছিয়ে পরিবেশন করা আছে। তা হলে জেলার নেতৃত্বের তালিকাতেই অতীতে বসবাস কেন? দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্য দফতরের তরফে নিয়মিত যাঁরা সাইট আপডেট করেন, তাঁদের ওই অংশটায় সচরাচর ঢুকতে হয় না। তাই চোখের আড়ালেই থেকে গিয়েছিল এমন ভ্রান্তিবিলাস! ভুল চিহ্নিত হতেই নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে ওয়েব সংক্রান্ত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এটা ভুল হয়েছে, একেবারে ভুল! দেখব যাতে খুব তাড়াতাড়ি ওই ভুল ঠিক করে দেওয়া যায়।’’ কথাকে কাজে পরিণত করার চেষ্টায় বিলম্ব করেননি শ্রীদীপবাবু। যদিও দলেরই এক তরুণ নেতার মন্তব্য, ‘‘দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে বেশি নজর দিতে গেলে অন্য দিকে নজর একটু কমে যাবেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy