(বাঁ দিকে) শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং (ডান দিকে) অয়ন শীল। —ফাইল চিত্র।
স্কুলের পরে রাজ্য জুড়ে পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। এ বার পঞ্চায়েতে নিয়োগের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করল আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি হুগলি জেলায় পঞ্চায়েত স্তরে গত প্রায় ১০ বছরে হওয়া নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ওই জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে চেয়েছে ইডি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় হুগলি থেকে গ্রেফতার হওয়া অয়ন শীল ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ ছিল পঞ্চায়েতের সঙ্গে। মূলত সেই কারণেই এই তথ্য তলব।
কিছুদিন আগেই এই নিয়োগ-তথ্য চেয়ে পাঠানো চিঠি হুগলি জেলা প্রশাসনের কাছে এসেছে বলে খবর। সূত্রের দাবি, জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, তারা যেন ২০১৪ সাল থেকে পঞ্চায়েতে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনার নথি ইডি-র কাছে পাঠায়। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার অবশ্য বলেন, “ওরা (ইডি) জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু তথ্য চেয়েছে। জেলা থেকেই তার উত্তর দেওয়া হবে। তথ্য চাওয়া মানেই যে অপরাধ হয়েছে, তা নয়। আমরা উৎসাহিত নই, উদ্বেগেও নেই।’’
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অয়ন শীল হুগলির বাসিন্দা। প্রথম দু’জন ছিলেন তৃণমূলের যুবনেতা (এখন বহিষ্কৃত)। শুধু তা-ই নয়, শান্তনু ছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য-কর্মাধ্যক্ষও। পঞ্চায়েত-যোগ ছিলেন অয়নেরও।
জেলা প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৭-১৮ সাল নাগাদ অয়ন পাণ্ডুয়া ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের এগ্জিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন। ঘটনাচক্রে, তার কাছাকাছি সময়েই পঞ্চায়েতের একটি নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়ছিল। ইডি সূত্রের খবর, গ্রেফতারির পরে অয়নের কাছে ২০১৪ সাল থেকে হওয়া নিয়োগের নানা নথি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্রে পঞ্চায়েতে নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু সন্দেহ দানা বেঁধেছে তাঁদের মধ্যে। সেই কারণেই ওই সময় থেকে নিয়োগ-নথি চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। এবং এখনও পর্যন্ত শুধু হুগলি জেলা প্রশাসনই ইডি-র এমন বার্তা পেয়েছে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এমনিতেই পঞ্চায়েত স্তরে নানা ধরনের অভিযোগ তুলে শাসক শিবিরকে নিয়মিত বিঁধছেন বিরোধীরা। এই সব অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকাও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। রাজ্য প্রশাসনের তরফে ‘ত্রুটি’ সংশোধনের বার্তা বারবার দেওয়া হলেও, পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামীণ ভোটারদের উপরে এ সবের প্রভাব কতটা পড়বে, তা নিয়ে কার্যত খানিকটা অস্বস্তিতে রাজ্যও। এই অবস্থায় এ বার পঞ্চায়েতে নিয়োগ নিয়ে তথ্য চাওয়াকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে পুর-নিয়োগে গরমিলের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার পরে এখন পঞ্চায়েতে নিয়োগে তথ্য চেয়ে পাঠানোর জল কত দূর গড়ায়, সে দিকে নজর থাকবে সব পক্ষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy