বৃহস্পতিবার কটকের হাসপাতাল থেকেই গ্রেফতার করা হয় ভানু, তাঁর ছেলে ও ভাইপোকে। নিজস্ব চিত্র।
অনুষ্ঠানবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গুরুতর জখম হয়েছেন। এ কথা বলেই ওড়িশার কটকের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল এগরার বিস্ফোরণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানুকে। কটকের রুদ্র হাসপাতাল সূত্রেই এ কথা জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতাল থেকেই গ্রেফতার করা হয় ভানু, তাঁর ছেলে ও ভাইপোকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ২টো নাগাদ সেখানে নিয়ে আসা হয় গুরুতর জখম এক ব্যক্তিকে। কলাপাতায় মোড়া শরীর। মাথা, বুক, কোমর থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ দগ্ধ। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে। স্ট্রেচারে শোয়ানো ওই ব্যক্তিকে দেখে চিকিৎসকেরা জানতে চান, কী ভাবে এমনটা হল? জানানো হয়, অনুষ্ঠানবাড়িতে রান্নার কাজে তদারকি করার সময় গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে জখম হয়েছেন তিনি। শুরু হয় চিকিৎসা। এর পর বৃহস্পতিবার যখন ওই ব্যক্তিকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয়, তখনই কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন তাঁর আসল পরিচয়।
এগরার বেআইনি বাজি কারখানায় মঙ্গলবার দুপুরে বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনায় আট জন মারা গিয়েছেন। গুরুতর জখম হন আরও অনেকে। বিস্ফোরণের পর থেকেই পলাতক ছিলেন কারখানার মালিক ভানু। বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেফতারের পর জানা যায়, বিস্ফোরণের পর ভানুকে দগ্ধ অবস্থায় ওড়িশায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভর্তি করানো হয়েছিল কটকের রুদ্র হাসপাতালে।
ওই হাসপাতাল সূত্রেও জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ২টো নাগাদ ভানুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর ছেলে এবং ভাইপো। নিয়ম হল, গুরুতর জখম অবস্থায় কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর নাম-পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী ভাবে জখম হয়েছেন, সেই ব্যাপারেও খোঁজখবর করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ভানুর ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়। তাঁর আত্মীয়েরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁদের বাড়ি ওড়িশার বালেশ্বরে। পরিচয়পত্র হিসাবে একটি আধার কার্ডও দেখানো হয়। তাতে বালেশ্বরেরই ঠিকানা ছিল। পাশাপাশিই জানানো হয়, স্থানীয় একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার তদারকি করছিলেন ভানু। সেই সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনি জখম হয়েছেন। এর পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা শুরু করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যত্র প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েই মঙ্গলবার রাতে ভানুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তার পর থেকে কোনও আত্মীয়ই তাঁকে দেখতে আসেননি। এতে কিছুটা সন্দেহ হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় কটক সদর থানায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি শুনে খোঁজখবর করা শুরু করে পুলিশ। আধার কার্ডে উল্লিখিত ঠিকানাতেও যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কিছুই মেলেনি। এতেই পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে।
এগরার ঘটনা নিয়ে বুধবার গোটা দিন ধরেই চাপান-উতোর চলেছে রাজ্যে। বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে সেখানে। গিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। তা নিয়ে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে এলাকায়। একে একে ফরেন্সিক দল, বম্ব ডিসপোজ়াল দল এবং ডগ স্কোয়াড গিয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে এগরার যে এলাকা আপাতত বাংলার রাজনীতির কার্যত ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, সেই খাদিকুল গ্রামটি ওড়িশা সীমানার খুব আছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, খাদিকুলে বিস্ফোরণের ঘটনার যে ভাবে আলোড়ন তৈরি হয়েছে, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই সেই খবর ওড়িশায় পৌঁছেছে। চর্চা হয়েছে মূল অভিযুক্তের পড়শি রাজ্যে পালিয়ে যাওয়া নিয়েও। মধ্যরাতে ভানুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, তাঁর বালেশ্বরের ঠিকানা সংক্রান্ত বয়ানে অসঙ্গতি ইত্যাদি বিষয় বিচার করেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওড়িশার পুলিশ।
বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই খাদিকুলের স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছিলেন, ভানু ওড়িশায় পালিয়ে গিয়েছেন। কারণ, এগরার সাহাড়া গ্রামের ঠিক উল্টো দিকে ওড়িশার সিয়ারি গ্রাম-পঞ্চায়েতের উলগাহাট গ্রাম। দুই রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগের জন্য কয়েকশো মিটার চওড়া কংক্রিটের রাস্তা রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার ‘সুবাদে’ তা একেবারে অরক্ষিত থাকে। আন্তঃরাজ্য সীমানা হলেও থাকে না কোনও রকম পুলিশের টহলদারি। এলাকাবাসীর অনুমান, ভানুকে সেই রাস্তা দিয়েই ওড়িশায় নিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন ওড়িশা। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, এই বিষয়টি তদন্তকারীদের নজরে ছিল। তার মধ্যেই যোগাযোগ করে ওড়িশার পুলিশ। তাতেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। খবর পেয়েই রুদ্র হাসপাতালে হাজির হয়ে ভানু-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওড়িশার হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন ভানু। সেখানে তাঁকে কলাপাতায় মুড়ে রাখা হয়েছে। ভানুর শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁরা স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়নি। আপাতত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকবেন। তবে ওড়িশার পুলিশ তাঁকে কড়া নজরদারিতে রাখবে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy