বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মনোজ লাহিড়ী প্রয়াত। —ফাইল ছবি।
প্রয়াত হলেন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মনোজ লাহিড়ী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো নাগাদ উত্তর কলকাতার সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতেই মারা যান তিনি। মনোজের স্ত্রী আগেই প্রয়াত হয়েছেন। তিনি রেখে গিয়েছেন পুত্র সুপর্ণ লাহিড়ী এবং কন্যা জাচ্না লাহিড়ীকে।
পুত্র সুপর্ণ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা বছর কয়েক ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১০ মাস তিনি বিছানা থেকেও উঠতে পারেননি। সুপর্ণের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার দুপুরে বাবা বেশ অসুস্থ বোধ করেন। তার পরেই সব শেষ। চিকিৎসক আমাদের জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ থেকেই মৃত্যু হয়েছে বাবার।’’
প্রায় ১৩৪ বছর ধরে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা প্রকাশিত হয়। বহু বছর ধরেই ‘অ্যাস্ট্রো রিসার্চ ব্যুরো’ প্রকাশিত এই পঞ্জিকার সম্পাদক-প্রকাশক ছিলেন মনোজ। তবে কয়েক বছর ধরে পুত্র সুপর্ণ প্রকাশকের দায়িত্ব সামলাতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মাধবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামে এক প্রযুক্তিবিদ লক্ষ করেন, সেই সময়ে প্রচলিত বাংলা পঞ্জিকার তিথি-নক্ষত্রের সময়ের সঙ্গে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের প্রকৃত সময়ের কিছু হেরফের ঘটছে। তিনি অঙ্ক কষে দেখেন, বহু বছর আগে লেখা যে ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থের নিয়ম মেনে সে যুগের পঞ্জিকাগুলি গণনা করে, তা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলে না, তাই ওই সময়ের হেরফের। ওই গণনায় কিছু সংশোধন করে তিনি নতুন সময় বার করলেন। সেই সময়ে কোনও এক গ্রহণের দিন প্রচলিত পঞ্জিকাগুলির দেওয়া সময়ের সঙ্গে গ্রহণের প্রকৃত সময়ের গরমিল হল এবং মাধবচন্দ্রের সিদ্ধান্ত ঠিক বলে প্রমাণিত হয়। ওই সাফল্যের পরে মদনমোহন মালব্য, বালগঙ্গাধর তিলক, চন্দ্রশেখর সিংহ, মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন, শশধর তর্কচূড়ামণি প্রমুখ পণ্ডিতের পরামর্শে মাধবচন্দ্র ১২৯৭ বঙ্গাব্দে (১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ) বিজ্ঞানসম্মত গণনাভিত্তিক দৃক্সিদ্ধ ‘বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা’ প্রকাশ করেন।
পরে ‘বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা’ চালাবার ভার নেন নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী। তিনি গণিতবিদ ছিলেন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দে তিনি পুত্র অরুণকুমার লাহিড়ীকে সঙ্গে নিয়ে ১৭ বৃন্দাবন মল্লিক ফার্স্ট লেনে ‘অ্যাস্ট্রো রিসার্চ ব্যুরো’ নামে এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ষষ্ঠীচরণ জ্যোতির্ভূষণের সহায়তায় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রকাশনার ভার গ্রহণ করলেন। এখনও সেখানেই রয়েছে পঞ্জিকার কার্যালয়। বাংলা ভাষায় যে কয়েকটি ‘বড়’ পঞ্জিকা রয়েছে তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্তই একমাত্র দৃক্সিদ্ধ মত অনুসারী। মনোজ এই লাহিড়ী পরিবারেরই সদস্য ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy