Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কাক-শিল্পী যেন গেছোদাদা, ভ্যানিশ কবুতরও

তিনিও নেই, তাঁর ছবিও নেই। কোথায় গেলেন? গোয়েন্দাদের দাবি, কাক্কেশ্বর-এর ছবি আঁকতে সিদ্ধহস্ত শিল্পীর সঙ্গে এখন গেছোদাদার মিলই বেশি! কোথায় আছেন আর কোথায় নেই, বলা ভারী শক্ত। চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর হদিস পেতে আপাতত তাই হিমশিম খাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সোমবার জেরার জন্য ইডি-র জরুরি তলব গিয়েছিল শিল্পীর কাছে। তিনি সাড়া দেননি। মঙ্গলবার দিনভর কোথায় কোথায় তিনি থাকতে পারেন, ঠাহর করতেই তদন্তকারীদের ঘাম ছুটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৪:২৪
Share: Save:

তিনিও নেই, তাঁর ছবিও নেই।

কোথায় গেলেন? গোয়েন্দাদের দাবি, কাক্কেশ্বর-এর ছবি আঁকতে সিদ্ধহস্ত শিল্পীর সঙ্গে এখন গেছোদাদার মিলই বেশি! কোথায় আছেন আর কোথায় নেই, বলা ভারী শক্ত।

চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর হদিস পেতে আপাতত তাই হিমশিম খাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সোমবার জেরার জন্য ইডি-র জরুরি তলব গিয়েছিল শিল্পীর কাছে। তিনি সাড়া দেননি। মঙ্গলবার দিনভর কোথায় কোথায় তিনি থাকতে পারেন, ঠাহর করতেই তদন্তকারীদের ঘাম ছুটেছে।

শিল্পীর খোঁজ তো মেলেইনি, হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছে লালবাজারের দেওয়াল থেকে তাঁর আঁকা ছবিও। কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে ভিজিটর্স রুমে ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যেত নীল-সাদা রংয়ে আঁকা পায়রা। ছবিটা এখন সেখানে নেই।

চিত্রকর আছেন কি?

সল্টলেকের যে বাড়িতে শুভাপ্রসন্ন সাধারণত থাকেন, সেখানে তাঁর হদিস পাননি তদন্তকারীরা। সল্টলেকের একটি প্রেক্ষাগৃহে যোগধ্যান সংক্রান্ত একটি সান্ধ্য অনুষ্ঠানে শুভাপ্রসন্নর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সেখানে তিনি যাননি। সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেছিল আনন্দবাজারও। উপরের বারান্দার দরজা খুলে শিল্পীর স্ত্রী শিপ্রা ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, ‘‘উনি বাড়িতে নেই।’’ কখন ফিরবেন? উত্তর ছাড়াই সজোরে বন্ধ হয়ে যায় দরজা।

তার আগে মঙ্গলবার দিনভর শুভাপ্রসন্নর খোঁজ পেতে ইডি কখনও ছুটেছে ভাঙড়ের আর্টস একরে, কখনও বা শিল্পীর রায়চকের বাড়িতে। ঢুঁ মেরে বেড়ানোই সার, খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁদের। শিল্পীকে ফোনেও পাওয়া যায়নি। মোবাইলে ফোন করলেই কখনও সুইচড অফ বলে জানা যাচ্ছে। কখনও বা বেজে বেজে থেমে গিয়েছে, কেউ ধরেননি। এসএমএস করলেও জবাব আসেনি। ইডি সূত্রের খবর, শিল্পীকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি তদন্তকারীরাও। তবে সূত্রের খবর, ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখে ইডি-র অনুমান, ফোনটি সল্টলেক এলাকাতেই রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শুভাবাবু ফোনটি বাড়িতে রেখে গিয়েছেন বলেই তদন্তকারীদের সন্দেহ।

হযবরল-র গেছোদাদা কোথায় আছেন উলুবেড়ে, মোতিহারি না কাশিমবাজার সেটা আঁক কষে বুঝতে হতো। শুভাপ্রসন্নর সম্ভাব্য গতিবিধি বুঝতে গোয়েন্দাদের কোনও অঙ্কই এ দিন আপাত ভাবে কাজ করেনি। এই অবস্থায় মঙ্গলবার শিল্পীর আরও দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করে দিয়েছেন গোয়েন্দারা। শিল্পীর ২৪টি স্থায়ী আমানত ও আরও দু’টি সেভিংস অ্যাকাউন্ট আগেই ‘সিল’ করা হয়েছিল। এর পরেও শিল্পী ইডি-র দফতরে হাজিরা না-দিলে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুলিয়া জারি হতে পারে বলেও ইডি সূত্রের খবর।

দেবকৃপা ব্যাপার প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার অধীনে ‘এখন সময়’ নামে একটি চ্যানেল সারদা-গোষ্ঠীকে বিক্রির বিষয়ে শুভাপ্রসন্নবাবুর দেওয়া তথ্যে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তার পর থেকেই শিল্পী ইডি-র নজরে রয়েছেন। শুভাপ্রসন্নবাবুর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তর দামি আসবাব, শিল্পসামগ্রী, ছবি, ক্যামেরা ইত্যাদির হদিস পান গোয়েন্দারা। শিল্পীর মেয়ের নামে কয়েকটি ফ্ল্যাটের হদিস পাওয়া গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। সোমবার শুভাপ্রসন্নবাবুকে জরুরি তলব করে ওই বিষয়ে তথ্য পেশ করতে বলা হয়। কিন্তু তাঁর নাগাল মিলছে না।

গত কিছুদিন যাবৎ মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর একদা-ঘনিষ্ঠ এই চিত্রশিল্পীর পাশে দাঁড়ানো বন্ধ করেছেন। এ মাসের ৫ তারিখ পৈলানের দলীয় সম্মেলনের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলে দেন, ‘‘আমি ওকে সাপোর্ট করছি না।” গত শনিবার দলের কর্মিসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে শুভাপ্রসন্নের নামটাও ভুলে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বলেন, ‘শিল্পী শুভা’কে চিনলেও ব্যবসায়ী শুভাপ্রসন্ন কী করেছেন, না-করেছেন তার দায় তাঁর নয়।

এর দু’দিন পর থেকেই শিল্পী ‘ভ্যানিশ’। সরে গিয়েছে তাঁর আঁকা ছবিটিও। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ঝেড়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করতেই কি লালবাজারের দেয়াল থেকে উড়ে গেল শুভার পায়রা?

পুলিশের অন্দরের খবর তেমনই। যদিও প্রকাশ্যে বিষয়টি মানতে চাননি লালবাজারের কর্তারা। তাঁদের মতে ছবি সরানোর সঙ্গে সারদা মামলায় শুভার নাম জড়ানোর কোনও সম্পর্ক নেই। তা হলে ছবিটা তড়িঘড়ি সরানো হল কেন? মৃদু হেসে মুখ নামিয়ে নেন অফিসার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE