Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Bibhas Adhikari

কৈলাসের নাম এল নিয়োগ তদন্তে, বিজয়বর্গীয়ের ঘনিষ্ঠ বলেই তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে, দাবি বিভাসের

বিভাসের দাবি, এক সময় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি থাকলেও বর্তমানে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর এখন একটাই পরিচয়, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্ট্রাল অয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন’-এর ডিরেক্টর।

Due to my good relation with BJP leader Kailash Vijayvargiya everyone tries to link me with recruitment scam, says Bibhas Adhikari.

কৈলাস বিজয়বর্গীয় (বাঁ দিকে) এবং বিভাস অধিকারী। ফাইল চিত্র ।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫০
Share: Save:

বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে তাঁর ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে। তাই সুভাষকে ধরে বাঁচতে চাইছেন তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষরা। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে এমনই দাবি করলেন দুর্নীতির ‘নতুন’ চরিত্র তথা নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি বিভাস অধিকারী।

২০১৯ সালের আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পর্যবেক্ষক ছিলেন কৈলাস। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে ঘন ঘন রাজ্যে দেখা যেত পদ্মের হয়ে প্রচারে। নীল বাড়ির লড়াইয়ে বিজেপি ধরাশায়ী হওয়ার পর আর ওই পদে নেই কৈলাস। নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো বিভাসের একটি মন্তব্যে আবার চর্চায় এলেন কৈলাস।

নিয়োগ দুর্নীতির চরিত্র হিসাবে বিভাসকে খুব ‘নতুন’ও বলা যায় না। কারণ, কিছু সময়ের ব্যবধানে কয়েক বার তাঁর নাম উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়, আবার চাপাও পড়েছে। আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত তাপস আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন তাঁর নাম। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, তৃণমূল নেতা বিভাসের কথাতেই মানিকের ছেলের সংস্থায় টাকা দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি এই মামলায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলের মুখেও উঠে এসেছে তাঁর নাম। কুন্তল দাবি করেছেন, তাপসের মতো বিভাসও এক জন ‘এজেন্ট’। বিভাসের নাম করেছেন গোপাল দলপতিও। কিন্তু সেই বিভাসের দাবি, তিনি কোনও দুর্নীতিতে যুক্ত নন। কুন্তল কিংবা দলপতির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গেও তিনি জড়িত নন।

তা হলে কেন তাঁর নাম বার বার নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্তদের মুখে শোনা যাচ্ছে? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় বিভাসের যুক্তি, তাঁর সঙ্গে ‘ভাল সম্পর্ক’ রয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গে প্রাক্তন বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাসের। আর তাতেই নাকি অনেকের ‘চোখ টাটিয়েছে’। অনেকে নাকি তাঁর সঙ্গে কৈলাসের ‘সুসম্পর্ক’-এর সুযোগ নিতেও চাইছেন। অন্তত এমনটাই যুক্তি দিয়েছেন বিভাস। তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতির কথায়, ‘‘আমার নাম দুর্নীতিতে জড়িয়ে অনেকেই বাঁচতে চাইছেন। আমার সঙ্গে কৈলাসজির সম্পর্ক ভাল। তাই অনেকের ধারণা আমার নাম জড়িয়ে দিলে কৈলাসজি আমাকে বাঁচাবেন, আর সেই সুবাদে তাঁরাও বেঁচে যাবেন।’’ পাশাপাশি তৃণমূল ত্যাগ করার কারণে কিছু মানুষ তাঁর নাম জড়িয়ে মজা দেখতে চাইছেন বলেও বিভাস দাবি করেছেন।

কিন্তু কতটা সুসম্পর্ক রয়েছে কৈলাস এবং বিভাসের? কী সূত্রেই বা কৈলাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি? বীরভূমের নলহাটিতে বিভাসের একটি ধর্মীয় আশ্রম রয়েছে। সেই আশ্রমের সূত্রেই কৈলাস এবং তিনি গাঁথা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভাস।

বিভাসের কথায়, ‘‘আমার আশ্রমে কৈলাসজি তিন-চার বার গিয়েছেন। উনি আশ্রমের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি যখন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলাম তখনও তিনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন।’’

Bibhas Adhikari's statement on recruitment camp

বিভাস অধিকারীর আশ্রমে কৈলাস বিজয়বর্গীয়। ছবি: সংগৃহীত।

বিভাসের দাবি, এক সময় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি থাকলেও বর্তমানে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর এখন একটাই পরিচয়, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্ট্রাল অয়্যারহাউসিং কর্পোরেশন’-এর ডিরেক্টর। ২০২০ থেকে তিনি এই পদে বহাল রয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি যখন তৃণমূল করতেন, তখনও তাঁর এই পদ নিয়ে দলের অন্দরে কারও অসুবিধা হয়নি। আবার তিনি তৃণমূল করতেন বলে কৈলাসও তাঁকে কিছু বলেননি বলে তাঁর দাবি। বিভাস বলেন, ‘‘কৈলাসজি বলেননি যে, বিজেপি করতে হবে। তৃণমূলও বলেনি যে ওই চাকরি করতে পারব না।’’

তৃণমূল ছেড়ে দেওয়ার পর কৈলাসের সঙ্গে সুসম্পর্কের জন্য তা হলে কি তিনি বিজেপিতে যোগদান করবেন? উত্তরে সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলত্যাগী বিভাস। সক্রিয় ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না বলেই স্পষ্ট করেছেন তিনি। বিভাসের কথায়, ‘‘আমি সক্রিয় রাজনীতি করব না। শুধু ঠাকুর নিয়ে থাকব। মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’’

পার্থের সঙ্গে বিভাসের ‘মধুর’ সম্পর্ক বলেও জনশ্রুতি বীরভূমে। আর সেই কারণেও অনেকে তাঁকে দুর্নীতির মামলায় যুক্ত করেছেন বলে মনে করছেন বিভাস। তিনি বলেন, ‘‘২০১৫ সালে আমাদের আশ্রম উদ্বোধনের সময় আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিমন্ত্রণ করেছিলাম। উনি না এলেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছিলেন। পার্থ এখানে এসেছিল বলে এখন সবাই ভাবছে আমার সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক আছে। আমাদের মধ্যে লেনদেন আছে বলেও অনেকে ধারণা করেছেন।’’

বিভাস জানিয়েছেন, ২০১৮ সাল থেকে মুকুল রায়ের সঙ্গেও তাঁর ‘সুসম্পর্ক’ ছিল। তবে বর্তমানে মুকুলের সঙ্গে সেই যোগাযোগ আর বজায় নেই।

বিভাস জানিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত, আশ্রম এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি তিনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে পাঠিয়েছেন। আগামী দিনে ইডি, সিবিআই তাঁকে তলব করলে তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বিভাস। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি কিছু করিনি। সত্য বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তা হলে আমার কিছু হবে না। কিন্তু আমি পাপী হলে শাস্তি পাব।’’

যদিও কুন্তলের মুখে বিভাসের নাম উঠে আসার পর প্রায় চার মাস ধরে সিল করা বিভাসের কার্তিক বোস স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে মঙ্গলবার ইডি হানা দিয়েছে। ইডি আগে জানিয়েছিল, বিভাস অধিকারী ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি ছিলেন। ওই অ্যাসোসিয়েশনেরই অফিস এই ফ্ল্যাট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE