এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আগে জানিয়েছিল, বিভাস অধিকারী ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি। — নিজস্ব চিত্র।
প্রায় চার মাস ধরে সিল করা ছিল কার্তিক বোস স্ট্রিটের এই ফ্ল্যাটটি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আগে জানিয়েছিল, বিভাস অধিকারী ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি ছিলেন। ওই অ্যাসোসিয়েশনেরই অফিস এই ফ্ল্যাট। মঙ্গলবার স্থানীয়েরা দাবি করেন, বন্ধ ওই ফ্ল্যাটেই কয়েক জনকে ঢুকতে দেখেছেন তাঁরা। বাড়ির সামনে ইডি আধিকারিকদের গাড়িও রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, তাঁরাই ঢুকেছেন ওই ফ্ল্যাটে। শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ অভিযোগ করেন, দুর্নীতিতে বিভাসও জড়িত। তার পরেই কি বিভাসের এই অফিসে হানা ইডির! উঠছে প্রশ্ন। যদিও ইডির তরফে এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’তে অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির পর গত ১৫ অক্টোবর কার্তিক বোস স্ট্রিটের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় ইডি। তার পর ফ্ল্যাটটি সিল করে দেয়। তখন থেকে বন্ধ ছিল ফ্ল্যাটটি। ইডি সূত্রে তখন জানা গিয়েছিল, যে ওই ফ্ল্যাটের মালিক বিভাস। এক প্রতিবেশী দাবি করেছিলেন, রাতের দিকে বড় বড় ব্যাগ নিয়ে আসতেন তিনি। তাঁর সঙ্গে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীরাও থাকতেন। ওই ফ্ল্যাটে আরও কিছু মানুষের আনাগোনা ছিল। প্রাথমিক ভাবে ইডির ধারণা হয়, মানিকের সঙ্গে যোগ ছিল বিভাসের।
ইডির একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, বিভাস একটি বিএড কলেজ চালাতেন। সেখানে মোটা টাকার বিনিময়ে পড়ুয়ারা ভর্তি হতেন। চাকরিপ্রার্থীদের নিশ্চিত চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হত। কার্তিক বোস লেনের ফ্ল্যাটটির বাইরে একটি বোর্ডও লাগানো ছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’। ইডির দাবি, এই প্রতিষ্ঠানটি চালাতেন বিভাস। সংস্থাটির রেজিস্টার্ড নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বোর্ডে। রেজিস্টার্ড অফিসের ঠিকানা এপিসি রোড, আইডিয়াল হাইট ব্লক। সেখানেও হানা দিয়েছিল ইডি।
কুন্তল দাবি করেছিলেন, বিভাস নাকি তাপস মণ্ডলের মতোই এক জন। তাঁকে অবিলম্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে দাবি তোলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম উঠে আসা গোপাল দলপতিও। যদিও বিভাসের দাবি, কোনও দুর্নীতিতেই তিনি যুক্ত নন। কুন্তল ও গোপাল নামে ‘দুই চোর-ডাকাত’ তাঁর নাম টেনে এনে তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
বিভাস যা-ই দাবি করুন না কেন, তাঁর সম্পত্তি ও বৈভব নিয়ে নলহাটিতে চর্চা কম নয়। কয়েক মাস আগেও ছিলেন তৃণমূলের নলহাটি-২ ব্লকের সভাপতি। সেই পদ তিনি ছেড়েছেন। ওই ব্লকেরই কৃষ্ণপুর গ্রামে কয়েক একর জমির উপরে অনুকূল ঠাকুরের নামে বিশাল আশ্রম তৈরি করেছেন বিভাস। একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে আশ্রম চত্বরে। তার পাশেই রয়েছে বিএড কলেজ। একটু দূরে ডিএলএড কলেজ। সবই তাঁর। বিভাসের দাবি, ‘‘আমি পরিবারের জন্য কিছু করিনি। সবই আশ্রমের জন্য। ৩২ লক্ষ ভক্ত রয়েছেন। তাঁদের ভিক্ষায় অল্প অল্প করে আশ্রম।’’
বিভাস একটা সময় জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ছিলেন। দলের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিভাসের এত প্রতিপত্তি যে, তিনি কর্মীদের সঙ্গে ঠিক মতো যোগাযোগ রাখতেন না। তৃণমূল করলেও বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক। বিভাস যদিও বলেন, ‘‘তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলাম বলে কুন্তল ও গোপাল নামে দুই চোর-ডাকাত আমার নাম এনে তদন্ত বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ওদের চারটে ফোটো দেখান। তার মধ্যে ওরা যদি বলতে পারে, কে বিভাস, তা হলে ওদের অভিযোগ সত্য বলে মানব। ইডি ব্যাঙ্কের নথি দেখতে চেয়েছিল, সব দেখিয়েছি। ফ্ল্যাট খুলে দেওয়ার জন্য ইডি-কে উকিল মারফত চিঠি দিয়েছি। জবাব পাইনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ইডি এবং সিবিআই যত বার ডাকবে, যাব।’’ এর পরেই মঙ্গলবার তাঁর কলকাতার ওই ‘ফ্ল্যাটে’ গেল ইডি।
বিভাসের দাবি, তিনি বর্তমানে তিনি সক্রিয় ভাবে কোনও দল করছেন না। ২০২০ সাল থেকে সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউসিং কর্পোরেশনের (কেন্দ্রীয় সরকারি) এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ক্যাবিনেটের মনোনীত এক জন ডিরেক্টর। বর্তমানে সেই পদে থেকে কাজ করছেন। সঙ্গে আশ্রমের দেখাশোনাও করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy