ছবি: সংগৃহীত।
পার্ট টাইম বা আংশিক সময়ের শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক পূর্ণ সময়ের শিক্ষক এবং অতিথি শিক্ষক— এই তিন নামে তাঁরা কলেজে পড়ান। এই তিন ধরনের পদ তুলে দিয়ে ওই সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এ বার ‘স্টেট এডেড কলেজ টিচার’ বলে চিহ্নিত করার কথা সোমবার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এ ভাবে কলেজের শিক্ষকপদ পূরণ করে কি কলেজ সার্ভিস কমিশন বা সিএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ করার পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার? কলেজ কলেজে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ পদ্ধতি চালু হওয়ার পরে ক্লাস চালাতে গিয়ে জেরবার হয়ে যাচ্ছে কলেজগুলি। এই ভাবে কি শিক্ষক-সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে?
বিষয়টি নিয়ে অনেকে আবার অত্যন্ত সাবধানি। সরকারি নির্দেশিকা বেরোনোর অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। শিক্ষক শিবিরের একাংশের মতে, এই ভাবে শিক্ষকপদে স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সম্পূর্ণ বিরোধী। এই ভাবে নিয়োগ হলে নেট, জেআরএফ, পিএইচ ডি, এমফিল করা প্রার্থীরা সুবিচার পাবেন না। কলেজে আংশিক সময়ের শিক্ষক, অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সময় সংরক্ষণের কোনও নিয়ম মানা হয় না। তাই এ ভাবে নিয়োগ হলে সেটা হবে অসাংবিধানিক। রাজ্যে অনেক অতিথি শিক্ষক একাধিক কলেজে ক্লাস নেন। তাঁরা কি দু’বার বেতন পাবেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, হয় রাজনৈতিক চাপ, নয়তো প্রাক্তন পড়ুয়ার পরিচয়ে কলেজে কলেজে বহু আংশিক সময়ের এবং অতিথি শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের ৪৫ শতাংশ নম্বরও নেই স্নাতকোত্তরে। এই পরিস্থিতিতে সব এক হয়ে গেল। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় জানান, তিনি সরকারি নির্দেশিকার অপেক্ষায় আছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় কলেজ সার্ভিস কমিশনের কার্যভার কমানো হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে তাঁর প্রশ্ন আছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, এই তিন ধরনের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কি সমান সংখ্যক ক্লাস নেবেন? ওয়েবকুটার সহ-সভাপতি প্রবোধ মিশ্র মঙ্গলবার জানান, আংশিক সময়ের শিক্ষক এবং চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের সমকাজে সমবেতনের দাবিতে তাঁদের সংগঠন আগেই মামলা করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় তাঁদের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে প্রবোধবাবুর অভিযোগ।
তিন ধরনের পদ মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই আংশিক সময়ের শিক্ষক সংগঠন কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল বা কুটাব-এর রাজ্য সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় বাস্তবে আংশিক ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের বেতন অনেকটাই কমে গেল। রাজ্য চুক্তিভিত্তিক পূর্ণ সময়ের শিক্ষক সমিতি এ দিন জানায়, তাদের সদস্যেরা পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের মতোই কাজ করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত বেতনহার দেখে তাঁরা অবাক হয়ে গিয়েছেন। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘এই সরকার অনেক আগেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাজকর্মকে হাসির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। এ বার তারা সিএসসি-র উপযোগিতাও শেষ করে দিতে চাইছে।’’ তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেতন বাড়েনি। বাড়লেও নামমাত্র। যাঁদের যোগ্যতা আছে, সেই সব ছেলেমেয়ের কলেজের শিক্ষকপদে যোগ দেওয়ার পথও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy