গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের দুই সাংসদের বক্তৃতার সময়ে শুক্রবার বার বার আপত্তি জানাচ্ছিলেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। শমীকের কথায় তৃণমূল তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে সটান উঠে দাঁড়িয়ে শমীকের বহিষ্কার দাবি করে বসেছেন!
নিট, নেট-সহ সর্বভারতীয় বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ‘স্বচ্ছতা’ যখন প্রশ্নের মুখে, তখন শনিবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। সাগরিকার প্রশ্ন, কারা বোর্ডে রয়েছেন, সারা বছরের কাজ কী— এনটিএ-এর ওয়েবসাইটে সেই সব তথ্য নেই কেন? সেই চিঠি সাগরিকা নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন। সাগরিকার পোস্টটি ‘রিপোস্ট’ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ।
পর পর দু’দিনের এই জোড়া ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে বিজেপি-বিরোধী পরিসরে ‘সমন্বয়’। তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, এই দুই ঘটনায় বৃহত্তর রাজনৈতিক ইঙ্গিত রয়েছে। দিল্লিতে রাজনীতি করা কংগ্রেস এবং তৃণমূলের নেতারাও একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, ভবিষ্যতের জন্য এই দুই ঘটনাই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। সংসদে কংগ্রেস-তৃণমূল সমন্বয় নতুন নয়। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের পর সেই সমন্বয়ের ‘অন্য দিক’ও রয়েছে। তা হল বাংলার রাজনীতিতে দু’দলের কেমন সম্পর্ক হবে।
সর্বভারতীয় কংগ্রেসের অনেক নেতাই তৃণমূলের প্রতি ‘নরম’। শুধু তা-ই নয়, অধীর চৌধুরী কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের এত কড়া সমালোচক, তা নিয়েও দিল্লির একটা অংশের কংগ্রেস নেতার ক্ষোভ রয়েছে। দীর্ঘ দিনের কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের এক ঘনিষ্ঠ নেতার (প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢঢ়ার স্বামী রবার্টের সঙ্গেও তাঁর সখ্য রয়েছে) বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দল মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার মধ্য মেয়াদেই ভেঙে যাবে। ফলে তৃণমূলকে চটিয়ে লাভ কী? তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে তৃণমূলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সে সব ভেবেই সমন্বয়ে অন্য মাত্রা যোগ হচ্ছে। এই দুই ঘটনা তারই প্রতিফলন।’’ লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের মুখ্যসচেতক তথা শ্রীরামপুরের চার বারের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে সংসদে সমন্বয়ের কৌশল ঠিক হয়। সেই অনুযায়ী সব বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছে।’’ রাজ্য তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, ‘‘খড়্গে বা জয়রাম সাধারণ রাজ্যসভার সাধারণ সাংসদ নন। এক জন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং অন্য জন দলের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ফলে তাঁরা কী বললেন বা করলেন, তার মধ্যে ‘পার্টি লাইন’ প্রতিফলিত হয়।’’
অধীরের পরে বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে অন্য কেউ আসবেন নাকি অধীরকেই পুরনো দায়িত্বে ফেরানো হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই দলের বৈঠকে অধীরকে ‘প্রাক্তন সভাপতি’ বলে সম্বোধন করেছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে বাংলার পর্যবেক্ষক জিএ মির। যা শুনে সেই বৈঠকে অধীর নীরব থাকলেও পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমি সে দিনই জানলাম যে, আমি প্রাক্তন হয়ে গিয়েছি।’’ প্রদেশ সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যেও কৌতূহল রয়েছে। খড়্গে এবং জয়রামের ঘটনার পর তৃণমূল-বিরোধিতায় সরব এক প্রদেশ কংগ্রেস নেতা বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি ভাল বুঝছি না। আমরা দলটা করতে পারব কি না, এই সব ঘটনার পর তা নিয়ে নিজের মধ্যেই সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কয়েক দিন আগেই ময়নাগুড়িতে এক কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোনও হেলদোল নেই। ওঁরা ভাবছেন সরকার গড়ার সুযোগ এলে তৃণমূলকে পাশে পাবেন। কিন্তু বিজেপি-বিরোধিতায় মমতার বিশ্বাসযোগ্যতা কেমন, তা ভাবছেন না।’’ পাল্টা প্রদেশ কংগ্রেসের অন্য অংশের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতিতে সব দলের অবস্থান সব সময় এক থাকে না। মমতা কবে এনডিএ-র শরিক ছিলেন, তা দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে মাপা ঠিক নয়। সিপিএমের হাতে তো আমাদের কত লোক খুন হয়েছেন। তা হলে আমরা কেন ওদের সঙ্গে জোট করতে গেলাম?’’
ইতিমধ্যে দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে চা-চক্রে মিলিত হয়ে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, অধীর নামক প্রাচীর সরে গেলে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে কথাবার্তা এগোতে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। যা সর্বভারতীয় কংগ্রেসের উদ্দেশে অভিষেকের ‘রাজনৈতিক বার্তা’ হিসাবেই মনে করে হচ্ছে। অনেকের মতে, অভিষেকের সেই বার্তার পরে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ স্তর থেকেও হাত বাড়ানোর বার্তা দেওয়াও যে শুরু হয়ে গিয়েছে, খড়্গে-জয়রামের ঘটনায় তা স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy