গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্নের সামনে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) আন্দোলনকারীদের মিছিলে অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে মিছিলকারীদের বেশ কিছু শর্ত মানার কথা বলেছে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবারই রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটিকে শর্তসাপেক্ষে ওই কর্মসূচি করার অনুমতি দিয়েছিল বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার একক বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার একক বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল ডিভিশন বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, “মিষ্টি দই, লুচি, আলু পোস্ত বাংলার সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। একই ভাবে জনসভা, মিছিলও এই সংস্কৃতির অঙ্গ।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এখানকার সবাই জন্মগত যোদ্ধা।” মিছিলে শর্ত দিয়ে আদালত জানায়, এক সারিবিশিষ্ট মিছিল করতে হবে। মিছিলের শেষে কেবল মাত্র এক জন বক্তব্য রাখতে পারবেন। বেলা ১টায় হাওড়া রেল মিউজিয়াম থেকে শুরু হবে মিছিল। শেষ হবে নবান্ন বাসস্ট্যান্ডে। একই সঙ্গে মিছিলের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে উচ্চ আদালত জানায়, শান্তিপূর্ন মিছিল করতে হবে। মিছিল যেন কোথাও দাঁড়িয়ে না যায়।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে নবান্ন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মিছিলে আপত্তি জানায় রাজ্য। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) তাঁর সওয়ালে জানান, ওই জায়গায় কোনও কর্মসূচি হয় না। শাসক বা বিরোধী কাউকে কোনও দিন অনুমতি দেওয়া হয় না। গত বারের তুলনায় কর্মসূচিতে লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও আদালতে জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি এজির উদ্দেশে বলেন, “একটি লাইন ধরে মিছিল যাবে। সেখানে সরকারি কর্মচারীরা অংশ নেবেন। সরকার তো তাদের সবার পরিচয় জানবে। তাই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সে দিকে ওই সংগঠনকে নজর রাখতে হবে। ২ ঘণ্টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করতে হবে।”
শুনানির সময়ে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান পুলিশ বিরক্ত না করলে মিছিল শান্তিপূর্ণ হবে নিশ্চিত করছি। প্রধান বিচারপতি বলেন, “পুলিশ বিরক্ত করবে না। কারণ তারাও ডিএ পায়নি।” এজি সওয়াল করে জানান, হাওড়া ময়দানে কর্মসূচি শেষ করা হোক। প্রধান বিচারপতি বলেন, “অন্য কোথাও করলে হয়তো আন্দোলনকারীদের কথা শোনা যাবে না।” এজি জানান, নবান্নের সামনে জমায়েত হবে না এটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিকাশ তাঁর সওয়ালে প্রশ্ন তোলেন, রাজভবনের সামনে শাসকদল কর্মসূচি করার অনুমতি পেলে নবান্ন বাসস্ট্যান্ডে নয় কেন? রেড রোডে অনুমতি ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রী কর্মসূচি করেছেন। তখন রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনাদের হাতে সব ক্ষমতা রয়েছে। আমার মনে পড়ছে এর আগে পেন ডাউন কর্মসূচি নিয়েছিলেন কর্মীদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, অর্ধেক বা পুরো দিনের বেতন কাটা যাবে।”
ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে নবান্নের সামনে কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে হাই কোর্টে গিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন। বুধবার হাই কোর্টে তার শুনানি ছিল। বিচারপতি মান্থা নির্দেশ দেন, হাওড়া রেল মিউজ়িয়াম থেকে নবান্ন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বৃহস্পতিবার মিছিল করতে পারবে কো-অর্ডিনেশন কমিটি। দুপুর ১টা থেকে কর্মসূচি শুরু করা যাবে। মিছিলে সর্বাধিক ১৫০০ জন থাকতে পারবেন। পুলিশ ওই মিছিলের উপর প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করতে পারবে।
ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে জরুরি ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। সেখানে তাদের বক্তব্য ছিল, পুলিশ এই মিছিলের জন্য বিকল্প রুটের কথা বলেছিল। কিন্তু ওই কমিটি তা মানতে চায়নি। আগের কর্মসূচির চেয়ে লোকসংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, পুলিশ এই কর্মসূচির উপর প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করতে পারবে জেনেও কেন রাজ্য আপত্তি করছে? রাজ্যের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, নবান্নের সামনে যে এলাকায় সরকারি কর্মচারীদের মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা স্পর্শকাতর। সাধারণত কোনও মিছিল সেখানে করা যায় না। সিঙ্গল বেঞ্চ এক লাইনে মিছিলের অনুমতি দিলেও সমস্যা হবে। পুলিশ শর্ত আরোপ করতে পারবে ঠিকই, তবে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ কার্যকর হলে স্পর্শকাতর এলাকায় মিছিল হবে। তার বিরোধিতা করছে রাজ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy