অমিত শাহ (বাঁ দিকে) এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে পাল্টা আক্রমণের রাস্তাতেই হেঁটেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ জানালেও শাহের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শাহের অভিযোগ, বাংলায় অনুপ্রবেশ চলছে। এ বার এই নিয়ে শাহকেই পাল্টা আক্রমণ শানাল তৃণমূল। সীমান্ত পাহারায় নিযুক্ত, শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন বিএসএফ ব্যর্থ বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্টো কথা বলছেন বলে আক্রমণ শানিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।
বৃহস্পতিবার শাহ দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে শীঘ্রই ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। অসমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান যে, এ রাজ্যেও বিজেপি অনুপ্রবেশ বন্ধ করবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “যদি আপনি (মমতা) জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে এই ধরনের রাজনীতি করেন, তোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে অনুপ্রবেশ চলতে দেন, তা হলে মানুষ আপনার সঙ্গে থাকবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন না, কাকে শরণার্থী বলে আর কাকে অনুপ্রবেশকারী বলে।” একই সঙ্গে শাহ জানান, সিএএ-তে নাগরিকত্ব যাওয়ার কোনও সংস্থান নেই। সিএএ নিয়ে মমতার উদ্দেশে শাহি বার্তা, “হাতজোড় করে বলছি, রাজনীতি করবেন না।”
এই বিষয়ে শাহকে পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “সীমান্ত পাহারা দেয় বিএসএফ। বিএসএফ অমিত শাহের অধীন। অনুপ্রবেশের দায় অমিত শাহের। তাঁর বিএসএফ ব্যর্থ বলেই এখন উল্টো কথা বলছেন। হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদের রাজনীতি করছেন। উনি পরোক্ষে মেনে নিলেন বিএসএফ ব্যর্থ।” ‘মানুষ মমতার সঙ্গে থাকবে না’— শাহের এই কটাক্ষের জবাব দিয়ে কুণাল বলেন, “২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের সময়েও অমিত শাহ অনেক কথা বলেছিলেন। বাংলায় ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন। মানুষ কার পাশে আছেন, উনি ভালই জানেন।”
শাহকে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষও। তাঁর অভিযোগ, ভোটের আগে বিভাজনের রাজনীতি করতে এবং নির্বাচনে ফয়দা তুলতেই চার বছর তিন মাস পরে সিএএ কার্যকর করেছে কেন্দ্র। অসমে এনআরসি-র কারণে নাগরিকত্ব হারানো মানুষদের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করেছেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
সিএএ-তে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। কিন্তু সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধী দলগুলি। এই প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, “ধর্মীয় উৎপীড়ন হলে তা সর্বত্র নিন্দনীয়। কোথাও হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, কোথাও অন্য ধর্মের উপর অত্যাচার হচ্ছে। মায়ানমারে তো একাংশের মুসলিম সাংঘাতিক ভাবে নিপীড়নের শিকার। এটাকে মানবিকতা এবং বিশ্ব আঙ্গিকে দেখতে হবে।”
অন্য দিকে, সিএএ-র বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আক্রমণ চালানো অব্যাহত রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে তিনি সিএএ-র বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেছিলেন, “এটা বাংলাকে আবার ভাগ করার খেলা। মুসলিম, নমঃশূদ্র, বাঙালিদের তাড়ানোর খেলা এটা। আমরা এটা করতে দিচ্ছি না। দেব না। আমরা সবাই নাগরিক। সিএএ করলে যাঁরা নাগরিক, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবে।’’ বুধবার শিলিগুড়িতেও মমতার আক্রমণের সেই সুর বজায় থেকেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy