Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC-BJP Conflict

‘ত্রাণবৈষম্য’ নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী, পাল্টা বিজেপির

কেন্দ্রীয় সরকার সিকিমের ত্রাণ এবং উদ্ধার কাজে ইতিমধ্যেই ৪৪.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে এ রাজ্যের জন্য এখনও কোনও ত্রাণ তহবিল অনুমোদন করা হয়নি।

An image of TMC and BJP Flags

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩১
Share: Save:

লোনাক হ্রদের জলোচ্ছাসের জেরে হড়পা বান সিকিমকে ভাসিয়ে আঁচ ফেলেছে এ রাজ্যের কালিম্পং এবং দার্জিলিং জেলার একাংশেও। কেন্দ্রীয় সরকার সিকিমের ত্রাণ এবং উদ্ধার কাজে ইতিমধ্যেই ৪৪.৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তবে এ রাজ্যের জন্য এখনও কোনও ত্রাণ তহবিল অনুমোদন করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশ্ন তুলেছেন সমাজ মাধ্যমে।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আমাদের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য কেন্দ্রের আলাদা মনোভাব দেখে আমি হতবাক। গভীর বিপর্যয় এখানেও ঘটেছে। মানুষ মারাও গিয়েছে। আমরা ভিক্ষা চাইছি না। এবং আমরা সিকিমের জন্যও চাইছি। কিন্তু আমরা চাই, বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সাহায্য পেতে যাতে কোনও রকম আলাদা দৃষ্টিভঙ্গী না দেখানো হয়।’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, যে বিপর্যয়ের আঘাত ‘সিকিমের ভাইবোনেদের’ উপরে এসেছে, সেই প্রভাব পড়েছে দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ের একাংশ মানুষের উপরেও। তাতে এ রাজ্যের স্পর্শকাতর অঞ্চল, ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিপর্যয়ের রাত থেকে রাজ্য প্রশাসন সর্বক্ষণের জন্য চেষ্টা করছে পরিস্থিতি সামলাতে। পাহাড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জিটিএ-র জন্য ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। তিনি জানান, প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিরা পাহাড়ে গিয়েছেন। সেনা এবং সিকিম সরকারকে এ রাজ্যের তরফে সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে এবং হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই কথার জবাবে, ২০২১ সালে এ রাজ্যে বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সাহায্যের প্রসঙ্গ টেনেছেন দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা, দলের এ রাজ্যের সহপর্যবেক্ষক অমিত মালব্যও। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ভুলে গিয়েছেন, যে জেলাগুলোর কথা বলছেন, তিনি সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিপর্যয়ের পর রাজ্যের কোনও মন্ত্রী বা পদস্থ আধিকারিক এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ অমিতের। তাঁদের কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতি ঢাকতে ব্যস্ত, বিপর্যস্ত এলাকায় যাওয়ার তাঁর সময় নেই। ত্রাণ শিবিরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। কেবল ত্রাণ তহবিল পেলেন কি না, সেটাই তাঁর লক্ষ্য। বিস্তা ও অমিত দু’জনেরই অভিযোগ, ২০২১ সালে যখন এখানে ধস, বন্যা হয়েছিল, তখন রাজ্য সেটা মানতে চায়নি। কেন্দ্র ৪৭৫.০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। সেই টাকার হদিস নেই। সাংসদের দাবি, তিনি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন। রাজ্য এখনও কেন্দ্রকে কিছু জানায়নি। জানালে কেন্দ্র প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য দেবে।

যদিও শুক্রবারই রাজ্যের দুই মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান নেতাকে উপদ্রুত এলাকায় যেতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো এ দিন তিস্তাবাজার হয়ে দার্জিলিঙে যান অরূপ বিশ্বাস, উদয়ন গুহ এবং শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। দু’দিন আগে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ঘুরে গিয়েছেন। অরূপ বলেন, ‘‘সাংসদের প্রশ্নের জবাব দিতে চাই না। কেন্দ্র বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে।’’ শিলিগুড়ির মেয়র বলেন, ‘‘রাজ্য বরাদ্দ করেছে। জেলা প্রশাসন, জিটিএ বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছে। সিকিমের জন্য কেন্দ্র নিশ্চয়ই বরাদ্দ দিক। কিন্তু এ রাজ্যের বিপন্ন মানুষগুলোর কথা ভাববে না?’’ আজ, রবিবার রংপোয় যাওয়ার কথা তাঁদের।

অন্য দিকে, সিকিম সরকার জানিয়েছে, এ দিন বৃষ্টি এবং খারাপ আবহাওয়ায় উত্তর সিকিমের লাচুং এবং লাচেনে আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধার করা যায়নি। বায়ুসেনার হেলিকপ্টার উড়তে পারেনি। তবে পর্যটকেরা সুরক্ষিতই আছেন। সিকিমের মন্ত্রী সামডুপ লেপচা এ দিন বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সঙ্গে তখনও হেঁটে, কখনও দড়িতে ঝুলে এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড়ে গিয়ে উত্তর সিকিমে পর্যটকদের কাছে পৌঁছন। ৩ নম্বর ইন্ডিয়ান রিজ়ার্ভ ব্যাটালিয়নের একটি দল উদ্ধার কাজ শুরু করে। বিভিন্ন জায়গা থেকে নিখোঁজের সংখ্যার হিসেব কিছুটা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয়কুমার মিশ্র সিকিমের মুখ্যসচিব, রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের প্রধান, সেনাবাহিনী, ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ ফোর্স, বর্ডার রোডস অর্গানাইজ়েশন, এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গ্যাংটকে বৈঠক করেছেন। আজ, রবিবার থেকে একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করবে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর। সিকিমকে ছন্দে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি বার্তা দেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy