বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
পাঁচ মাসের মধ্যে বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পড়ে যাবে, বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া গোষ্ঠীর নেতা শান্তনু ঠাকুরের এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু সেই মন্তব্যের সঙ্গে এক মত হলেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর গলায় বরং কিছুটা উল্টো সুর শোনা গেল সোমবার। তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, মানুষের জনমতে তৈরি হওয়া কোনও সরকার ভেঙে দেওয়াকে আসলে তিনি গণতন্ত্রবিরোধী বলেই মনে করেন। দিলীপের এই মন্তব্যের ফলে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল।
সোমবার সকালে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দিলীপ। বাংলার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এ রাজ্যে সংবিধানের ৩৫৫ কিংবা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করা হবে কি না, তা নিয়ে যে চর্চা চলছে, দিলীপকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তবে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি শান্তনুদের পথে হাঁটেননি। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বাংলায় ৩৫৫ কিংবা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করার কথা ভাবছে কি না, আমার ঠিক জানা নেই। পশ্চিমবঙ্গে আগে কখনও তা হয়েছে কি না, জানি না। সম্ভবত, বিজেপিও কোনও রাজ্যে এটা করেনি।’’
শান্তনু বা সুকান্তের এই ‘সরকার পড়ে যাওয়া’ মন্তব্যকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে রবিবারই শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘এঁরা তো ক্যালেন্ডার মেনে চলেন। এর আগেও অনেক তারিখ দিয়েছেন। সেই সব তারিখ মেলেনি। সংবাদমাধ্যমকে এঁরা দিনভর বিস্ফোরক খবর সরবরাহ করে বেড়ান।’’ সোমবার দিলীপের মন্তব্য শুনে কুণাল বলেন, ‘‘বিজেপি ক্যালেন্ডার রাজনীতি করে। দিলীপ যা বলেছেন, তা ঠিকই। জনগণের সরকার ভেঙে দেওয়া তো অবশ্যই গণতন্ত্রবিরোধী। এটা করলে বিজেপিরই ক্ষতি হবে।’’
রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ যোগ করেন, ‘‘এখন পশ্চিমবঙ্গে যা পরিস্থিতি, তাতে আমরা বলছি ৩৫৫ দরকার। কিন্তু যাঁরা আজ মার খাচ্ছেন, আমি সেই রাজ্যবাসীকে প্রশ্ন করতে চাই, এই সরকারকে ভোট দিয়ে কে জিতিয়েছে?’’
পঞ্চায়েত ভোটের আবহে রাজ্যের নানা প্রান্তে সন্ত্রাসের যে ছবি উঠে এসেছে, তার প্রেক্ষিতেই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি তুলেছে বিজেপি। রবিবার শান্তনুর বক্তব্যকে সমর্থন করেছিলেন সুকান্তও। সোমবার দিলীপ যেন সরাসরিই তাঁদের বিরোধিতা করলেন। তাঁর সটান প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্রকে হত্যা করার অনুমতি কে দিয়েছে? মানুষের জনমতে সরকার তৈরি হয়েছে। তাকে ভেঙে দেওয়াটাও গণতন্ত্রবিরোধী।’’ তবে সেই সঙ্গে দিলীপের সংযোজন, ‘‘কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়। দেখা যাক ভবিষ্যৎ কী বলে।’’
দিলীপের মন্তব্য প্রসঙ্গে সুকান্ত জানান, দিলীপ যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
শনিবার শান্তনু কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন, ‘‘আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, পাঁচ মাসের মধ্যে এই রাজ্যের সরকার পড়ে যাবে।’’ তাই নিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছিলেন সুকান্ত। রবিবার সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে বিজেপির দফতরে দলের সাংগঠনিক বৈঠক থেকে তিনি শান্তনুর কথায় সায় দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সরকার পাঁচ মাস ছ’মাস যখন খুশি পড়ে যেতে পারে। অসুবিধার তো কিছু নেই। সরকার কী ভাবে চলে? বিধায়কদের সমর্থনে। বিধায়কেরা হঠাৎ মনে করল, আমরা সমর্থন করব না। আমরা অন্য কাউকে সমর্থন করব। বিধায়কদের তো মনে হতেই পারে। না হওয়ার তো কিছু নেই।’’
আর কী কী কারণে সরকার পড়ে যেতে পারে? ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন সুকান্ত। তাঁর সংযোজন ছিল, ‘‘ধরুন, এমন গণ আন্দোলন শুরু হল, যে বিধায়কেরা বলল, ‘আমরা আজ থেকে আর বিধায়ক পদে থাকব না।’ হাত জোড় করে সবাই বিধায়ক পদ ছেড়ে দিল। তেমন গণআন্দোলন হতে পারে।’’ কিন্তু বাংলায় তেমন সম্ভাবনা আছে কি? জবাবে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘সব সম্ভাবনাই আছে। রাজনীতিতে কোনও সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।’’
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের আমলে দেশের কোনও বিজেপিশাসিত রাজ্যে ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করার কথা শোনা যায়নি বটে। কিন্তু অতীতে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকার, মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সরকার কিংবা কর্নাটকে জেডিএস-কংগ্রেস জোট সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন হারিয়ে পড়ে গিয়েছিল। প্রতি ক্ষেত্রে বিজেপির কারসাজি ছিল বলেই অভিযোগ। বিধায়কেরাও সরকার পক্ষ থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। শান্তনুর ‘পাঁচ মাসে সরকার পড়ে যাওয়া’ মন্তব্যে বাংলাতেও তেমন কিছু হতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। তার মাঝেই অন্য সুর দিলীপের গলায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy